আদালতের নির্দেশনা মেনে বেসিক ব্যাংকের তদন্তকাজ শেষ হবে : দুদক সচিব
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৫৩ পিএম, ১ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০২:১১ এএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
আদালতের নির্দেশনা মেনে বেসিক ব্যাংকের তদন্ত তিন মাসের মধ্যে শেষ করতে কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সচিব মাহবুব হোসেন।
আজ বৃহস্পতিবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
দুদক সচিব বলেন, আদালতের নির্দেশনা মেনে বেসিক ব্যাংকের ৫৬টি মামলার তদন্তকাজ যাতে নির্ধারিত তিন মাসের মধ্যে শেষ করা হয়, সে লক্ষ্যে কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে যথাসাধ্য চেষ্টা থাকবে। তিনি বলেন, বেসিক ব্যাংকের ৫৬টি মামলার প্রতিটির সঙ্গে অনেক বিষয় জড়িত। অনেক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে হয়। সে কারণেই সময় লাগছে। আমরা আমাদের কর্মকর্তাদের আদালতের নির্দেশনা অনুসরণ করতে বলেছি। দুদক ও বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের গুলশান, দিলকুশা ও শান্তিনগর শাখা থেকে মোট সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার ঋণ অনিয়মের মাধ্যমে বিতরণের অভিযোগ ওঠার পরপরই অনুসন্ধানে নামে দুদক। ঋণপত্র যাচাই না করে জামানত ছাড়া, জাল দলিলে ভুয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ঋণদানসহ নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে বিধিবহির্ভূতভাবে ঋণ অনুমোদনের অভিযোগ ওঠে ব্যাংকটির তৎকালীন পরিচালনাপর্ষদের বিরুদ্ধে। প্রায় পাঁচ বছর অনুসন্ধান শেষে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা লোপাটের ঘটনায় ২০১৫ সালের ২১, ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর তিনদিনে টানা ৫৬টি মামলা হয়। রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন ও গুলশান থানায় এসব মামলায় আসামি করা হয় ১২০ জনকে। এর মধ্যে ঋণগ্রহীতা ৮২ জন, ব্যাংকার ২৭ ও ভূমি জরিপকারী ১১ জন।
অনিয়মের মাধ্যমে দুই হাজার ৬৫ কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয় বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়। এর মধ্যে রাজধানীর গুলশান শাখা থেকে এক হাজার ৩০০ কোটি টাকা, শান্তিনগর শাখা থেকে ৩৮৭ কোটি টাকা, প্রধান শাখা থেকে প্রায় ২৪৮ কোটি টাকা এবং দিলকুশা শাখা থেকে ১৩০ কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়। অভিযোগের বাকি অংশের অনুসন্ধান এখনও চলছে। এছাড়া বেসিক ব্যাংকসংক্রান্ত বিষয়ে আরও পৃথক চারটি মামলা করে দুদক। ব্যাংকার ও ঋণগ্রহীতাদের অনেকেই একাধিক মামলায় আসামি হয়েছেন। এর মধ্যে ব্যাংকের প্রাক্তন এমডি (ব্যবস্থাপনা পরিচালক) কাজী ফখরুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে ৪৮টি মামলায়। ডিএমডি ফজলুস সোবহান ৪৭টি, কনক কুমার পুরকায়স্থ ২৩টি, মো. সেলিম আটটি, বরখাস্ত হওয়া ডিএমডি এ মোনায়েম খান ৩৫টি মামলার আসামি। তবে কোনো মামলায় ব্যাংকের প্রাক্তন চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বাচ্চুসহ পরিচালনা পর্ষদের কাউকে আসামি করা হয়নি। এ বিষয়ে দুদকের বরাবরই বক্তব্য ছিল, ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় দালিলিকভাবে আব্দুল হাই বাচ্চুর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে দুদকের দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে গণমাধ্যমের সামনে নিজের ভুল স্বীকার করে বেসিক ব্যাংকের এক সময়ের প্রতাপশালী চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চু বলেছিলেন, আমি যা করেছি সরল মনে করেছি। অনেকক্ষেত্রে ভুল করেছি। তবে সব দায় আমার নয়। কারণ, বোর্ডের অনুমোদনের বাইরে আমি কিছু করিনি। জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য বাচ্চুকে ২০০৯ সালে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেয় সরকার। ২০১২ সালে তার নিয়োগ নবায়নও হয়। কিন্তু ঋণ কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠলে ২০১৪ সালে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ফখরুল ইসলামকে অপসারণের পর চাপের মুখে থাকা বাচ্চু পদত্যাগ করেন। বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারি মামলাগুলোর তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন দুদকের সাবেক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের দল।