এখনো ফাঁকা ঢাকার রাস্তা : বানের বেগে ফিরছেন কর্মজীবীরা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৩৩ পিএম, ১৬ জুলাই,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ০৯:৫৪ পিএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
ঈদের পর এক এক করে ছয়দিন কেটে গেলেও এখনো স্বরূপে ফেরেনি রাজধানী। পরিবহন ও মানুষের চাপ কম থাকায় ঢাকার অধিকাংশ ব্যস্ত রাস্তাগুলো এখনো প্রায় ফাঁকা। ফলে ঢাকা মহানগরীর এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে যানজটের ধকল সইতে হচ্ছে না।
আজ শনিবার রামপুরা, বাড্ডা, মালিবাগ, কাকরাইল, পল্টন, মতিঝিল, যাত্রাবাড়ী, কমলাপুর, মানিকনগর, বাসাবো, শাহবাগ, ফার্মগেট, মিরপুর, শ্যামলী, গাবতলীসহ ঢাকার বিভিন্ন ব্যস্ত রাস্তা ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। প্রতিনিয়ত যানজট লেগে থাকে রাজধানীর এমন অঞ্চলের মধ্যে অন্যতম রামপুরা ও বাড্ডা। তবে এ অঞ্চলের রাস্তাগুলো এখনো প্রায় ফাঁকা রয়েছে। রাস্তায় মানুষের যেমন চাপ নেই, তেমনি গণপরিবহনেরও চাপ নেই। গণপরিবহনের তুলনায় এ অঞ্চলে ব্যক্তিগত গাড়ি ও রিকশা চলাচল বেশি করতে দেখা গেছে। ঈদের ছুটি কাটিয়ে নগরে ফিরছেন মানুষ। কর্মব্যস্ত হয়ে উঠছে নগরী। রাজধানীর বাস টার্মনাল, রেলওয়ে স্টেশন, লঞ্চ টার্মনারে রাজধানীতে ফেরা মানুষের উপচে পড়া ভিড় জানান দিচ্ছে নগরীর ব্যস্ত হয়ে উঠার কথা। রবিবার (১৭ জুলাই) থেকেই পুরোনো চেহারায় ফিরবে ঢাকা। ঈদের ছুটির পর গত কয়েকদিন অল্প অল্প করে লোকজন নগরীতে ফিরলেও শুক্র ও শনিবার (১৪ ও ১৫ জুলাই) থেকে নগরীতে ফেরা মানুষের চাপ বেড়েছে অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় সবচেয়ে বেশি। বানের জলের মত নগরীতে কর্মজীবী ঢুকছেন মানুষ। ট্রেনে, বাসে, লঞ্চে মানুষের ঠাঁই নেই। যে যেমনে পারছেন সেভাবেই ঢাকায় আসার চেষ্টা করছেন। আগের মতই অভিযোগ আছে ট্রেনের কাউন্টারে টিকিট না পাওয়া এবং টিকিট কালোবাজারির। একইসঙ্গে বাসেও বেশি দামে টিকিট বিক্রির অভিযোগ আছে ঈদের ফেরত যাত্রায়।
শনিবার সকালে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা প্রতিটি ট্রেনেই মানুষের ভিড়। ঈদের গ্রামে যাওয়া মানুষ ফিরছেন পরিবার-পরিজনকে সঙ্গে নিয়ে। রাজশাহী থেকে ফেরা জসিম উদ্দিন বলছিলেন, ফেরত যাত্রায় মানুষের খুবই চাপ। রবিবারই কাজে যোগ দিতে হবে তাই গতকাল ফিরলাম। দিনাজপুর থেকে আসা আব্দুর রাসেল কমলাপুরে বলেন, মানুষের ওপর মানুষ। ট্রেনে তিল ধারণের জায়গা নেই। কিন্তু উপায়ও নেই। ফিরতে হবে কাজে যোগ দিতে হবে। ট্রেনের ছাদেও মানুষ ফিরছেন ঢাকায়। শুধু কমলাপুর বা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনেই ঢাকামুখী মানুষের চাপ নয়, দেশের প্রতিটি মহাসড়ক ও আঞ্চলিক মহাসড়কেও যানবাহনের চাপ বেড়েছে। পদ্মা সেতু হয়ে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে আসা যানবাহনের চাপ বেড়েছে। এই সড়কে মাঝে মধ্যেই ঢাকামুখী গাড়ির চাপের কারণে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক্সপ্রেসওয়েতে টোলপ্লাজায় অস্বাভাবিক যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কেও যানবাহনের চাপ বেড়েছে। শুক্রবারও এই মহাসড়কে গাড়ির ব্যাপক চাপ ছিল। গতকাল শনিবারও এই সড়কে গাড়ির ব্যাপক চাপ রয়েছে। বিশেষ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্বরোড, আশুগঞ্জ, ভৈরববাজার, পাঁচদোনা, মাধবদীসহ বেশ কিছু এলাকায় যানজট দেখা গেছে। সবচেয়ে ভয়াবহ চিত্র হচ্ছে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের। এই সড়কে দীর্ঘ ১৪ কিলোমিটার যানজট দেখা দিয়েছে। তার ওপর এই সড়কে দুর্ঘটনাও বেড়েছে। ঈদের ছুটি কাটিয়ে ঢাকায় কর্মস্থলমুখী মানুষের চাপ বেড়েছে। এ কারণে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে ঢাকামুখী যানবাহনের চাপ বেড়ে গেছে। টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, গতকাল শনিবার ভোর থেকে মহাসড়কের বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ১৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। এর আগে শুক্রবার (১৫ জুলাই) সকাল থেকেই এই মহাসড়কে ঢাকামুখি যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ শুরু হয়।
সরেজমিনে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব টোলপ্লাজায় ঘুরে দেখা গেছে, মহাসড়কে উত্তরবঙ্গগামী যানবাহনের একেবারেই চাপ কম। শুধু ঢাকামুখী যানবাহনের ব্যাপক চাপ রয়েছে। এতে করে টোলপ্লাজা এলাকার দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন সৃষ্টি হওয়ায় ঢাকামুখী যানবাহন চলছে ধীর গতিতে। এ ছাড়া ঈদের সময় বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল পারাপারে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ঈদের পরদিন থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচল করছে। ফলে মহাসড়কে মোটরসাইকেলের চাপও বেড়ে গেছে বহুগুণ।
এদিকে দীর্ঘ যানজট আর তীব্র গরমে রাস্তায় আটকে পড়া মানুষের বিশেষ করে নারী, শিশু এবং বয়স্ক লোকজনের ভোগান্তি হচ্ছে সবচেয়ে বেশি।
এলেঙ্গা হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতাউর রহমান জানান, মহাসড়কের এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব পর্যন্ত আপাতত যানবাহনের চাপ কিছুটা কমলেও যানবাহন চলাচল করছে ধীর গতিতে। রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মনালেও ঢাকামুখি মানুষের চাপ দেখা গেছে। সকালে দক্ষিণাঞ্চল থেকে অনেকগুলো লঞ্চ এসে ঘাটে ভিড়ে। এসব লঞ্চে করে হাজার হাজার কর্মজীবী মানুষ ঢাকায় ফিরেছেন।