ফুলেল শ্রদ্ধায় শিব নারায়ণ দাশকে শেষ বিদায়
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:২৯ এএম, ২১ এপ্রিল,রবিবার,২০২৪ | আপডেট: ১২:০৭ এএম, ১৭ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
বাংলাদেশের প্রথম পতাকার অন্যতম নকশাকার ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাশকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শেষ বিদায় জানিয়েছেন সর্বস্তরের মানুষ।
শনিবার সকাল ১১টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে শিব নারায়ণ দাশের কফিন নিয়ে আসা হয়। সেখানে প্রথমে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা হিসেবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।
এরপর সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে সকাল পৌনে ১২টা পর্যন্ত বিভিন্ন সংগঠন, প্রতিষ্ঠান ও সংস্কৃতি অঙ্গনের ব্যক্তিরা তাকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
শুক্রবার সকাল ৯টায় ৭৫ বছর ৪ মাস বয়সী শিব নারায়ণ দাশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের আইসিইউতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, শিব নারায়ণ দাশের চক্ষু সন্ধানীতে দান করা হয়েছে এবং তার দেহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে দান করা হবে।
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে শিব নারায়ণ দাশের মরদেহ তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সর্বস্তরের জনগণের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তার মরদেহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে হস্তান্তর করা হবে।
শহীদ মিনারে শিব নারায়ণ দাশের কফিনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, সুজিত রায় নন্দী, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খানসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। তাদের সঙ্গে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খানও শ্রদ্ধা জানান।
এছাড়া শ্রদ্ধা জানিয়েছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় শ্রমিক লীগ, জাতীয় নারী জোট, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশ গণ আজাদী লীগ, এফবিসিসিআই, পুলিশ থিয়েটার, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, দুস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র, গণজাগরণ মঞ্চ, সহযাত্রী, মনিপুরপাড়া তরুণ সংঘ, বাংলাদেশ ওয়ার্কাস পার্টি, বাংলাদেশ গ্রুপ ফেডারেশন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ইত্যাদি সংগঠনের সদস্যরা।
শ্রদ্ধা নিবেদনে শেষে ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, শিব নারায়ণ দাশের মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। কুমিল্লাতে তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। তিনি সকল আন্দোলন সংগ্রামে অংশ নিয়েছেন। আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের মধ্যে ৬০ দশকে যারা আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছেন তাদের মধ্যে শিব নারায়ণ দাশ একজন। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নকশায় অবদান রেখেছেন। তার এই অবদান ইতিহাসে অম্লান হয়ে থাকবে। সর্বোপরি তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের মাধ্যমে ভূমিকা রেখেছেন।
জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার বলেন, জাতীয় পতাকার প্রথম নকশাকার হিসেবে তাকে আমরা মনে রাখবো। দেশের জনগণের জন তিনি তার দেহ দান করেছেন। শিব নারায়ণ দাশ দেশ ও দেশের মানুষের জন্য তার সমস্ত কিছু দিয়ে গেছেন। যারা জাতীয় পতাকার রূপকার তাদেরকে এখন পর্যন্ত রাষ্ট্র সঠিক সম্মান জানাতে পারেননি। তাদেরই একজন ছিলেন শিব নারায়ণ দাশ।
শহীদ মিনারে শিব নারায়ণ দাশকে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ ও উপ-উপাচার্য ( শিক্ষা) অধ্যাপক সীতেশ চন্দ্র বাছার।
শিব নারায়ণ দাশের ছেলে অর্ণব আদিত্য দাশ বলেন, আমার বাবা এমন একজন মানুষ ছিলেন, যিনি কখনো অন্যায়, দুর্নীতি ও মিথ্যাচারের সাথে আপোষ করেননি। বাংলাদেশের অস্তিত্ব, মুক্তিযুদ্ধে চেতনা ও অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিয়ে তিনি কখনো আপোষ করেননি। আমার বাবা আদর্শকে অনুসরণ করে আপনারা এই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন, এটা আমার প্রত্যাশা।
তিনি আরও বলেন, আমার বাবা সব সময় একটি কথাই বলে গিয়েছেন, এই দেশের নিপীড়িত ও নির্যাতিত যে সকল মানুষ রয়েছে, তাদের জন্য কথা বলতে হবে।