ঢাকায় আসছেন শোলেট, নজর থাকবে রোহিঙ্গা ইস্যুতে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৪৬ পিএম, ২ ফেব্রুয়ারী,বৃহস্পতিবার,২০২৩ | আপডেট: ০২:৩৭ পিএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
ঢাকায় আসছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের কাউন্সেলর ডেরেক এইচ শোলেট। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি ২৪ ঘণ্টার সংক্ষিপ্ত সফরে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিনকেনের বিশেষ এ উপদেষ্টা রোহিঙ্গা ইস্যুতে গুরুত্ব দেবেন। অন্যদিকে, ঢাকার পক্ষ থেকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও বাহিনীর সাত জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দেয়া নিষেধাজ্ঞা বাতিলের অনুরোধ করা হতে পারে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কূটনৈতিক সূত্রগুলো থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ১৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় ঢাকায় আসবেন ব্লিনকেনের বিশেষ উপদেষ্টা শোলেট। শুরুর দিন কোনো কর্মসূচি থাকছে না শোলেটের। পরের দিন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সন্ধ্যায় ঢাকা ছেড়ে যাবেন তিনি। কূটনৈতিক একটি সূত্র বলছে, মূলত রোহিঙ্গা ইস্যুতে গুরুত্ব দেবেন শোলেট। তিনি রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা, প্রত্যাবাসনে কীভাবে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করা যায় এবং বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের যুক্তরাষ্ট্রে পুনর্বাসন নিয়েও আলোচনা করবেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিনকেনের বিশেষ উপদেষ্টা শোলেট। সেজন্য শোলেটের সফরটা গুরুত্বপূর্ণ। যদিও সেটি সম্প্রতি ঢাকা সফর করে যাওয়া ডোনাল্ড লুর মতো গুরুত্বপূর্ণ না। শোলেটের সফরে আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে এ কর্মকর্তা বলেন, মূলত রোহিঙ্গা ইস্যুকে গুরুত্ব দেয়া হবে এ সফরে। এর বাইরে দ্বিপাক্ষিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা উঠবে। আমরা অবশ্যই আমাদের অগ্রাধিকার বিষয়গুলো তুলব।
শোলের সফরে র্যাবের নিষেধাজ্ঞা তোলার বিষয়ে আসছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে এ কর্মকর্তার ভাষ্য, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। জানা গেছে, শোলেটের সফরের আগে ১২ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৩ থেকে ৪ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসবেন। প্রতিনিধিদল কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যাবেন। সেখানে তারা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলাপ করার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, শোলেট ঢাকা সফরের প্রথম দিন কোনো কর্মসূচি থাকছে না। সফরের দ্বিতীয় দিন ব্যস্ত সময় পার করবেন তিনি। পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন শোলেট। এছাড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
কূটনৈতিক একটি সূত্র বলছে, ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস থেকে শোলেটের সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ চাওয়া হয়েছে। তবে এখন অবধি শোলেটের সরকারপ্রধানের সাক্ষাৎ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত নয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, চলতি বছরের প্রথম মাসে ঢাকা সফর করে গেছেন দক্ষিণ ও মধ্য-এশিয়া বিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। ভালো একটা সফর ছিল সেটি। শোলেটের সফরে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বেশি গুরুত্ব পাবে। তাছাড়া তারা তাদের অন্যান্য বিষয়ও তুলতে পারে।
জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের খুব ভালো সম্পর্ক। শোলেট এলে আমরা তাকে স্বাগত জানাব।
ব্লিনকেনের বিশেষ উপদেষ্টার সফরে কোন বিষয়গুলো আলোচনায় থাকছে- এমন প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, আমরা সবগুলো বিষয় তুলি। আমাদের লোকদের উপকার হবে, এমন বিষয় নিয়ে আমরা সবসময় আলোচনা করি। গত বছরের আগস্টে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর দমন অভিযানের পাঁচ বছর পূর্তিতে দেয়া বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিনকেন মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পুনর্বাসনের ঘোষণা দেন।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘোষণা তিন মাস পর ঢাকা সফর করেন মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের জনসংখ্যা, শরণার্থী ও অভিবাসনবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলিয়েটা ভ্যালস নয়েস। তার সফরে মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের আনুষ্ঠানিকভাবে পুনর্বাসন শুরু করে দেশটি। গত বছরের ডিসেম্বরের শুরুর দিকে ৬২ রোহিঙ্গাকে পুনর্বাসন করে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্রের কার্যালয়ের গত বছরের ডিসেম্বরের তথ্য বলছে, মিয়ানমার থেকে এ দেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ১.৯ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি মানবিক সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।