দেশের সব মানুষ খেতে পারছে, গায়ে জামা-কাপড় আছে : তাজুল ইসলাম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:৪৪ পিএম, ১০ আগস্ট,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০৪:১৭ এএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
দেশের প্রত্যেকটি মানুষ খেতে পারছে, মানুষের গায়ে জামা-কাপড় আছে। আমরা খুব খারাপ অবস্থায় আছি বলে মনে করি না- এমন মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, গ্রামের প্রায় সব রাস্তাঘাট পাকা হয়ে গেছে। প্রত্যেক গ্রামে প্রাইমারি স্কুল করা হয়েছে, ঘর না থাকলে ঘর করে দেয়া হচ্ছে। আমি মনে করি না আমরা খুব খারাপ অবস্থায় আছি। ভ্রান্ত ধারণা থেকে আমাদের বের হতে হবে।
আজ বুধবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ‘নিত্যপণ্য ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি : জনজীবনে চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সংলাপের আয়োজন করে নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরাম।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, জার্মানির বহু শপিংমলে জিনিসপত্র নেই। কেউ ধারণা করে বলতে পারে না পৃথিবীর অবস্থা কোথায় যাবে। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকসহ অনেকেই আমাদের এখানে অর্থায়ন করতে চায়, দেশের অবস্থা এত খারাপ হলে তাদের তো মাথা খারাপ হয়নি আমাকে টাকা দিতে। বিশ্বব্যাংক এসে ঘুরছে, বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করছে। ভয়ের কোনো কারণ নেই, আগাম কিছু আমি বলতে পারি না। এলাকাভেদে পানির দাম নির্ধারণ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, পানির দাম গুলশানে ৫০ টাকা করে দেবো, বস্তিতে ১২ টাকা। গরিব এলাকায় কম দাম নেবো। যারা বড়লোক তাদের জন্য ভর্তুকি কেন রাষ্ট্র দেবে! কিছু কিছু সংকট থাকবে, সেটা সবাই মিলে মোকাবিলা করতে পারবো।
তাজুল ইসলাম বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হয়েছে, সেখানে নিশ্চয়ই বাংলাদেশের হাত নেই। এই যুদ্ধের কারণে সারাবিশ্বেই এখন টালমাটাল অবস্থা। অর্থনীতি, সামাজিক অবস্থা এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসহ সবকিছু নিয়ে সবাই আতঙ্কিত। এখন তাইওয়ানের সঙ্গে চায়নার উত্তপ্ত পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে। সেটির প্রভাব কিন্তু সারাবিশ্বে পড়বে।
তিনি বলেন, দুর্দিন যখন আসে সবাই একত্রিত হয়ে সেই দুর্দিনে মানুষের পাশে দাঁড়ায় অথবা একসঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা করে। স্বাধীনতা যুদ্ধে জাতির পিতার ডাকে সাড়া দিয়ে তখন সবাই অংশ নেন। আমাদের ৯০ শতাংশ মানুষ একাত্ম থাকলে আমরা বিজয় অর্জন করবো। পরিস্থিতি যা আসে সেটি মোকাবিলা করতে হবে। পরিস্থিতি যদি আমার জন্য হয় অবশ্যই আমাকে সেটি বলবেন, সেক্ষেত্রে অবশ্যই নিজেকে শোধরাতে হবে। কিন্তু এটি যদি অন্য কোনো কারণে হয়, বৈশ্বিক কারণে হয়- সেখানে সবাইকে ঐকমত্য হয়ে কাজ করতে হবে।
তাজুল ইসলাম আরও বলেন, যুক্তরাজ্য, ইউরোপ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনেক দেশ প্রয়োজনের বড় অংশ গ্যাসসহ ফুয়েলের ক্ষেত্রে রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল ছিল। ফুয়েল উৎপাদনে প্রথম ভেনেজুয়েলা, এরপর রাশিয়া এবং তৃতীয় অবস্থানে সৌদি আরব। রাশিয়ার রিসোর্স থাকায় ফুয়েল বেশি বিক্রি করে এবং পুরো ইউরোপ এখন রাশিয়া চালায় (জ্বালানি সরবরাহ করে)। ভেনেজুয়েলার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের তেল মার্কেটে ঢুকছে না। বাংলাদেশে ১৭ কোটি মানুষ, কতোগুলো দেশে এত মানুষ আছে। আমাদের পর্যাপ্ত গ্যাস মজুত আছে। রিজার্ভ কী? যখন কারেন্ট অ্যাকাউন্টে শর্ট পড়ে তখন রিজার্ভ দিয়ে চালানো হয়। রিজার্ভ কখনো আগে এত ছিল না। শ্রীলঙ্কার প্রসঙ্গ টেনে মন্ত্রী বলেন, শ্রীলঙ্কা কী করেছে আর আমরা কী করছি। তারা শুধু পর্যটনের উন্নয়ন করেছে। আমরা আমাদের কৃষিকে উন্নত করেছি। তাদের ৭৫ শতাংশ কৃষিখাতে স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। কিন্তু আমাদের তো উৎপাদন যথেষ্ট আছে। আমাদের গমে কিছুটা স্বল্পতা আছে, কিন্তু চালের তো স্বল্পতা নেই। সরকার প্রচুর ভর্তুকি দিচ্ছে। পৃথিবীর কোন দেশে আছে যেখানকার জনগণ দেনা পরিশোধ করে না? সরকারের টাকা কোত্থেকে আসে? আমি-আপনি টাকা আয় করি, সরকার শুধু ম্যানেজমেন্ট করে। কথায় কথায় ভর্তুকি দিলে অন্য খাতগুলো শৃঙ্খলা হারাবে। ভর্তুকি কোথায় দিতে হবে সরকার সেটি অ্যানালাইসিস করে তারপর দেয়। দুর্নীতি সারা পৃথিবীতে আছে, তবে যে মাত্রায় আমাদের দেশে আছে সেটির জন্য বেদনার কথা। সংলাপে সভাপতিত্ব করেন নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি অমিতোষ পাল। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক সোহেল মামুনের সঞ্চালনায় এতে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক, ঢাবির উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক রিয়াজুল হক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।