হাইকোর্টে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ২১ আইনজীবীকে তলব
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:২৩ পিএম, ১০ জানুয়ারী,মঙ্গলবার,২০২৩ | আপডেট: ০৭:৫০ পিএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ১-এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ ফারুকের বিরুদ্ধে অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ স্লোগান দিয়ে বিচার ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ২১ আইনজীবীকে তলব করেছেন হাইকোর্ট। আগামী ২৩ জানুয়ারি আইনজীবী সমিতির এই সদস্যদের সশরীরে হাজির হয়ে এ বিষয়ে অভিযোগের ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
আজ মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা জজ বেগম শারমিন নিগারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এ আদেশ দেন।
তলব করা আইনজীবীরা হলেন- আইনজীবী সমিতির সম্পাদক মো. মফিজুর রহমান বাবুল, মিনহাজুল ইসলাম, এমদাদুল হক হাদি, নিজামুদ্দিন খান রানা, আনিছুর রহমান মঞ্জু, মো. জুম্মন চৌধুরী, রাশেদ মিয়া হাজারী, জাহের আলী, মো. আ. আজিজ খান, দেওয়ান ইফতেখার রেজা রাসেল, মো. ছদর উদ্দিন, মাহমুদুর রহমান রনি, মো. মাহবুবুর রহমান, মো. আরিফুল হক মাসুদ, মীর মোহাম্মদ রাইসুল আহম্মেদ, মহিবুর রহমান, মো. জাকারিয়া আহমেদ, মো. মোবারক উল্লা, মো. ফারুক আহমেদ, সফিক আহমেদ ও ইকবাল হোসেন।
এর আগে জেলা জজ আদালতে এজলাস চলার সময় বিচারকের নামে অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ স্লোগান দিয়ে বিচার ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা, বিচার কাজ বিঘ্নিত করা এবং বিচারকের মানহানি করার বিরুদ্ধে প্রতিকার চেয়ে প্রধান বিচারপতির কাছে গতকাল সোমবার আবেদন করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা জজ বেগম শারমিন নিগার।
আবেদনপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, গত ২ জানুয়ারি এজলাস চলার সময় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিচারক মোহাম্মদ ফারুককে অশালীন ও অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে এজলাস থেকে নামতে বাধ্য করা হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় সুপ্রিম কোর্টের কনটেম্পট ব্যাচ রুল জারি করা হলে অভিযুক্ত আইনজীবীরা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে গত ৫ এবং ৮ জানুয়ারি এজলাস চলাকালে বিচারকের বিরুদ্ধে অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ স্লোগান দেন।
জেলা জজের এই আবেদনপত্র প্রধান বিচারপতি হাইকোর্টে পাঠিয়ে দেন।
এদিকে এ ঘটনায় গত ৫ জানুয়ারি ব্রাক্ষণবাড়িয়া আইনজীবী সমিতির সভাপতি তানভীর আহমেদ ভূঞা, সম্পাদক (প্রশাসন) মো. আক্কাস আলী ও জুবায়ের ইসলামকে তলব করেন হাইকোর্ট। আগামী ১৭ জানুয়ারি আদালতে হাজির হয়ে তাদের ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার দায়ে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত। বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেন।
অপরদিকে হাইকোর্টে পাঠানো আবেদনে বিচারক ফারুক বলেন, গত ২ জানুয়ারি তিনি যথাসময়ে বিচার কাজ পরিচালনার জন্য এজলাসে আরোহণ করে দৈনন্দিন কার্য তালিকায় নির্ধারিত মামলাসমূহ শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। এজলাস চলাকালে বার সভাপতি মো. তানভীর ভূঞা, সম্পাদক (প্রশাসন) মো. আক্কাস আলী, জুবায়ের ইসলামসহ ১০/১৫ জন আইনজীবী আসেন এবং তারা অশালীন ও অসৌজন্যমূলকভাবে তাকে এজলাস থেকে নেমে যাওয়ার জন্য বলেন। বারের সভাপতি আদালতকে উদ্দেশ্য করে উচ্চস্বরে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।
এ সময় আদালতের এজলাসে কোর্ট ইন্সপেক্টর, আদালতের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্য, আদালতের কর্মচারী ও বিচারপ্রার্থী জনসাধারণ উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের মধ্য থেকে একজন ঘটনাটি ভিডিও করেন। পরে ভিডিওটি তার হস্তগত হয়। তিনি ভিডিও ক্লিপটি আবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত করেছেন।