মিথ্যা বানানোর কারখানা বিএনপি : প্রধানমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:০৪ পিএম, ২৩ জুন,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০৯:০০ এএম, ১৬ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
বিএনপি মিথ্যা কথা বলা ও বানানোর কারখানা বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বন্যায় বিএনপি নেতারা কাউকে সহায়তা দেয়নি। ঢাকায় বসে বসে কথা বলছে। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা দুর্গম এলাকায় গিয়ে খাদ্য বিতরণ করছে। এটা নিয়েও তারা সমালোচনা করছে। এটাই তাদের চরিত্র।
আজ বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ‘আর রাজনীতি করবে না’ মুচলেকা দিয়ে তারেক জিয়া বিদেশে গেছেন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির এক নেতা বলেছেন তারেক রহমানকে দেশে ফিরতে দেওয়া হয় না। সে তো সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা বলেছে। ২০০৭ সালে তারেক জিয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে মুচলেকা দিয়েছিল, একেবারে লিখিত দলিল যে সে আর রাজনীতি করবে না। এই শর্তে সে কারাগার থেকে মুক্তি নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমায়। এটা তো বিএনপির নেতাদের ভুলে যাওয়ার কথা না। তাকে তো কেউ বিতাড়িত করেনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি শুনলাম, খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক জিয়া স্লোগান দেয়- পঁচাত্তরের পরাজিত শক্তি। এর মধ্যে দিয়ে এটাই প্রমাণ করেছে, তার বাপ যে পাকিস্তানের দালাল ছিল, তার মা-ও যে পাকিস্তানি দালাল হিসেবেই ছিল এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে সম্পূর্ণ নস্যাৎ করতে চেয়েছিল, আদর্শগুলো একে একে মুছে ফেলেছিল, ইতিহাস মুছে ফেলেছিল, জাতিয় পিতার নামটা মুছে ফেলেছিল। এটা তো খুব স্বাভাবিক যে এই স্লোগান দেবে। পাকিস্তানি সেনাদের পদলেহন করে চলাটাইতো তাদের অভ্যাস। তারা তো স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাস করে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গুম-খুন এটাতো জিয়াউর রহমানই শুরু করে দিয়েছিল সেই পঁচাত্তর সালের পর যখন সে রাষ্ট্রপতি হয়। খালেদা জিয়া এসেও তো আমাদের কত নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছে। এরশাদের আমলেও তো আমাদের নেতা-কর্মী নির্যাতিত হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণ থাকতে হবে বলে, কালকে আমি বলেছিলাম, কারা অংশগ্রহণ করবে। কে করবে অংশগ্রহণ? অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীর পকেট থেকে যে দল সৃষ্টি হয়, দুর্নীতি-খুন-হত্যা-অস্ত্র চোরাচালানের দায়ে যে দলের নেতারা সাজাপ্রাপ্ত আসামি এবং তারা তো পলাতক।
আওয়ামী লীগের ইতিহাস তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের ইতিহাস আর বাংলাদেশের ইতিহাস, একই ইতিহাস। কারণ ১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই সংগ্রাম শুরু হয়। তখন মাওলানা ভাসানী সভাপতি, সামসুল হক সাহেব সাধারণ সম্পাদক এবং কারাগারে বন্দি শেখ মুজিবকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব দিয়ে এই সংগঠন গড়ে তোলা হয়। এই সংগঠন গড়ার শুরু থেকেই এ দেশের মানুষের অধিকার নিয়েই সংগ্রাম শুরু।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ও ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণ করে তিনি বলেন, এই সংগ্রামের পেছনেও কিন্তু আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।'
তিনি আরও বলেন, '৫৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। সরকার গঠন করেই ৫২'র ভাষা আন্দোলনের যারা জীবন দিয়েছেন, সেই ২১শে ফেব্রুয়ারিকে শহীদ দিবস ঘোষণা করে। যেখানে এই গুলি চলেছে সেখানে শহীদ মিনার নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করে, অর্থ বরাদ্দ দেয় বাজেটে এবং নির্মাণ কাজও শুরু করে।'
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'এ দেশে গণতন্ত্র কিংবা গণতন্ত্রের ধারা কখনো অব্যাহত থাকতে পারেনি। ৫৮ সালে ৭ অক্টোবর আইয়ুব খান মার্শাল ল' জারি করে। ১২ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে নিয়ে যায়। মার্শাল ল' জারি করার সময় আইয়ুব খান ছিল সেনাপ্রধান, নিজেকে রাষ্ট্রপতিও ঘোষণা করেন। একাধারে সেনাপ্রধান, তারপর আবার রাষ্ট্রপতি। সমস্ত রাজনীতি নিষিদ্ধ, আওয়ামী লীগ থেকে শুরু করে সবই নিষিদ্ধ।
তিনি বলেন, ১৯৫৭ সালে কাগমারি কনফারেন্স হয়। সেটা ভালোভাবে হয়ে গেলেও সেখানে কিছু বিষয় নিয়ে মওলানা ভাসানী প্রশ্ন তোলেন এবং আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করে নতুন দল গঠন করেন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি। যে মুহূর্তে আওয়ামী লীগ ভাঙলো তার পরপরই কিন্তু মার্শাল ল' জারি হলো।
তিনি আরও বলেন, ‘৬৪ সালে আইয়ুব খান রাজনীতি করার সুযোগ দেয়, কারণ তখন তিনি নিজেই একখানা দল তৈরি করে। সেই দল তৈরি করে বেসিক ডেমোক্রেসি নাম দিয়ে গণতন্ত্রে একটা ধোঁকাবাজি শুরু করে। সেই সময় আবার আওয়ামী লীগ রিভাইব করে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৬ দফা দেওয়ার পরপরই আওয়ামী লীগের একটি কনফারেন্স হয়। সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে সভাপতি এবং তাজউদ্দীন আহমেদকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি গঠন করা হয়। তার পরপরই তিনি (বঙ্গবন্ধু) গ্রেপ্তার হয়ে যান। কিন্তু আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করা, একটা সংগঠনকে গড়ে তোলা, সেখানে একটি সংগঠনের আদর্শ নিয়ে সুসংগঠিত করা- এটাই তিনি সবসময় করে এসেছেন।
তিনি বলেন, 'আইয়ুবের পতনের পর ইয়াহিয়া খান আরেক মিলিটারি ডিকটেটর ক্ষমতায় আসে। সে নির্বাচন দিয়েছিল কতগুলো শর্ত সাপেক্ষে। সেই শর্ত মেনেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব নির্বাচনে যান।'
তিনি আরও বলেন, ‘সে সময় আমাদের এ দেশের অনেক রাজনৈতিক দল সেই নির্বাচনের বিরোধিতা করেছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ কিন্তু কখনো কোনো নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায়নি। নির্বাচনে সব সময় অংশগ্রহণ করেছে এবং সেখানে সাফল্যও এসেছে।’
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'এই দেশের কিছু দালাল সব সময়ই ছিল। একটা স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে মনে হয় যেন তাদের কোনো দিন-ই কোনো শান্তিই ছিল না। এই হচ্ছে সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের বিষয়। কাজেই চক্রান্তটা শুরু থেকেই চলতে থাকে।'
বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় ৪ নেতাকে হত্যার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘৭৫ এর জাতীয় পিতাকে হত্যার পর খুনি মুশতাক সরকার গঠন করে বেআইনিভাবে, সংবিধানের বিরুদ্ধে, জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দেয়। ৭৫ এর পর থেকে ১৯টার উপরে ক্যু হয় বাংলাদেশে। যেখানে বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হয় এ দেশ, এ দেশের মানুষ।’
তিনি আরও বলেন, 'মার্শাল ল' দিয়ে শকুনের খোঁচায় ক্ষতবিক্ষত করা হয় আমাদের সংবিধানকে। যেহেতু সংবিধানকে লঙ্ঘন করে, আর্মি রুলস লঙ্ঘন করে জিয়া ক্ষমতা দখল করেছিল, কাজেই সেই সংবিধানকেই মার্শাল অর্ডিন্যান্স দিয়ে বারবার পরিবর্তন করা হয় এবং পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সেটাকে জায়েজ করার চেষ্টা করা হয়।