দুর্নীতির টাকায় রিসোর্ট-ফ্ল্যাট ত্রাণ কর্মকর্তার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:৫৩ এএম, ৩ এপ্রিল,
বুধবার,২০২৪ | আপডেট: ০৫:৪২ এএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ৩ নম্বর সেক্টরের ১০২ নম্বর রোডের ৬০ নম্বর প্লটে পূর্বাচল ড্রিম সুইম অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট নামে একটি সেমি রিসোর্ট গড়ে তোলা হয়েছে। সাজানো-গোছানো এই রিসোর্টে মেলে বাহারি খাবার, সাঁতার কাটার জন্য বিশাল সুইমিংপুল ও বিশ্রামের জন্য আরামদায়ক শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কক্ষ। রাজধানী থেকে প্রতিদিন বহু মানুষ রিসোর্টটিতে ঘুরতে যান। এই রিসোর্টের মালিক মুন্সীগঞ্জ জেলার (বর্তমানে গাজীপুর) ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আওলাদ হোসেনসহ আরও কয়েকজন। তিনি ঘুষ-দুর্নীতির টাকায় এসব সম্পদের মালিকানা অর্জন করেছেন এমন একটি অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
দুদকের তথ্য বলছে, মুন্সীগঞ্জ জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা আওলাদ হোসেনের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম-দুর্নীতি ও বিভিন্ন প্রকল্পের ঠিকাদারদের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছেন এমন একটি অভিযোগ দুদকে জমা পড়ে। কমিশন অভিযোগটি আমলে নিয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়।
এরপরই অভিযোগ অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দুদকের নারায়ণগঞ্জ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক মো. তারেক একাধিক ফ্ল্যাট মিয়াকে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি অভিযোগটি অনুসন্ধান করছেন। অভিযোগসংক্রান্ত নথিপত্র চেয়ে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি দেশের বিভিন্ন ব্যাংক, বীমা, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, সিটি করপোরেশন, রাজউক, ভূমি অফিস, রেজিস্ট্রি অফিসসহ বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দেন। চিঠিতে পূর্বাচল প্রকল্পের ৩ নম্বর সেক্টরের ১০২ নম্বর রোডের ৬০ নম্বর প্লটের ড্রিম সুইম অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট, উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরের ১৯০০ এবং ১৪০০ বর্গফুট আয়তনের দুটি ফ্ল্যাটের, ব্যাংকে থাকা হিসাবের তথ্য চাওয়া হয়েছে।
দুদকের টেবিলে থাকা অভিযোগে বলা হয়, জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা আওলাদ হোসেনের রাজউকের পূর্বাচল প্রকল্পের ৩ নম্বর সেক্টরের ১০২ নম্বর রোডের ৬০ নম্বর প্লটে ড্রিম সুইম অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট নামে একটি সেমি রিসোর্ট নির্মাণ করছেন। রাজউকের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, যেখানে রেস্টুরেন্ট গড়ে তোলা হয়েছে, সেখানকার প্রতি কাঠার জমির দাম এক কোটি টাকার বেশি। সেই হিসেবে প্লটটির দাম কয়েক কোটি টাকা। একই সঙ্গে প্লটটিতে একটি তিনতলা ভবন ও সুইমিংপুল নির্মাণসহ অবকাঠামো নির্মাণে কয়েক কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।
রাজউকের তথ্য বলছে, পূর্বাচল প্রকল্পের ৩ নম্বর সেক্টরের ১০২ নম্বর রোডের পাঁচ কাঠা আয়তনের ৬০ নম্বর প্লটটির মালিক নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানার বাসিন্দা জামান ওরফে জামাল। তিনি আমমোক্তারনামার মাধ্যমে ২০০৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর প্লটটি রাজধানীর খিলক্ষেতের বটতলার বাসিন্দা মো. আলমাস হোসেনের নামে স্থানান্তর করেন। এরপর আলমাস হোসেন প্লটটি ২০১৭ সালের ২০ আগস্ট ত্রাণ কর্মকর্তা মো. আওলাদ হোসেনসহ কয়েকজনের কাছে বিক্রি করেন। প্লটটির দাম ৫ কোটি টাকার বেশি। অথচ তারা প্লটের দাম দেখিয়েছেন মাত্র ১২ লাখ টাকা। কম দাম দেখিয়ে প্লট রেজিস্ট্রি করে সরকারের লাখ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আওলাদ হোসেন প্লটটি কেনার পর সেখানে কয়েক কোটি টাকা খরচ করে ইমারত, হোটেল, সুইমিংপুলসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণসহ পূর্বাচল ড্রিম সুইম অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট গড়ে তোলেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, আওলাদ হোসেনের উত্তরার ১২ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর রোডের ৮ নম্বর বাড়ির তিনতলায় ১৯০০ বর্গফুট আয়তনের ফ্ল্যাট রয়েছে। যার দাম প্রায় দুই কোটি টাকা। একই সেক্টরের ১ নম্বর রোডের ৭৪ নম্বর বাড়ির চারতলায় ১৪০০ বর্গফুট আয়তনের আরও একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। যার দাম প্রায় দেড় কোটি টাকা। এ ছাড়া তার নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নামে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে প্লট, ফ্ল্যাট কেনাসহ ব্যাংকে নগদ অর্থ জমা রয়েছে।
দুদকের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা আওলাদ হোসেনের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান চলছে। অভিযোগসংশ্লিষ্ট নথিপত্র চেয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তথ্য-প্রমাণ হাতে পাওয়ার পর তার ভিত্তিতে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে কমিশনে জমা দেওয়া হবে। অনুসন্ধান প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে কমিশন পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে।