বন্যার্ত কোনো মানুষ স্বাস্থ্যসেবার অভাবে মারা যায়নি : স্বাস্থ্যমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৪৪ পিএম, ২৭ জুন,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ১২:১২ এএম, ১৪ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, চলমান বন্যা পরিস্থিতিতে সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যার্ত কোনো মানুষ এখন পর্যন্ত না খেয়ে বা স্বাস্থ্যসেবার অভাবে মারা যায়নি। এটাই হচ্ছে সরকারের বড় প্রাপ্তি।
আজ সোমবার দুপুরে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের সম্মেলন কক্ষে সিলেট বিভাগের বন্যা পরিস্থিতি, ত্রাণ ও স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় সভায় এমন কথা বলেন তিনি।
এ সময় মন্ত্রী আরো বলেন, বন্যার শুরু থেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ ও সরাসরি ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সকল স্তরের প্রশাসনসহ বিভিন্ন দফতর এবং আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন বন্যাকবলিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। তার পরিপ্রেক্ষিতে সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে বন্যার্ত অসহায় মানুষের সহযোগিতায় ঝাঁপিয়ে পড়েন। এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এবারের ভয়াবহ বন্যায় সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পর্যন্ত পানি ঢুকে যায়। নিচতলায় বিভিন্ন কক্ষে ৩ হাত পরিমাণ পানি ছিল। জেনারেটর রুমে পানি ঢুকে পড়ায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা কিছুটা ব্যাহত হয়। তবে আমরা খবর পাওয়ার সাথে সাথে তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকা থেকে বিকল্প জেনারেটরের ব্যবস্থা করে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখার ব্যবস্থা করি। যার ফলে ওসমানী হাসপাতালে রোগীদেরকে স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার ক্ষেত্রে কোনো ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়নি। স্থানীয় প্রশাসন ও বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ছিল এবং যে সময় যা যা দরকার, যে চাহিদা সেগুলো সরকারের পক্ষ থেকে পূরণ করেছি। এ সময় তিনি সেনাবাহিনী, পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন, সিলেট সিটি করপোরেশন- যারা বন্যার্ত মানুষের কল্যাণে কাজ করছেন তাদের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরো বলেন, অনেকেই আমাদের সমালোচনা করছেন। কেউ সমালোচনা করতেই পারে। তবে যারা সমালোচনা বেশি করেন তারা কাজ কম করেন। আর যারা কাজ করেন তারা কারো সমালোচনা করার সময় পান না।
মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, আমরা যেভাবে বিগত সময়ে করোনা মোকাবিলা করেছি, যেভাবে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছি, ঠিক সেভাবে বন্যাপরবর্তী রোগবালাই ছড়ালে সেগুলোও মোকাবিলা করার সকল প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। বন্যাকবলিত প্রত্যেক জেলা-উপজেলায় মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে এবং প্রতিটি টিম জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আর্ত মানবতার সেবায় মাঠে কাজ করছে।
মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে সিলেটে ১৪০টিরও বেশি মেডিক্যাল টিম কাজ করছে। প্রস্তুত রয়েছে আরো দুই হাজারের বেশি কর্মী। বন্যাকবলিত এলাকায় কমিউনিটি ক্লিনিক, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও হাসপাতালে সৃষ্ট সমস্যা নিরসনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
তিনি জানান, বন্যার্ত মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ স্থানীয় প্রশাসনের কাছে ইতিমধ্যে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ বিষয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই বলে জানান মন্ত্রী। এর আগে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক গতকাল সোমবার সকালে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারযোগে রওয়ানা হয়ে প্রথমে সুনামগঞ্জে ও পরে সিলেটে আসেন। হেলিকপ্টারে চড়ে তিনি দুই জেলার বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন। এ সময় তার সাথে ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা: আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম। সকাল ১১টার দিকে তিনি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন। পরে সেখান থেকে মন্ত্রী সরাসরি যান সিলেট বিভাগের সবচেয়ে বড় হাসপাতাল ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিভাগীয় ও জেলা কর্মকর্তাদের সাথে করণীয় প্রসঙ্গে মতবিনিময় সভায় অংশ নেন তিনি। এসময় সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা: আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) হিমাংশু লাল রায়, ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া, সিলেটের জেলা প্রশাসক মো: মজিবুর রহমান, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদসহ স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরে মন্ত্রী হাসপাতাল প্রাঙ্গণেই বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সিলেট ও সুনামগঞ্জের প্রায় ৭ হাজার বন্যার্ত মানুষের মাঝে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হয়।