দেশে প্রায় ২৩ লাখ শিশু অটিজমে ভুগছে : স্বাস্থ্যমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:০১ পিএম, ২৮ জুন,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ০৭:৪৩ পিএম, ১৪ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
দেশে প্রায় ২৩ লাখ শিশু অটিজমে ভুগছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে মেয়ে শিশুর চেয়ে ছেলে শিশুর সংখ্যা প্রায় আড়াই গুণ বেশি। অটিজমে আক্রান্ত এসব শিশুদের আমরা চিকিৎসা দিচ্ছি, কিন্তু গবেষণায় আমরা কিছুটা পিছিয়ে আছি। এক্ষেত্রে আমাদের আরও গবেষণা বাড়াতে হবে।
আজ মঙ্গলবার (২৮ জুন) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ইনস্টিটিউট অব পেডিয়াট্রিক নিউরো-ডিজঅর্ডার অ্যান্ড অটিজম (ইপনা) আয়োজিত ‘সার্টিফিকেট কোর্স অন নিউরো-ডেভেলপমেন্ট ডিসঅর্ডার’ শীর্ষক কোর্সের উদ্বোধনী ও সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক। যারা অটিজমে ভুগছে, তারা আগে স্কুলে যেতে পারত না, বাড়িতে মেহমান আসলে তাদের লুকিয়ে রাখা হতো। এখন অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। এক্ষেত্রে সব কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রী ও তার কন্যা সায়মা ওয়াজেদের।
তিনি বলেন, যারা অটিস্টিক শিশু আছে, তারা আগামী দিনে আরও ভালো সেবা পাবে। তাদের চিকিৎসা সেবায় দেশে অনেক ইনস্টিটিউট হচ্ছে, তাদের জন্য আলাদা স্কুল করা হচ্ছে। এমনকি বিদ্যমান স্কুলগুলোতে তাদের শিক্ষায় আলাদা ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কাউকে পেছনে রেখে আমরা কেউই এগিয়ে যেতে চাই না।
অনুষ্ঠানে বিএসএমএমইউয়ের শিশু নিউরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. গোপেন কুমার কুণ্ডু বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ইনস্টিটিউট অব পেডিয়াট্রিক নিউরো-ডিজঅর্ডার অ্যান্ড অটিজম (ইপনা) কর্তৃক দেশব্যাপী পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, প্রতি ১০ হাজারে ১৭ শিশু অটিজম পাওয়া যায়। এদের মধ্যে পল্লী এলাকায় প্রতি ১০ হাজারে ১৪ জন, শহর এলাকায় প্রতি ১০ হাজারে ২৫ জন আক্রান্ত পাওয়া যায়।
তিনি বলেন, ২০১৭ সালের মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সারা দেশের আটটি বিভাগের ৩০টি জেলার ৮৫টি এলাকা চিহ্নিত করে জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। ১৬ থেকে ৩০ মাস বয়সী মোট ৩৮ হাজার ৪৪০ জন শিশুর ওপর পরিচালিত এই জরিপে স্ক্রিনিং টুল হিসেবে প্রথমে ‘রেড ফ্লাগ’ পরে ‘এম-চ্যাট’ এবং সব শেষে ‘ডিএসএম-ফাইভ’ ব্যবহার করা হয়।
ডা. কুণ্ডু বলেন, ১০ বছরে আমাদের অনেক অর্জন এসেছে। আমার দৃষ্টিতে প্রথম অর্জন হলো ইনস্টিটিউট অব নিউরো ডিজঅর্ডার অ্যান্ড অটিজম (ইপনা) স্থাপন। দেশে ন্যাশনাল অটিজমের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। একইসঙ্গে আমাদের গবেষণা কার্যক্রম এগিয়ে চলছে। আমরা সর্বাত্মক কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের অন্যতম সাফল্য হলো, দুটি আন্তর্জাতিক কনফারেন্স আমরা করতে পেরেছি। একটি দেশে, আরেকটি ভুটানে করেছি।
দক্ষ জনশক্তির সংকট জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আমাদের যে পরিমাণ দক্ষ জনশক্তি দরকার, আমরা সেটি এখনও তৈরি করতে পারিনি। আমাদের আরও জনবল হলে আমরা আরও বিস্তৃত পরিসরে কাজ করতে পারব।
অনুষ্ঠানে বক্তারা জানান, দেশব্যাপী স্নায়ুবিকাশজনিত সমস্যাসমূহের সেবা প্রদানের জন্য দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা ও এই বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি। কারণ সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন বিশেষ শিশুদের নিয়ে তাদের অভিভাবকরা নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হন। এসব সমস্যা সমাধানে ইপনা বিভিন্ন জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। এরই একটি অংশ হিসেবে ইপনাতে উক্ত ৬ মাস মেয়াদী কোর্সের কার্যক্রম শুরু করে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শিশু অনুষদের ডিন ও ইপনার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক অধ্যাপক শাহীন আখতার। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত থেকে শুভেচ্ছা বক্তব্য পেশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. জাহিদ হোসেন, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মো: হাবিবুর রহমান দুলাল।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগীয় চেয়ারম্যান/অফিস প্রধান, পরিচালক (হাসপাতাল), ইপনার উপ-পরিচালক (প্রশাসন) ডা. সৈয়দা তাবাসসুম আলম ও ইপনার উপ-পরিচালক (একাডেমিক) ডা. কানিজ ফাতেমা প্রমুখ।