ম্যাজিস্ট্রেটকে পিপির হুমকি বিচার বিভাগের জন্য কলঙ্ক : হাইকোর্ট
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:২৩ পিএম, ১৫ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ০৮:৩৮ পিএম, ১৮ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
পিরোজপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে হুমকি ও তার সঙ্গে পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) খান মো. আলাউদ্দিনের অসৌজন্যমূলক আচরণের ঘটনা বিচার বিভাগের জন্য কলঙ্ক বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। আদালতের তলবাদেশে হাজির হয়ে পিপির নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার পর আজ মঙ্গলবার বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন। আদালতে পিপির পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ফিদা এম কামাল, সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা, সুপ্রিম কোর্ট বার সম্পাদক আব্দুন নূর দুলাল, অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথি, অ্যাডভোকেট রবিউল আলম বুদু ও অ্যাডভোকেট আবুল হোসেন। শুনানিকালে আদালত পিরোজপুরের পিপিকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনি কোনও সাধারণ আইনজীবী নন। আপনি পিরোজপুরের পিপি, আইনজীবী নেতা। আপনারা যদি বিচারককে, আদালতকে সম্মান না করেন তাহলে তো সাধারণ মানুষ সম্মান করবে না। আর যদি আদালতের প্রতি, বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা উঠে যায়, তাহলে তো কেউ বাঁচবেন না। আমরা যদি আপনার আচরণ অনুমোদন করি তাহলে সাধারণ মানুষের মাঝে কী ম্যাসেজ যাবে? বিচারকের সঙ্গে আপনার এই আচরণের কারণে যে ক্ষতি হয়েছে, তার খেসারত দিতে হবে। আপনার আচরণের কথা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এতে বিচার বিভাগের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। আপনারও তো অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। এটা তো আপনার জীবনের বড় দুর্ঘটনা। একজন বিচারকের সঙ্গে পিপি যে আচরণ করেছেন তা রাষ্ট্রের জন্য কলঙ্ক। বিচার বিভাগের জন্য কলঙ্ক। এ ধরনের আচরণ মেনে নেয়া যায় না।
আদালত আরও বলেন, আদালত শক্তি প্রদর্শনের জায়গা নয়। এখানে যত বিনয়ী হবেন তত বড় হতে পারবেন। এখন যদি আপনাকে আমরা ছয় মাসের জন্য আইনপেশা থেকে বিরত থাকার আদেশ দেই তখন আপনার কী হবে? এ পর্যায়ে উপস্থিত সিনিয়র আইনজীবীরা আদালতকে বলেন, আমরা তার পক্ষ হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চাচ্ছি। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আর ঘটবে না। তখন আদালত পিপিকে এজলাসের ডায়াসের সামনে ডাকেন। এ সময় পিপি আদালতকে বলেন, আমি নিঃশর্ত ক্ষমা চাচ্ছি। ভবিষ্যতে আর এ ধরনের আচরণ করব না। পরে আদালত তাকে সতর্ক করে ক্ষমা করে দেন। এর আগে গত ১৯ সেপ্টেম্বর পিরোজপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবু জাফর মো. নোমান পিপির বিরুদ্ধে খারাপ আচরণের অভিযোগ এনে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে চিঠি দেন। ওই চিঠিতে পাবলিক প্রসিকিউটর খান মো. আলাউদ্দিন সম্প্রতি সময়ে তার পিপিশীপের কর্তৃত্ব প্রদর্শনের চেষ্টায় পিরোজপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেন্সিতে কর্মরত অন্যান্য ম্যাজিস্ট্রেটদের সঙ্গেও প্রকাশ্য এজলাসে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন বলে অভিযোগ তোলা হয়। পরে পিরোজপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবু জাফর মো. নোমানকে হুমকি ও অসৌজন্যমূলক আচরণ করায় পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) খান মোহাম্মদ আলাউদ্দিনকে তলব করেন হাইকোর্ট। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি আদালতে হাজির হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন।