এতবার পার্টির দায়িত্বে থাকা ঠিক না, বিশ্বব্যাপী দুঃসময়ের জন্য মানা করিনি : প্রধানমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:১৩ পিএম, ২৫ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ১১:২৬ এএম, ১৩ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এই এতবার আমার মনে হয় একটা পার্টির দায়িত্বে থাকা ঠিক না। তারপরেও যেহেতু এখন সারা বিশ্বব্যাপী একটা দুঃসময় সে জন্যই আমি হয়তো মানা করিনি কিন্তু আমার বয়স হয়েছে এটা মনে রাখতে হবে। আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত কমিটি গঠনের পরে আজ রবিবার দুপুরে গণভবনে নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ এ দেশের জনগণের জন্য কাজ করে এবং আওয়ামী লীগের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের মানুষের আজকে ভাগ্য ফিরে এসেছে। প্রথমবার সরকার যখন গঠন করি, আমাদের সিদ্ধান্ত ছিল কেউ কুঁড়ে ঘরে থাকবে না। কুঁড়ে ঘরে কেউ ছিল না, একটা টিনের ঘর দিতে পারলেও আমরা দিয়েছিলাম। আর এখন আমরা আধাপাকা ঘর তৈরি করে দিচ্ছি। নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, দয়া করে আপনারা আপনাদের এলাকায় খোঁজ নেবেন। রাজনৈতিক নেতা হিসেবে এটা আপনাদের দায়িত্ব যে, আপনার এলাকায় কোনো ভূমিহীন পরিবার বাদ পড়লো কি না। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী কত কষ্ট করবে! সেই ৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিা লগ্ন থেকে বারবার তাদের ওপর আঘাত এসেছে। একটা বাড়ির বাবা যদি জেলে যায়, সে পরিবারের যে কী কষ্ট হয় আমরা নিজেরা তো ভুক্তভোগী, আমরা তো জানি। আমরা আজকে ১৪ বছর ক্ষমতায় আছি। অন্তত আমাদের নেতাকর্মীরা সারা জীবন এত কষ্ট; জেল জুলুম অত্যাচার, এই বিএনপি-জামায়াতের হাতে মার, একের পর এক খালি আঘাতই আসছে। কাজেই আমাদের সেসব নেতাকর্মীরা, তাদের পরিবার-পরিজন যেন ভালো থাকে। আর সেই সঙ্গে বাংলার আপামর জনগোষ্ঠী। যারা দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত ছিল, একবেলা খাবার জুটতো না, কোনো থাকার জায়গা ছিল না, রোগে চিকিৎসা ছিল না, আমরা তাদের জন্য কাজ করে যাচ্ছি, বলেন শেখ হাসিনা।
নতুন সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমরা কিন্তু বই ছাপিয়ে দিই সদস্য সংগ্রহ করার। এই কাজটা আমাদের প্রত্যেকটা জেলা-উপজেলা-ইউনিয়ন-ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত সকলকে সম্পন্ন করতে হবে এবং মুড়ি বইগুলো ফেরত দিতে হবে। এর পরে আমরা আবার নতুনভাবে টিম করে দেবো ৮টা বিভাগের জন্য। প্রতি জেলা-উপজেলায় আমরা আওয়ামী লীগের অফিস করে দিতে চাই। প্রত্যেকে যা পারবেন নিজেরা করবেন। আর যার যতটুকু সহযোগিতা লাগবে আমরা কেন্দ্র থেকে দরকার হলে করবো কিন্তু একটা অফিস থাকা দরকার। এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। সারা বাংলাদেশেই এখন অনলাইনে যোগাযোগ করার সুযোগ আছে। আমাদের আওয়ামী লীগ পিছিয়ে থাকবে কেন! যদিও পিছিয়ে নেই, এখন হচ্ছে। একটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে চাই। যেন জেলা-উপজেলার সঙ্গে কেন্দ্রে যোগাযোগটা থাকে, বলেন শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা বলেন, সংগঠন বলতে সারা বাংলাদেশে সত্যি কথাটা বলা যায় তবে আওয়ামী লীগই আছে, এটা ঠিক। আমরা তো মাটি মানুষ থেকে গড়ে ওঠা সংগঠন। আর বিএনপি-জাতীয় পার্টি এগুলো তো অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখলকারী একজন মিলিটারি শাসক তার পকেট থেকে বের হওয়া। এরা ভাসমান, কাজেই এদের দায়-দায়িত্বটা জনগণের ওপর নেই। যদিও তারা দাবি করে অনেক বছর ক্ষমতায়। কিন্তু ক্ষমতায় থেকেই নিজেদের ভাগ্য গড়েছে, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য গড়েনি। আওয়ামী লীগের কাজ হচ্ছে জনগণের ভাগ্য গড়া, আর সেটাই আমরা কিন্তু করে যাচ্ছি এবং সেটা আমাদের করতে হবে। এককভাবে করলে হবে না, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যার যার এলাকায় একেকজন যদি দায়িত্ব নেন একজনকে সহযোগিতা করবেন, তাহলেই কিন্তু সেই মানুষটার জীবন দাঁড়িয়ে যায়। সেভাবে সবাই কাজ করবেন। মানুষের আস্থা বিশ্বাস এটাই আমাদের বড় শক্তি। আমাদের আর কোনো শক্তি নেই। একমাত্র জনগণের শক্তিতেই আমরা বিশ্বাস করি।
শেখ হাসিনা বলেন, কেউ যদি খুব স্বাধীনচেতা হয় তাহলে অনেকেই তাদেরকে পছন্দ করে না। অনেক বড় বড় দেশ, আমাদের স্বাধীনতার বিরোধীরা কখনো এটা পছন্দ করবে না। কিন্তু আমাদের জনগণকে যদি আমরা ঠিক রাখতে পারি; বাংলাদেশের উন্নয়ন, বাংলাদেশের মানুষের উন্নতি এটা কেউ আটকাতে পারবে না। যেটা জাতির পিতা বলে গিয়েছিলেন কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না, সেটা পারবে না। কাজেই এটা আপনারা সবাই সব সময় মাথায় রেখেই সংগঠনটির ওপর বেশি গুরুত্ব দেবেন এবং সংগঠনকে শক্তিশালী করবেন এটাই আমার অনুরোধ। দোয়া করবেন। আপনারা নির্বাচিত করেছেন আবার। এই এতবার আমার মনে হয় একটা পার্টির দায়িত্বে থাকা ঠিক না। তারপরেও যেহেতু এখন সারা বিশ্বব্যাপী একটা দুঃসময় বিশ্বব্যাপী দুঃসময়ের জন্যই আমি হয়তো মানা করিনি কিন্তু আমার বয়স হয়েছে এটা মনে রাখতে হবে। সংগঠনটা যেন ঠিক থাকে, চলতে থাকে সেই ব্যবস্থাটা করতে হবে আপনাদের। যাই হোক, আপনারা এসেছেন কষ্ট করে। আপনারা কষ্ট করে এসেছেন গণভবনে, এই ভবন আপনাদেরই ভবন। এটার নাম আব্বা দিয়েছেন গণভবন, কারণ এটা জনগণেরই ভবন।