নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে রেহাই পেলেন বোয়ালমারীর ইউএনও
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:১৪ পিএম, ২৫ জুলাই,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ১০:৪৭ পিএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
হাইকোর্টে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে আদালত অবমাননার অভিযোগ থেকে রেহাই পেলেন ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রেজাউল করিম।
আজ সোমবার বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজি–আল–জলিলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এর আগে হাইকোর্টে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করে আবেদন করেছিলেন ইউএনও মো. রেজাউল করিম ও নাজির উকিল মিয়া। আদালতের দুই কর্মচারীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও বিচারের হুমকি দিয়ে আদালত অবমাননার জন্য ক্ষমা চেয়েছিলেন তারা। এর মধ্যে উকিল মিয়াকে সতর্ক করেছেন হাইকোর্ট।
আদালত বলেন, ইউএনও যেহেতু ওই প্রতিষ্ঠানের প্রধান তিনি এটি সেখানেই শেষ করতে পারতেন। কিন্তু তা করেননি। এদিকে উকিল মিয়াকে আদালতের আদেশের বিষয়ে আরও যত্নশীল ও সতর্ক থাকার কথা বলেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মাহবুব শফিক। আর নাজির উকিল মিয়ার পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মো. মোজাম্মেল হক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়। এর আগে গত ২১ জুন হাইকোর্টে ক্ষমা প্রার্থনা করেন ইউএনও রেজাউল করিম। ওই বেঞ্চ আদালত অবমাননার বিষয়ে গত ২৬ জুন আদেশ দেয়ার কথা থাকলেও বিচারপতি করোনা আক্রান্ত হওয়ায় সেদিন শুনানি হয়নি। তারই ধারাবাহিকতায়গতকাল সেটি শুনানি হয়। গত ৭ জুন নোটিশ জারি করতে যাওয়া আদালতের দুই কর্মচারীর সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগের বিষয়ে নিজেদের ভূমিকা কী ছিল তার ব্যাখ্যা দিতে তাদের তলব করেছিলেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে রুলে তাদের বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননার কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল। ওইদিন হাইকোর্টের একই বেঞ্চ স্বঃপ্রণোদিত হয়ে আদালত অবমাননার রুলসহ এ আদেশ দিয়েছিলেন। এ বিষয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় জানান, ফরিদপুরের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে ওই ঘটনা লিখিতভাবে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্টার জেনারেলকে জানানো হয়। এরপর প্রধান বিচারপতি বিষয়টি শুনানি ও নিষ্পত্তির জন্য বিচারপতি জে বি এম হাসানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে পাঠান। পরে আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে অবমাননার রুলসহ ওই আদেশ দেন।
বোয়ালমারীর আদালত থেকে পাঠানো এ সংক্রান্ত অবহিতকরণপত্র থেকে জানা যায়, গত ২৭ এপ্রিল বোয়ালমারী সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের দেয়ানি মামলার (৫৩/২০২২) নোটিশ জারি করতে জারিকারক মো. কামাল হোসেন ও মেহেদী হাসান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে যান। সেদিন দুপুর আড়াইটার দিকে নাজির উকিল মিয়ার কাছে নোটিশ গ্রহণের অনুরোধ জানালে তিনি ব্যস্ততা দেখিয়ে তাদের অপেক্ষায় রাখেন। বিকেল ৪টার দিকে তারা আবারও নাজিরের কাছে গেলে তিনি উত্তেজিত হয়ে তাদের ওপরের তলায় গিয়ে বসতে বলেন।
অন্য জায়গায় সমন জারির কাজ আছে জানালে উকিল মিয়া বলেন, তাতে তার কী, জজকোর্টের নোটিশ না রাখলে তার কী হবে? তিনি এর চেয়ে বড় কাজে ব্যস্ত আছেন। তিনি নোটিশ পাশের টেবিলে দিতে বললে পাশের টেবিলে দায়িত্বরত কর্মচারী নোটিশ বুঝে নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। জারিকারক বিষয়টি আদালতকে অবহিত করবে বললে জানালে উকিল মিয়া বলেন, ‘জজের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই, আমরা নির্বাহী বিভাগের লোক। নোটিশ না রাখলে আমাদের কিছুই হবে না। একপর্যায়ে নোটিশ বুঝে নেন উকিল মিয়া। এরই মধ্যে ওই অফিসের একজন কর্মচারী বিষয়টি ইউএনওকে অবহিত করলে তিনি জারিকারক দুজনকে তার কক্ষে ডেকে নিয়ে দরজা আটকিয়ে জেরা করতে থাকেন। স্টাফদের সঙ্গে বাজে ব্যবহারের অভিযোগ তুলে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে জারিকারকদের সাজা দেয়ার হুমকি দেন ইউএনও। একপর্যায়ে ইউএনও তাদের মোবাইল কেড়ে নেন ও মুচলেকা দিয়ে চলে যেতে বলেন।
তারা রোজা আছেন জানালে ইউএনও বলেন, মুচলেকা ব্যতীত তাদের ছাড়বেন না তিনি। একপর্যায়ে পা ধরে মাফ চাইতে বাধ্য করেন ইউএনও। এরপর জোর করে নির্দেশনামতে মুচলেকা লিখিয়ে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। অবহিতকরণপত্রে আরও বলা হয়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মুক্ত হয়ে ওই দুই জারিকারক বিষয়টি প্রথমে জেলা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত নাজির মো. রফিকুল ইসলামকে জানান। পরে নাজির বিষয়টি নেজারত শাখার ভারপ্রাপ্ত জজকে জানান। নেজারত শাখার ভারপ্রাপ্ত জজ জারিকারকদের লিখিত অভিযোগ পরে সংশ্লিষ্ট আদালতে পাঠান। গত ১৯ মে বোয়ালমারীর সিনিয়র সহকারী জজ (৫৩/২০২২ নম্বর) মামলার এক আদেশে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও তার কার্যালয়ের নাজিরের বিরুদ্ধে কেন বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হবে না- তা আদেশ পাওয়ার ১০ দিনের মধ্যে উপস্থিত হয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দেন। পরবর্তীকালে আদেশ না দেয়া পর্যন্ত কারণ দর্শানোর এই নোটিশের কার্যক্রম না চালাতে বোয়ালমারীর সিনিয়র সহকারী জজকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।