র্যাবের বক্তব্য বিশ্বাস করেন না ফারদিনের বাবা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৫৩ পিএম, ১৭ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০৯:০৫ পিএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
রায়হান গ্যাংয়ের সঙ্গে আমার ছেলেটার কী নিয়ে বিরোধ থাকবে? বুঝলাম সে (রায়হান) একটা খারাপ মানুষ। কিন্তু আমাকে বোঝান আমার ছেলেটাই কেন তার টার্গেটে পড়বে? সে কেন ওখানে (চনপাড়ায়) যাবে? কীভাবে সম্ভব সেটা! কোন তথ্যের ভিত্তিতে দেখাবেন সেখানে আমার ছেলেটা মুভিং করছে? সে যদি সেখানে না থেকে থাকে তাহলে এসব বলার অর্থ কী? গণমাধ্যমে র্যাব কর্মকর্তার বরাতে উঠে আসা তথ্যের পরিপ্রেক্ষিতে এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র ফারদিন নূর পরশের বাবা কাজী নূরউদ্দিন রানা।
আজ বৃহস্পতিবার ডিবি কার্যালয়ে ছেলে হত্যার তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি।
পরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে হত্যার শিকার হয়েছে। আর মামলাটা কী? এসব কিছু বলে মামলাকেই পাল্টে দিয়েছেন। আগাম কথাবার্তা বলা উচিত নয়। ফারদিন হত্যা মামলায় কোনো মোটিভ তদন্তকারী সংস্থা জানিয়েছে কী-না, এমন প্রশ্নের জবাবে নূর উদ্দিন রানা বলেন, ‘না, আমাকে সে রকম কিছুই জানানো হয়নি। তারা (ডিবি) আমাকে ডেকেছে, ছেলের পড়াশুনা, বয়স, মাদকে জড়ানোর বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। সে মুক্তমনা ছিল কী-না, যেসব জায়গায় গিয়েছে সেসব জায়গায় অন্য কোনো বন্ধু রয়েছে কী-না, এসব বিষয় জানতে চেয়েছেন। আপনি আগে বলেছিলেন, বাসা থেকে ফারদিনের হলে ফেরার কথা ছিল। হলে যাওয়ার কথা বলেই ফারদিন বের হয়েছিল। কিন্তু সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে ফারদিন হলে না ফিরে যাত্রাবাড়ীতে গেছে। এর আগে সে এ রকম করেছে কী-না, এমন প্রশ্নের জবাবে নুর উদ্দিন রানা বলেন, ‘অতীতে এমন রেকর্ড নেই। পরিবারের সঙ্গেই সে পরামর্শ করে বা জানিয়ে সব করে। নিখোঁজ হওয়ার আগ পর্যন্ত সে তার মাকে যা জানিয়েছে, সে অনুযায়ী চলতে দেখেছি। কিন্তু এখন ঠিক বুঝতে পারছি না সে আসলে কেন গিয়েছিল যাত্রাবাড়ীতে? মাদকের সঙ্গে জড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মাদকে জড়ানোর বিষয়ে ডিবি কিছুই বলেনি আমাকে। মাদকে সংশ্লিষ্টতাও পাওয়া যায়নি, সেটা ডিবি পুলিশ ক্লিয়ার করেছে। আমিও এর আগে বলেছি। আমার ছেলে কখনো ধূমপান করত না। এমনকি ধোঁয়াও সহ্য করতে পারত না। বিদেশ যাওয়া নিয়ে কোনো স্ট্রেস বা অবসাদে ভুগছিল কী-না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, সে রকম কিছু নয়। আমার ছেলে ছোটবেলা থেকেই গল্প উপন্যাস পড়ে বড় হয়েছে। বিদেশ যাওয়া হলো না বলে ভেঙে পড়ার মতো ছেলে নয় সে। ওর চরিত্রের মধ্যে সে রকম কিছু নেই। বিদেশ না যাওয়ার বিষয়টি সে আমলে নেয়ার ছেলে নয়। ফারদিন হত্যার বিষয়ে ডিবি পুলিশ ও র্যাব জোর দিয়ে তদন্ত করছে। থানায় গিয়েছিলাম জিডি করার পরে। যেহেতু সাসপেক্ট করা হচ্ছে। পরিকল্পিত কী-না সেটা বের করতে হলে সময় লাগতে পারে। সব বিষয়ে আমরা তো অনুমান করতে পারি না। আপনি মামলার বাদী, ছেলে হারিয়েছেন কিন্তু তদন্ত সংশ্লিষ্ট সবাই নিশ্চিত করেছেন ফারদিন হত্যায় বান্ধবী বুশরা জড়িত নয়। বুশরার জন্য আপনার খারাপ লাগা আছে কী-না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বুশরার জন্য প্রচন্ড রকমের খারাপ লাগা তো আছেই। কিন্তু বুশরার সঙ্গে ফারদিনের ৫/৬ ঘণ্টা কাটানোর কথা নয়। এই মেয়েও এতোটা সময় কাটানোর কথা নয়। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারছি না বুশরা জড়িত নয়। র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ফারদিন হত্যায় জড়িতদের প্রায় খুঁজে বের করা হয়েছে। নজরদারিতে আছে। র্যাবের দাবি, চনপাড়ার রায়হান গ্যাং ও তার সহযোগীরা মিলে ফারদিনকে হত্যা করেছে। রায়হান ও সহযোগীদের আটক করা হয়েছে বলে খবরও বেরিয়েছে। র্যাব কী আপনাকে ডেকে এসব ব্যাপারে কিছু জানিয়েছে? আপনি কী মনে করেন ফারদিন চনপাড়ায় হত্যার শিকার হয়েছে? এসব প্রশ্নের জবাবে বাবা নূরউদ্দিন বলেন, ‘র্যাব থেকে তথ্য সংগ্রহের জন্য আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। তবে মামলা দায়েরের পর থেকে তারা কোনো আপডেট দেয়নি। এই যে ম্যাসেজটা দিলো, কারা দিলো, কোন সংস্থা দিলো তা আপনারা জানেন। বিচারাধীন বিষয়ে এমন তথ্য দেয়াটা কতোটা যথাযথ? ওখানে যে ফুটেজ দেখানো হলো। রায়হান গ্যাং এর সঙ্গে আমার ছেলেটার কী বিরোধ থাকবে?’ এদিকে র্যাবের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী রায়হান গ্যাং ফারদিন হত্যার নেপথ্যে কাজ করেছে। আলোচিত এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় রায়হানসহ বেশ কয়েকজনকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, হত্যাকা-ে কারা জড়িত তাদের আমরা প্রায় শনাক্ত করতে পেরেছি। চনপাড়ার আশপাশে হত্যাকা-টি ঘটানো হতে পারে। আমরা অনেকটাই নিশ্চিত যে চনপাড়ার রায়হান গ্যাং সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। রায়হানকে যদি আমরা আইনের আওতায় আনতে পারি তাহলে ফারদিন খুনের মোটিভ বের করতে পারব। কিন্তু ফারদিন চনপাড়ায় কেন গিয়েছিল সেটা নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা আছে উল্লেখ করে এ কর্মকর্তা বলেন, চনপাড়া বস্তি থেকে ফারদিনের বাসা কাছেই। রাতের বেলায় চনপাড়ায় তার মুভমেন্টের কারণটা আমরা এখনো বের করতে পারিনি।