নিয়োগে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের বয়সসীমা মানছে না সরকারি দফতর
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ৫ অক্টোবর,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০৬:৩২ এএম, ১৪ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩০ বছর। বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের জন্য যা দুই বছর বেশি। সরকারি যে কোনো দফতরে নিয়োগের ক্ষেত্রে বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তানরা ৩২ বছর পর্যন্ত আবেদন করতে পারেন। তবে গত কয়েক বছরে সরকারি অন্তত ৩০টি দফতর ও সংস্থা বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টও। বিশেষ বয়সসীমা উল্লেখ না করায় আবেদন করা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান।
বিশিষ্টজনরা বলছেন, বিষয়টি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আর দফতর সংশ্লিষ্টদের কারও দাবি, বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ না থাকলেও আবেদন করা যেত। বিষয়টি আমলে নিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী। শুধু সরকারি দফতর বা সংস্থা নয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তিতে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে ৩ শতাংশ কোটাও মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। এটা তো সরকারি স্ট্যান্ডিং অর্ডার। আমরা যদি নাও লিখে থাকি, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা ৩২ বছর বিবেচনা করে আবেদন করতে পারবেন। সমস্যা নেই, আমরা গ্রহণ করবো। ১৯৯৮ সালের ২১ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় (তখনকার সংস্থাপন মন্ত্রণালয়) এক আদেশের মাধ্যমে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও জাতীয়কৃত প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের বয়সসীমা ৩২ বছর নির্ধারণ করে। সরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের বয়সসীমা অনুসরণ না করা নিয়ে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম-এর কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলাম তুষার গত ৪ সেপ্টেম্বর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর কাছে একটি চিঠি পাঠান।
এতে বলা হয়, ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর নবম গ্রেড (প্রথম শ্রেণি), দশম থেকে ১৩তম গ্রেডে (আগের দ্বিতীয় শ্রেণি) সরাসরি নিয়োগে কোটা ব্যবস্থা বাতিল করা হয়। এর পর থেকে সরকারি বিভিন্ন দফতর বিভিন্ন অজুহাতে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর অনুসরণ করছে না। অথচ কোটা ব্যবস্থা বাতিলের সঙ্গে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমার কোনো সম্পর্ক নেই। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ১৯৯৮ সালের ২১ সেপ্টেম্বর এক আদেশের মাধ্যমে বীর মুক্তিযোদ্ধা/শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের চাকরিতে প্রবেশকালে বয়সের উচ্চসীমা ৩২ বছর নির্ধারণ করে চিঠিতে বলা হয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এমন নির্দেশনা থাকার পরও সরকারি বিভিন্ন দফতর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা অনুসরণ করছে না, যা সরকারি আদেশ অবমাননার শামিল। বয়স অনুসরণ না করায় অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানই চাকরির আবেদন করা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
‘সরকারি নির্দেশ থাকলে সরকারি কর্মচারীরা তো বটেই, আমরা সবাই সেটা মানতে বাধ্য। যদি তারা এটা ইচ্ছাকৃতভাবে মেনে না নেন এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এ অবস্থায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী সরকারি/আধা-সরকারি/স্বায়ত্তশাসিত ও জাতীয়করণ করা প্রতিষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা অনুসরণের বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানানো হয় ওই চিঠিতে। চিঠিটি সংযুক্ত করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় গত ২০ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে চিঠি পাঠায়।
সেখানে জনপ্রশাসন সচিবের উদ্দেশ্যে বলা হয়, প্রাপ্ত আবেদনখানা সদয় অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঠানো হলো।
এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘কোনো ব্যত্যয় (চাকরিতে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের বয়সসীমা মানার বিষয়ে) হয়ে থাকলে আমরা ইনশাআল্লাহ ব্যবস্থা নেবো। আমরা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘যে সব সরকারি সংস্থা নিয়োগের ক্ষেত্রে বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের বয়সসীমার বিষয়টি মানে না, তাদের এ বিষয়টি সরকারের দৃষ্টিতে আনা হবে। সরকারি দফতর ও সংস্থাগুলো আইন অনুযায়ী যাতে ব্যবস্থা নেয়, এজন্য যা যা প্রয়োজন সেই বিষয়ে আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে ব্যবস্থা নেয়া হবে। যে সব সরকারি সংস্থা নিয়োগের ক্ষেত্রে বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের বয়সসীমার বিষয়টি মানে না, তাদের এ বিষয়টি সরকারের দৃষ্টিতে আনা হবে। সরকারি দফতর ও সংস্থাগুলো আইন অনুযায়ী যাতে ব্যবস্থা নেয়, এজন্য যা যা প্রয়োজন সেই বিষয়ে আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম বলেন, ‘চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের বয়স ৩২ বছর। এ বিষয়ে সার্কুলার রয়েছে। আমরা সুনির্দিষ্টভাবে তথ্য পেলে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করবো। যেসব দফতর-সংস্থা নিয়ম মানছে না: গত ২৫ আগস্ট ৫৫০ জন ফায়ার ফাইটার পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর। সেখানে বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের বয়সসীমা মানা হয়নি। গত বছরের ২৪ মার্চ আটটি পদে নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি জারি করে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট। সেখানে তিনটি পদে অভিজ্ঞদের জন্য বয়সসীমা ৩৭ বছর নির্ধারণ করা হলেও বাকি চারটি পদের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩০ বছর নির্ধারণ করা হয়। কমপ্লেইন সুপারভাইজার পদে নিয়োগ দিতে গত বছরের ২৩ মার্চ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয় ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি), সেখানেও বয়সসীমা ৩০ বছর নির্ধারণ করা হয়। গত ২ আগস্ট ১৬টি পদে নিয়োগ দিতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)। প্রত্যেকটি পদের জন্য বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয় ৩০ বছর। বার্তাবাহক পদে নিয়োগ দিতে গত ২১ আগস্ট মানিকগঞ্জ জেলা পরিষদ কার্যালয় তারা প্রার্থীদের বয়স নির্ধারণ করে ১৮ থেকে ৩০ বছর।
এভাবে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের জন্য বয়সসীমা ৩২ বছর উল্লেখ না করে গত বছরের ১৮ জুলাই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ফাউন্ডেশন, ২০১৮ সালের ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৯ সালের সালের ২৭ মে ও ২০২০ সালের ২৮ জুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, গত বছরের সেপ্টেম্বরে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট, গত বছরের ২৫ আগস্ট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ঢাকা শিশু হাসপাতাল (বর্তমান নাম বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট), গত ৮ আগস্ট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট। একইভাবে গত কয়েক বছরে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের বয়সসীমা এড়িয়ে গেছে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন, খুলনা শিপইয়ার্ড, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা, ঢাকা ইপিজেড হাসপাতাল, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্ট্যাডিজ (বিআইআইএসএস)।
নিয়োগে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের বয়সসীমা কেন মানা হয়নি- জানতে চাইলে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) মুহ. মাহবুবর রহমান বলেন, ‘নিশ্চয়ই বিজ্ঞপ্তির কোথাও লেখা আছে, আপনি মনোযোগ দিয়ে দেখুন। ভালোভাবেই দেখা হয়েছে জানালে তিনি বলেন, ‘এটা তো সরকারি স্ট্যান্ডিং অর্ডার। আমরা যদি নাও লিখে থাকি, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা ৩২ বছর বিবেচনা করে আবেদন করতে পারবেন। সমস্যা নেই, আমরা গ্রহণ করবো। ঢাকা শিশু হাসপাতালের সাবেক পরিচালক (নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সময় দায়িত্বে থাকা) অধ্যাপক ডা. সৈয়দ সফি আহমেদ বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিষয়গুলো আমরা সব সময় মেনে চলেছি।
গত বছরের ২৫ আগস্ট নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘এই নিয়োগটা মূলত আমরা দিয়েছি আমাদের এখানে ইন্টারনালি যারা কাজ করছিল তাদের জন্য। তারা মূলত এখানে দীর্ঘদিন অ্যাডহক ভিত্তিতে কাজ করছিল। তাদের রেগুলারাইজ করার জন্য ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি দেয়া হয়েছিল। মানবিক কারণে এটা করতে হয়। ‘তাও মাত্র কয়েকজন টেকনিশিয়ানকে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল, বাকিদের নিয়োগ দেয়া যায়নি। আর বাইরে থেকে কাউকে তো নিয়োগ দেয়ার প্রশ্নই আসে না। এর আগে যখন নিয়োগ দিয়েছি আমরা বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের বয়সসীমা মেনেছি’ বলেন সফি আহমেদ।
সরকারি দফতরগুলোর মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের বয়সসীমা না মানার বিষয়ে জানতে চাইলে ইতিহাসবিদ ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘সরকারি নির্দেশ থাকলে সরকারি কর্মচারীরা তো বটেই, আমরা সবাই সেটা মানতে বাধ্য। যদি তারা এটা ইচ্ছাকৃতভাবে মেনে না নেন এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আমরা আজকাল সবক্ষেত্রে একটি প্রবণতা লক্ষ্য করি- মুক্তিযুদ্ধের কোনো বিষয় বা প্রসঙ্গ এলে রাজনীতিবিদরা সোচ্চার হন বটে কিন্তু অন্য যারা বিভিন্ন জায়গায় কর্মরত তারা এ বিষয়টি আমলে আনতে চান না। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সহ-সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক মুনতাসীর আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, শিক্ষাক্ষেত্র থেকে আমলাতন্ত্র এমনকি রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও যাদের আমরা মনে করি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের, কাজ করতে গিয়ে দেখা যাবে তাদের অনেকের বুকের মধ্যে যেন পাকিস্তানের একটা ডাকটিকিট সাঁটা আছে, যেটা ওঠানো যাচ্ছে না।
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম-এর কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলাম তুষার বলেন, ‘আমাদের মনে হচ্ছে প্রশাসনের অনেক জায়গায় মুক্তিযুদ্ধবিরোধী লোক বসে আছে। সে কারণেই বিধি-বিধান থাকলেও মুক্তিযোদ্ধাদের সুবিধা পাওয়ার বিষগুলোতে তারা বাধা সৃষ্টি করছেন। সরকারি বিভিন্ন দফতর ইচ্ছাকৃতভাবে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের বয়সসীমার বিষয়টি মানছে না।’ মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি পরীক্ষায় ৫ শতাংশ ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩ শতাংশ কোটা রয়েছে। কিন্তু অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এ নিয়ম মানছে না বলে অভিযোগ তুলেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা।
তারা জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি পরীক্ষায় ৫ শতাংশ কোটা প্রথমত বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ছিল, পরবর্তী সময়ে নাতি-নাতনি যুক্ত করা হয়। তবে মেডিকেল কলেজে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ এবং নাতি-নাতনিদের জন্য ২ শতাংশ রাখলে রিট করেন একজন। পরে হাইকোর্ট সবার জন্য ৫ শতাংশ কোটা সংরক্ষণের নির্দেশ দেন। বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। বিজ্ঞপ্তিটিতে ১০টি বিভাগে সর্বমোট ৬শ শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য আবেদন চাওয়া হয়। কিন্তু সরকারি নিয়ম অনুযায়ী সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি পরীক্ষায় ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা অনুসরণ করার নিয়ম থাকলেও বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি-নাতনিদের জন্য প্রতি বিভাগে মাত্র একটি করে মোট ১০টি আসন সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট), খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট), রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ (রুয়েট) পাবলিক বিশ্ব বিদ্যালয়গুলো ভর্তিতে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের কোটা মানছে না।
‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০’ (৯) (৪) ধারায় বলা হয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক শিক্ষাবর্ষে ভর্তি করা পূর্ণকালীন শিক্ষার্থীদের ন্যূনতম ৩ শতাংশ আসন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য সংরক্ষণ, টিউশন ফি ও অন্যান্য ফি ব্যতীত বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সুযোগ দিতে হবে।
বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা জানান, অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এ নিয়ম অনুসরণ করছে না। কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ফি ২০/৪০/৬০ শতাংশ মওকুফ করছে। আবার কিছু বিশ্ববিদ্যালয় শর্ত জুড়ে দিচ্ছে শিক্ষা জীবনে অতীতের সব পরীক্ষায় জিপিএ ৫ থাকতে হবে। আবার কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এক বর্ষ থেকে অন্য বর্ষে উত্তীর্ণ হওয়ার সময় তাদের দেয়া শর্ত মতো জিপিএ তুলতে না পারলে সামান্য পরিমাণে যে মওকুফ করা হয় তা বাতিল করে দিচ্ছে। আবার কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় টিউশন ফি মওকুফ করলেও পরীক্ষা ফি বা অন্যান্য খরচের নামে মোটা অংকের ফি আদায় করছে। এতে অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ভর্তি হয়েও মাঝপথে গিয়ে নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধা কোটা না মানার বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এখানে আমি এসেছি ১০ মাস হলো, আমি তো এমন কোনো ইস্যু দেখিনি। বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের কোনো কোটা আছে কি না, সেটাও আমি জানি না। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম-এর কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি বলেন, ‘অধিকাংশ সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সরকারি এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন আইন অনুযায়ী কোটা অনুসরণ করছে না। এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা উপমন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী ও সচিব, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান ও সচিব এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও রেজিস্ট্রার বরাবর আমরা অনেক চিঠি দিয়েছি। তবে তেমন কাজ হচ্ছে না। এ সমস্যা সমাধানে আমরা আদালতে যাবো। ২০১৮ সালের ২৪ জানুয়ারি একটি সমন্বিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পিএসসি। ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ৭২ জন পিটিআই ইন্সট্রাক্টর (বীর মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সংরক্ষিত) এবং ১৭ জন উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার (মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সংরক্ষিত) পদে শুধু মুক্তিযোদ্ধা কোটার প্রার্থীদের কাছ থেকে আবেদন চাওয়া হয়। কিন্তু সমন্বিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বিভিন্ন ক্রমিক ও ইউনিটের পরীক্ষা নির্ধারিত সময়ে শেষ হলেও মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সংরক্ষিত পিটিআই ইন্সট্রাক্টর ও উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার পদের পরীক্ষার প্রায় পাঁচ বছর হয়ে গেছে। কিন্তু কোনো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। একই ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডও। পরে এ বিষয়ে অভিযোগ জানিয়ে চলতি বছরের ১৯ জুন প্রার্থীদের পক্ষ থেকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানকে চিঠি দেয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
ওই চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে বীর মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ‘শিক্ষানবিশ’ পদের নিয়োগ কার্যক্রমটি পাঁচ বছরের বেশি সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও নিয়োগ সম্পন্ন না করার অভিযোগের আবেদনের বিষয়ে বিধি অনুযায়ী পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পাঠানো হলো।