আবদুস সোবহানের যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ি : নিজে কিছু করবে না নির্বাচন কমিশন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৪৫ পিএম, ১৫ জানুয়ারী,রবিবার,২০২৩ | আপডেট: ০৮:৩৮ পিএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মো. আবদুস সোবহান মিয়া (গোলাপ) তার নির্বাচনি হলফনামায় যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ি কেনার কথা উল্লেখ করেননি। এ বিষয়ে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না সে প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশন বলছে, এখন তাদের আর কিছু করার নেই। মাদারীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য আবদুস সোবহান আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ৪০ লাখ ডলার ব্যয়ে একাধিক বাড়ি কিনেছেন বলে খবর প্রকাশ করেছে অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক ‘অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট’ বা ওসিসিআরপি। গত শুক্রবার তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মো. আবদুস সোবহান মিয়া ২০১৪ সালে প্রথম নিউইয়র্কে অ্যাপার্টমেন্ট কেনা শুরু করেন। ওই বছর নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস এলাকায় একটি সুউচ্চ ভবনে অ্যাপার্টমেন্ট কেনেন তিনি। পরের পাঁচ বছরে তিনি নিউইয়র্কে একে একে মোট ৯টি প্রপার্টি বা সম্পত্তির (ফ্ল্যাট বা বাড়ি) মালিক হন। এসব সম্পত্তির মূল্য ৪০ লাখ ডলারের বেশি (ডলারের বর্তমান বিনিময় মূল্য অনুযায়ী প্রায় ৪২ কোটি টাকা)। ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে আবদুস সোবহান যে হলফনামা জমা দিয়েছেন, সেখানে যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর সম্পদের বিষয়ে কোনো তথ্য উল্লেখ নেই। এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে আজ রবিবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর। জবাবে তিনি বলেন, কেউ ভুল বা মিথ্যা তথ্য দিলে নির্বাচনের আগে সেটা কেউ চ্যালেঞ্জ করলে, কমিশন তা যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নিতে পারে। তবে কেউ নির্বাচিত হয়ে যাওয়ার পর এ বিষয়ে ইসির কিছু করার নেই। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মো. আবদুস সোবহান মিয়া (গোলাপ)। এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বা আদালত যদি তথ্য গোপনসংক্রান্ত কোনো প্রমাণ ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়ে ইসিকে জানান, তখন আইন অনুযায়ী তারা ব্যবস্থা নেবেন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে মো. আলমগীর বলেন, ইসির কাজ প্রার্থী যে হলফনামা দেবেন সেটি প্রকাশ করা। হলফনামার তথ্য যাচাই-বাছাই করার ক্ষমতা ইসিকে দেয়া হয়নি। তবে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময় কেউ চ্যালেঞ্জ করলে ইসি তা যাচাই-বাছাই করে দেখবে। যাচাই-বাছাইয়ে যদি প্রমাণিত হয়, তাহলে তার মনোনয়নপত্র বাতিল হবে। এটুকু ক্ষমতা ইসির আছে। এরপর যদি হয়, তাহলে প্রতারণা করেছেন, প্রতারণার মামলা হবে। এই ধারার শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন আদালত। আদালত ব্যবস্থা নিয়ে জানালে ইসি ব্যবস্থা নেবে।
আবদুস সোবহানকে নিয়ে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘সে যদি ট্যাক্স না দিয়ে থাকে, সম্পদ বিবরণীতে না দেখিয়ে থাকে, রাজস্ব বোর্ডও এটা (মামলা) করতে পারে। দুদক করতে পারে। সে মামলার শাস্তি অনুযায়ী পরে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা হবে। সংসদ সদস্য পদ হারানোর জন্য যে বিষয়গুলো আছে সেটা যদি হয়, তাহলে তার আগে কিছু করার নেই। অভিযোগ উঠেছে, দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়ে আবদুস সোবহান নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আলমগীর বলেন, ‘বিদেশি নাগরিক ভোট করতে পারেন না। এটা কি প্রমাণিত? নাগরিকত্ব দেখে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা এটা জানালে আমরা এটা আইন অনুযায়ী দেখব। কেউ যদি মিথ্যা তথ্য দেয় বা তথ্য গোপন করে তাহলেও কি তিনি প্রার্থী হতে পারবেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রার্থী হতে পারবেন না। কোনো ভুল তথ্য দিলে নির্বাচনের যোগ্য হবেন না। কেউ যদি চ্যালেঞ্জ না করে ও যদি নির্বাচিত হয়ে যান, পরে কিছু করতে হলে ওনার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। উদাহরণ দিয়ে মো. আলমগীর বলেন, একজন যদি শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকার পরও শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখান এটার জন্য ‘ক্রিমিনাল’ মামলা হবে। থানা–পুলিশ মামলা করবে। শাস্তি হলে তখন ইসি ব্যবস্থা নেবে। তিনি বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত আপনারা প্রমাণ না করাতে পারছেন, যেহেতু নির্বাচনের আগপর্যন্ত কেউ এটাকে নিয়ে চ্যালেঞ্জ করে নাই, এখন উনি নির্বাচিত হয়ে গেছেন। এখন উনি যে ভুল তথ্য দিয়েছেন, এটা খালি বললে হবে না, প্রমাণ করাতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে। ব্যবস্থা নেওয়ার পর যখন আমাদের কাছে পাঠাবেন, তখন আমরা ব্যবস্থা নেব।’