আমি লজ্জিত-দুঃখিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী: পলক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৪৯ পিএম, ২০ এপ্রিল,শনিবার,২০২৪ | আপডেট: ০১:১০ পিএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক তার নির্বাচনি এলাকা নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে অপহরণ ও নির্যাতনের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়েছেন। অপহরণ ঘটনার সঙ্গে তার শ্যালক জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পলক বলেন, ‘এ ঘটনায় আমি লজ্জিত, দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী। এ ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত, তাদের সুষ্ঠু বিচার করা হবে। কেউ ছাড় পাবে না।’
আহত দেলোয়ার হোসেন বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শুক্রবার সকালে প্রতিমন্ত্রী ঢাকা থেকে সেখানে তাকে দেখতে আসেন।
সোমবার পাঁচ ঘণ্টার ব্যবধানে নাটোর জেলা প্রশাসক ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে থেকে দেলোয়ার হোসেন ও তার চাচাতো ভাই কলম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন মুন্সি ও যুগ্ম সম্পাদক তার আপন ভাই এমদাদুল হককে প্রকাশ্যে একটি কালো হায়েস গাড়িতে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে মারধর করে দুর্বৃত্তরা। পরে দুর্বৃত্তরা দেলোয়ার হোসেনকে মুমূর্ষু অবস্থায় তার সিংড়া উপজেলার কলম ইউনিয়নের পারসাঐল গ্রামের বাড়ির সামনে ফেলে রেখে যায়।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, সিংড়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী অধ্যক্ষ লুৎফুল হাবীব রুবেল ও তার সহযোগীরা ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত। লুৎফুল হাবীব রুবেল সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও প্রতিমন্ত্রী পলকের শ্যালক।
শুক্রবার সকালে পলক রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি দেলোয়ার হোসেনকে দেখতে আসেন। এ সময় তার সঙ্গে সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অহিদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক সিংড়া পৌরসভার মেয়র জান্নাতুল ফেরদৌসসহ কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন। পলক প্রায় আধা ঘণ্টা সেখানে অবস্থান করেন। তিনি অসুস্থ দেলোয়ার হোসেন ও তার দুই ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেন। এছাড়া তিনি দায়িত্বরত চিকিৎসকের কাছে দেলোয়ার হোসেনের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন এবং সর্বোত্তম চিকিৎসা দেওয়ার আহ্বান জানান।
পরে পলক সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি বিদেশে ছিলাম। বৃহস্পতিবার রাত ১টায় দেশে ফিরেছি। তবে বিদেশে থেকেও সব সময় এ ঘটনার খোঁজখবর নিয়েছি। আমি ভাবতেও পারিনি নাটোরের মাটিতে এ ধরনের একটি ঘটনা ঘটবে। এ ঘটনায় আমি লজ্জিত, দুঃখিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী। প্রধানমন্ত্রী এ ঘটনার খোঁজখবর রাখছেন। এ ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের সুষ্ঠু বিচার হবে। কেউ ছাড় পাবে না।’
এক প্রশ্নের জবাবে পলক বলেন, ‘লুৎফুল হাবীব আমার শ্যালক তা অস্বীকার করব না। তবে শ্যালক, সমন্ধি বা আত্মীয়তার সুবাদে বা রাজনৈতিক কারণে সে বা অন্য কেউ বাড়তি কোনো সুবিধা পাবেন না। বরং এমন ব্যবস্থা নেওয়া হবে, যা এমপি-মন্ত্রীর স্বজনদের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ব্যাপারে আমরা দলের পক্ষ থেকেও খুব অল্প সময়ের মধ্যে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ওই ঘটনায় দেলোয়ার হোসেনের ভাই মজিবুর রহমান অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে নাটোর থানায় মামলা করেছেন। পুলিশ সিসিটিভির ফুটেজ দেখে দুজনকে গ্রেফতার করেছে। অন্যদেরও শনাক্ত করেছে। গ্রেফতার দুজনের মধ্যে যুবলীগ নেতা সুমন আহম্মেদ আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।
ওই জবানবন্দিতে তিনি জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ নেতা ও নির্বাচনের প্রার্থী লুৎফুল হাবীবের পক্ষ হয়েই তারা অপহরণ ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটিয়েছেন। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী লুৎফুল হাবীবকে এ অপহরণ ও নির্যাতনের ঘটনায় শোকজ করেছে। আগামী সোমবার বিকালে সশরীরে হাজির হয়ে এ ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে হবে। অপরদিকে আহত দেলোয়ার হোসেনের ছেলে মোনায়েম হোসেন আকাশ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী লুৎফুল হাবীবের প্রার্থিতা বাতিলের জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছেন।