আশ্রয়ণ প্রকল্পের অর্ধেক ঘরই বিক্রি করে দিলেন সুবিধাভোগীরা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:২৮ পিএম, ১২ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ১১:০০ পিএম, ১৬ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার গাড়াদহ ইউনিয়নের গাড়াদহ দক্ষিণপাড়া গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১৪ ঘরের মধ্যে সাতটি ঘরই বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে সুবিধাভোগীদের বিরুদ্ধে। প্রতিটি ঘর ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে বলে জানা গেছে। শাহজাদপুর উপজেলা ভূমি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার গাড়াদহ ইউনিয়নের গাড়াদহ দক্ষিণপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে ১৪টি ঘর নির্মাণ করা হয়। একেকটি ঘর নির্মাণে সরকারি বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। আর জমি বরাদ্দ আছে ২ শতাংশ। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শাহজাদপুর উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২৫১টি ঘর সুবিধাভোগীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গাড়াদহ দক্ষিণপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১৪ নম্বর ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন আবদুস সালাম-সেলিনা দম্পতি। অথচ ঘরটি স্ট্যাম্পের মাধ্যমে ১ লাখ টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছেন শিরিনা বেগম। বর্তমানে তারা পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। ১০ নম্বর ঘরের সুবিধাভোগী বেল্লাল হোসেন ও তার স্ত্রী সারা খাতুন। বর্তমানে এই ঘরটি ৮০ হাজার টাকায় কিনে বসবাস করছেন মো. আনু ও সাবিনা বেগম। ৮ নম্বর ঘর আবদুর রশিদ দম্পতি বরাদ্দ পেলেও ঘরটি ১ লাখ ১০ হাজার টাকায় কিনে বসবাস করছেন জাহের আলীর পরিবার। এছাড়া ৯ নম্বর ঘর মো. ঠান্ডু দম্পতি পেলেও সে ঘর ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায় কিনে পিঞ্জিরা খাতুন তার সন্তানদের নিয়ে বসবাস করছেন, ১৩ নম্বর ঘর রফিকুল ইসলাম ও মোছা. ফুলমালা দম্পতি পেলেও ১ লাখ টাকা দিয়ে কিনে নাজমুল হোসেন তার পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন, ১৬ নম্বর ঘর বিধবা রেশমা খাতুন বরাদ্দ পেলেও সে ঘর ১ লাখ টাকায় কিনে হাফিজুল ইসলাম ও নাছিমা খাতুন দম্পতি বসবাস করছেন, ১৭ নম্বর ঘর জহুরুল ইসলাম ও আফরোজা বেগম দম্পতি বরাদ্দ পেলেও সে ঘর ১ লাখ ১১ হাজার টাকায় কিনে হালিমা বেগম তার পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। এলাকাবাসী বলছেন, ১০ নম্বর ঘরের সুবিধাভোগী বেল্লাল হোসেন ও তার স্ত্রী সারা খাতুনের গাড়াদহ ফুটবল খেলার মাঠের পাশে বড় বাড়ি রয়েছে। মো. আনু ও সাবিনা বেগম দম্পতি টাকা দিয়ে ঘর কিনে বসবাসের কথা সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করে বলেন, আমাগোরে ঘরবাড়ি কিছু নাই। আমাগোরে কোনো মানুষ নাই, তাই একটা ঘর পাই নাই। এহুন ঋণ কইরা স্ট্যাম্পের মাধ্যমে ঘর কিন্যা বসবাস করছি। ১৪ নম্বর ঘরের সুবিধাভোগী আবদুস সালামের স্ত্রী সেলিনা বেগম বলেন, ঘর বিক্রির বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। ঘর বিক্রির একটি টাকাও আমরা পাইনি। সব ডিজিটাল ভিশন বিদ্যানিকেতনের (কেজি স্কুল) পরিচালক জুয়েল আহম্মেদ নিয়েছেন। সেই এসব বিষয়ে জানেন। স্থানীয় ডিজিটাল ভিশন বিদ্যানিকেতনের পরিচালক জুয়েল আহম্মেদ বলেন, একটি ঘর কেনাবেচার সময় আমি মধ্যস্ততা করেছিলাম। তবে টাকার বিষয়ে আমি কিছু জানি না। শাহজাদপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) লিয়াকত সালমান বলেন, ঘর বিক্রির বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। দ্রুতই আমরা মাঠে গিয়ে ব্যবস্থা নেব। শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিন বলেন, সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বিক্রি করা আইনত অপরাধ। যাদের নামে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে কেবল তারাই ঘরগুলোতে বসবাস করতে পারবেন। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর কোনোভাবেই বিক্রি বা হস্তান্তরের সুযোগ নেই।
তিনি আরও বলেন, আমরা তদন্ত করে ঘর বিক্রির প্রমাণ পেয়েছি। যারা ঘরগুলো বরাদ্দ নিয়ে বিক্রি করেছে তাদের বরাদ্দ বাতিলের পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাশাপাশি যারা ঘরগুলো কিনেছেন তারা যদি প্রকৃত ভূমিহীন হয়ে থাকে, তবে তাদের নামে ঘরগুলো বরাদ্দ দেয়ার জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হবে।