শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:২৬ এএম, ১৪ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০৮:৫৩ পিএম, ২৪ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
আজ বুধবার ১৪ ডিসেম্বর, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। কৃতজ্ঞ জাতি শ্রদ্ধাবনতচিত্তে স্মরণ করছে স্বাধীনতার পাদপীঠে আত্মাহুতি দেয়া বুদ্ধিজীবীদের। অগ্রহায়ণের শিশিরভেজা কাকডাকা ভোরে মানুষের ঢল নেমেছে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে, রায়েরবাজার বধ্যভূমির গণকবরে। ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতিসৌধ। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট মো. আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান পৃথক বাণী দিয়েছেন।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের হাতে শাহাদৎ বরণকারী শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
গতকাল মঙ্গলবার এক বাণীতে তিনি এ শ্রদ্ধা ও মাগফিরাত কামনা করেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স স্বাক্ষরিত বাণীতে বলা হয় ১৪ ডিসেম্বর, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের আগমুহূর্তে পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। তাদের অমর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি একই সঙ্গে তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস জাতির ইতিহাসে এক শোকাবহ দিন। অমর বুদ্ধিজীবীগণ দেশমাতৃকার শ্রেষ্ঠ সন্তান। যারা একটি সমৃদ্ধ এবং মাথা উঁচু করা জাতি দেখতে চেয়েছিলেন। তারা ন্যায় বিচারভিত্তিক শোষণমুক্ত একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রত্যাশা করেছিলেন। কিন্তু হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা দেশের এই শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করে বিশ^ ইতিহাসে এক ঘৃণ্য অধ্যায় রচনা করে। নতুন দেশকে সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও শিক্ষাগত দিক থেকে দুর্বল ও পঙ্গু করার জন্য দেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছিল পরিকল্পিতভাবে।
স্বাধীনতার ৫১ বছর পর বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকার তাদের মুখোশ খুলে ফেলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ন্যায় দেশের মানুষের সর্বজনীন গণতান্ত্রিক অধিকারগুলো একের পর এক হরণ করেছে, তারা এক নদী রক্ত আর ত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া আমাদের রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব দিনে দিনে দুর্বল করে এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ বিনির্মাণে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রত্যাশা ধূলিসাৎ করেছে। সেই পাক হানাদারদের মতোই দুঃশাসনের ঐতিহ্য ধারণ করে তাদের উত্তরসূরী বর্তমান ক্ষমতাসীনরা বিভেদ অনৈক্য এবং সংকীর্ণতার দ্বারা ঐক্যবদ্ধ জাতি গড়া ও জাতীয় অগ্রগতির পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে এবং গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠিয়েছে। সুতরাং আমাদের রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক বিকাশ এবং দেশকে একটি সমৃদ্ধ, স্বনির্ভর ও শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত করতে হলে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। স্ব-স্ব অবস্থানে থেকে দায়িত্ব পালনে আন্তরিক হতে হবে।
এ ক্ষেত্রে শহীদ বুদ্ধিজীবীগণ আমাদের প্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করে যাবেন। আজকের এ শোকাবহ দিনে আমি দেশবাসীর প্রতি আহবান জানাই-আসুন শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রত্যাশার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে আমরা একসাথে কাজ করি। আওয়ামী দুঃশাসনে ক্ষত-বিক্ষত এই রাষ্ট্রকে মেরামত করতে দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে যাই। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে ন্যায় বিচার ভিত্তিক শোষণমুক্ত সমাজ ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করি। আমি শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পরিবারবর্গের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবীরা দেশমাতৃকার শ্রেষ্ঠ সন্তান। বাংলাদেশের মহান মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের প্রেরণা জুগিয়েছিলেন তারা। নিজেদের মেধা ও প্রজ্ঞা দিয়ে জনগণকে উদ্দীপ্ত করেছিলেন সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত মুহূর্তে বীর বাঙালি যখন অত্যাসন্ন বিজয়ের আনন্দে উন্মুখ, ঠিক তখন দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর গুপ্ত ঘাতকরা রাতের আঁধারে মেতে ওঠে বুদ্ধিজীবী নিধনযজ্ঞে।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণের মাত্র দুদিন আগে ১৪ ডিসেম্বর ঘাতকচক্র ঢাকা শহরে বিশিষ্ট শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সংস্কৃতিসেবী ও পদস্থ সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাসহ বুদ্ধিজীবী এবং বিভিন্ন পেশার কৃতী সন্তানদের অপহরণ করে নিয়ে যায় অজ্ঞাত স্থানে। পরবর্তী সময় মিরপুরের ডোবা-নালা ও রায়েরবাজার ইটভাটায় বিপ্তিভাবে পড়ে থাকতে দেখা যায় বুলেটবিদ্ধ তাদের নিথর দেহ, পেছনে হাত বাঁধা, ক্ষতচিহ্ন শরীরজুড়ে। জাতি হারায় তার অসংখ্য মেধাবী সন্তানকে।
একাত্তরের ডিসেম্বরে হত্যাযজ্ঞের শিকার শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রকৃত সংখ্যা এখনো নিরূপণ করা হয়নি। প্রাপ্ত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বাংলাপিডিয়ায় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের যে সংখ্যা দাঁড় করানো হয়েছে, সে অনুযায়ী একাত্তরে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে ছিলেন ৯৯১ জন শিক্ষাবিদ, ১৩ জন সাংবাদিক, ৪৯ জন চিকিৎসক, ৪২ জন আইনজীবী এবং ১৬ জন শিল্পী-সাহিত্যিক ও প্রকৌশলী।
এদের মধ্যে ছিলেন ড. জিসি দেব, অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, সন্তোষ চন্দ্র ভট্টাচার্য, ড. মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, অধ্যাপক মনিরুজ্জামান, অধ্যাপক আনোয়ার পাশা, অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, ডা. ফজলে রাব্বী, ডা. আলীম চৌধুরী, ড. গোলাম মোর্তজা, ড. মোহাম্মদ শফি, শহীদুল্লাহ কায়সার, সিরাজউদ্দিন হোসেন, নিজামুদ্দিন আহমদ, খন্দকার আবু তালেব, আ.ন.ম. গোলাম মোস্তফা, শহীদ সাবের, নাজমুল হক, আলতাফ মাহমুদ, আরপি সাহা, আবুল খায়ের, রশীদুল হাসান, সিরাজুল হক খান, আবুল বাশার, ড. মুক্তাদির, ফজলুল মাহী, ড. সাদেক, ড. আমিনুদ্দিন, সায়ীদুল হাসান, হাবিবুর রহমান, মেহেরুন্নেসা, সেলিনা পারভীনসহ অনেকে।
যথাযোগ্য মর্যাদা ও শোকের আবহে আজ পালিত হবে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। দেশব্যাপী বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এ উপলক্ষে নিয়েছে নানা কর্মসূচি। এতে রয়েছে শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, আলোচনা সভা, গান, আবৃত্তি, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। আজ ভোর থেকেই শোকাহত মানুষের ঢল নামবে সে দিনের হত্যাযজ্ঞের স্মৃতি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান, রায়েরবাজারের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্মৃতিস্তম্ভের সামনে। সেখানে অর্পণ করা হবে পুষ্পার্ঘ্য।
শোকবিধূর মানুষ গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের। দেশের সর্বত্রই আজ জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। শোকের প্রতীক কালো পতাকাও উড়ানো হবে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বিএনপির কর্মসূচি : শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে আজ ১৪ ডিসেম্বর বুধবার
ভোরে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন। সকাল ৮ টায় কালো ব্যাজ ধারণ ও মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবি স্মৃতি সৌধে দলের পক্ষ থেকে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ। জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ দলের কেন্দ্রীয় এবং মহানগর, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বিএনপি ও স্ব-স্ব সংগঠনের পক্ষ থেকে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন।
বেলা ৩ টায় জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করবেন বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। প্রধান অতিথি থাকবেন বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। আলোচনা সভায় দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যবৃন্দসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ বক্তব্য রাখবেন।