আতঙ্কিত না হলে দেশে দুর্ভিক্ষ হবে না : খাদ্যমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৪৩ পিএম, ১৩ নভেম্বর,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ০৪:৩৮ পিএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, দেশে যে পরিমাণ খাদ্যশস্য উৎপাদন হচ্ছে ও মজুদ রয়েছে, জনগণ যদি হতাশাগ্রস্ত ও আতঙ্ক না হয় তাহলে দেশে কোনো দুর্ভিক্ষ হবে না।
আজ রবিবার কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রফতানির জন্য ‘হেলথ সার্টিফিকেট’ প্রদান অনুষ্ঠানে খাদ্যমন্ত্রী এমন মন্তব্য করেন। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ) পণ্যের এ স্বাস্থ্য সনদ প্রদান করে। প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে দুটি প্রতিষ্ঠানকে পণ্যের স্বাস্থ্য সনদ প্রদান করা হয়। এগুলো হলো- ইএসএল বাংলাদেশ লি. ও ট্রাস্ট অ্যান্ড ট্রেড এম ইমপেক্স।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় খাদ্যদ্রব্য উৎপাদনের নানাবিধ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সামনে ইরি ও বোরো মৌসুমে পর্যাপ্ত পরিমাণে সার মজুর ও সেচের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দেশে খাদ্য উৎপাদন হচ্ছে, এছাড়া পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ রয়েছে। আবার বেসরকারিভাবেও খাদ্যদ্রব্য আমদানি করা হচ্ছে। আমরা যদি হতাশা আর আতঙ্কিত হয়ে তিন থেকে চার গুণ বেশি পণ্য কিনে মজুদ না করি তাহলে বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ হবে না।
উদাহরণ হিসেবে মন্ত্রী বলেন, গত সপ্তাহে ডাক্তারের চেম্বারে এক লোক চালসহ খাদ্যদ্রব্য মজুদ করে রাখতে সবাইকে পরামর্শ দিচ্ছেন। ওই লোক জানান, তিনি দেড় বছরের জন্য চাল-ডালসহ নিত্যপণ্য মজুদ করে রেখেছেন। তার মতো আতঙ্কিত না হয়ে সবাই খাদ্যদ্রব্য মজুদ না করে তাহলে দেশে খাদ্য সংকট হবে না। এছাড়া দেশে দুর্ভিক্ষ হওয়ারও কোনো সম্ভাবনা নেই।
পণ্যের স্বাস্থ্য সনদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের সার্টিফিকেট দিয়ে প্রমাণ করতে হচ্ছে রফতানির জন্য নিরাপদ খাদ্য দরকার। এখন আমাদের সবার উচিত সচেতন হওয়া। আমরা যদি সব খাদ্য নিরাপদ করতে পারি তাহলে এত সার্টিফিকেটের প্রয়োজন হবে না। নিজেদের সুস্বাস্থ্য ও খাদ্যদ্রব্য রফতানির জন্য নিরাপদ খাদ্যের একটা অবস্থা তৈরি করতে হবে। যাতে করে সার্টিফিকেট নয়, আমাদের নাম শুনলেই বিদেশিরা যেন খাদ্যদ্রব্য আমদানিতে আগ্রহ হন।
তিনি বলেন, আমাদের উচিত যখন একটা শিশু জন্ম হয় তখনই নামিদামি ব্রান্ডের গুঁড়া দুধ না খাইয়ে অন্তত প্রথম ছয় মাস শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো। বিপরীতে বাজারের গুঁড়া দুধ খাওয়ালে ৪-৫ বছর বয়সেই শিশু নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এভাবে প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই আমাদের নিজেদের আগে সচেতন হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, এতদিন খাদ্যদ্রব্য রফতানির জন্য রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান দেশ-বিদেশের ল্যাব থেকে পণ্যের মান পরীক্ষা করে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) কাছে দিতো। ওইসব পরীক্ষা-নিরীক্ষার সব কাজ এখন থেকে বিএফএসএ নিজেই করবে। এতে করে একদিকে রফতানিকারকদের ভোগান্তি কমবে, অন্যদিকে পণ্যের মানের বিষয়েও কম্পোমাইজ করার সুযোগ থাকবে না।
খাদ্য সচিব মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, আন্তঃমন্ত্রণালয়ের কাজের যাতে ওভারলেপিং না হয়, তা আমরা বসে সমাধানের চেষ্টা করব। তিনি খাদ্যদ্রব্য রফতানির ক্ষেত্রে সর্বজনস্বীকৃত স্বাস্থ্য সনদ প্রদান করার জন্য আস্থা তৈরির ওপর জোর দেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ নিজেদের দায়িত্ব যথাযথ ও নির্ভুলভাবে প্রদান করবে বলে আশা প্রকাশ করেন করেন।
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কাইউম সরকার বলেন, খাদ্যদ্রব্য রফতানির ক্ষেত্রে বিএফএসএ কর্তৃক প্রদেয় স্বাস্থ্য সনদ দেশের সামগ্রিক রফতানি বৃদ্ধি করবে। স্বাস্থ্য সনদ প্রদান অনুষ্ঠানের আগে সকালে শুরু হওয়া কর্মশালায় নিরাপদ খাদ্য আইন ও বিধি সম্পর্কে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএফএসএ’র সদস্য মঞ্জুর মোর্শেদ আহমদ। তাতে নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩-এর বিভিন্ন ধারা ও অধ্যায়, খাদ্য দূষণকারী, সংযোজন দ্রব্য ব্যবহার, স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ সংরক্ষণ, খাদ্য স্পর্শক, ব্যবসায়ীর বাধ্যবাধকতা, দূষণ, টক্সিন ও ক্ষতিকর অবশিষ্টাংশ, ট্রান্স ফ্যাটি এসিড নিয়ন্ত্রণ ও বিষাক্ত পদার্থযুক্ত খাদ্যদ্রব্য প্রত্যাহারবিষয়ক প্রবিধানমালার বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
কর্মশালায় জানানো হয়, বিশ্বে প্রতি বছর ১০ জনে একজন খাদ্যজনিত অসুস্থতায় ভোগেন এবং ৪ লাখ ২০ হাজার জন মারা যান। প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন শিশু মারা যায় খাদ্যজনিত অসুস্থতায়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ১৫০ মিলিয়ন মানুষ অসুস্থ হচ্ছেন এই কারণে। যার মধ্যে মারা যান ১ লাখ ৭৫ হাজার, এর মধ্যে ৫০ হাজার শিশু রয়েছে। জানা যায়, আমদানিকারক দেশের চাহিদা অনুযায়ী রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান পণ্যের ল্যাব টেস্ট রিপোর্ট আনলে ইপিবি তা দেখে সার্টিফিকেট ইস্যু করত। যেসব রফতানিকারকের সার্টিফিকেট দরকার, বন্দর থেকে তাদের পণ্যের নমুনা এনে পরীক্ষা করে সার্টিফিকেট প্রদানের সবগুলো কাজই করবে বিএফএসএ। তবে ল্যাব টেস্টে কোনো পণ্যে হেলথ হ্যাজার্ড পাওয়া গেলে তা আর রফতানির অনুমতি দেয়া হবে না। অনুষ্ঠান সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন বিএফএসএ’র আইন কর্মকর্তা শেখ মো. ফেরদৌস আরাফাত। বিএফএসএ’র সদস্য আব্দুল আলীম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।