সারের দাম বাড়লেও ফসল উৎপাদনে প্রভাব পড়বে না : কৃষিমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৫৭ পিএম, ৩ আগস্ট,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০৯:৩২ পিএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
ইউরিয়া সারের দাম কেজিতে ছয় টাকা বাড়লেও ফসল উৎপাদনে এর প্রভাব পড়বে না বলে মনে করছেন কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। এ সময় তিনি জানান, সরকার ইউরিয়া সারের অপ্রয়োজনীয় ও মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার কমিয়ে এর বদলে ডিএপি সারের ব্যবহার বাড়াতে চায়।
আজ বুধবার বরিশাল শহরের শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে বরিশাল বিভাগসহ উপকূলীয় অঞ্চলে তেল ফসল ও ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি শীর্ষক কর্মশালা শুরুর আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন মন্ত্রী। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর (ডিএই) এ কর্মশালার আয়োজন করে।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, সরকার ইউরিয়া সারের সুষম ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করে আসছে। কৃষকদের মধ্যে ইউরিয়া সার বেশি ব্যবহার করার প্রবণতা রয়েছে। ডিএপি সারে শতকরা ১৮ ভাগ নাইট্রোজেন বা ইউরিয়া সারের উপাদান রয়েছে। সেজন্য ডিএপির ব্যবহার বাড়িয়ে ইউরিয়া সারের অপ্রয়োজনীয় ও মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার কমিয়ে আনার জন্য সরকার ডিএপি সারের মূল্য প্রতিকেজি ৯০ টাকা থেকে কমিয়ে প্রথমে ২৫ টাকা (২০০৯ সালে), এবং পরে ২০১৯ সালে ২৫ টাকা থেকে কমিয়ে ১৬ টাকা করে কৃষকদের দিয়ে যাচ্ছে। এ উদ্যোগের ফলে বিগত কয়েক বছরে ডিএপি সারের ব্যবহার দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে, ডিএপির ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে ভেবেছিলাম ইউরিয়া সারের ব্যবহার কমবে, কিন্তু কমেনি। দাম বৃদ্ধির ফলে ইউরিয়ার ব্যবহার কমবে বলে আশা প্রকাশ করেন মন্ত্রী। এ সময় মন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম কমলে দেশেও সারের দাম কমানো হবে।
উল্লেখ্য, সরকার ইউরিয়া সারের দাম ১ আগস্ট থেকে কেজিতে ৬ টাকা বৃদ্ধি করে ডিলার পর্যায়ে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ২০ টাকা এবং কৃষক পর্যায়ে প্রতিকেজি ২২ টাকা নির্ধারণ করেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিকেজি ইউরিয়ার সারের বর্তমান দাম ৮১ টাকা। সে হিসেবে এখনও ইউরিয়াতে বিপুল ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক সংকটকে কাজে লাগিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার ও সংকট থেকে ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করছে বিএনপি। তারা আহাম্মকের স্বর্গে বাস করছে। এ দেশের জনগণ অত্যন্ত সচেতন ও বাস্তববাদী। জনগণ বিএনপির অপশাসন, লুটতরাজ ও দুর্নীতি ভুলে যায়নি। বিএনপির আমলে দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়েছিল, দেশে সন্ত্রাসের রাজত্ব তৈরি হয়েছিল, নৈরাজ্যকর অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল।
মন্ত্রী বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় উন্নতদেশগুলোও হিমশিম খাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, তুরস্ক, পাকিস্তানসহ অনেক দেশেই বাংলাদেশের চেয়ে মূল্যস্ফীতি অনেক বেশি। আন্তর্জাতিক সংকটের ফলে দেশের মানুষের কিছুটা সাময়িক কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু দেশে চরম কোনো সংকট হবে না, খাদ্য সংকট বা কোনো হাহাকার হবে না। বিএনপি তাদের ৫ বছরে এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারেনি। কাজেই, বিএনপি, জামায়াত যতই অপচেষ্টা করুক সফল হবে না। দেশের মানুষ বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে না। জনগণ সবসময়ই আমাদের সঙ্গে ছিল, আগামীতেও আমাদের সাথে থাকবে। কৃষিসচিব মো. সায়েদুল ইসলামের সভাপতিত্বে বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ, ব্রির মহাপরিচালক শাহজাহান কবীর, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক বেনজীর আলম, বিএডিসির চেয়ারম্যান এএফএম হায়াতুল্লাহ, বারির মহাপরিচালক দেবাশীষ সরকার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। কর্মশালায় উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ত জমিতে চাষযোগ্য তেল ফসল ও উচ্চ উৎপাদনশীল ধানের জাত দ্রুত সম্প্রসারণের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।