পদ ও বেতন বৈষম্যের শিকার ১৪ হাজার সরকারি কর্মচারী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:২১ পিএম, ২০ জুন,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ০৮:৩৮ এএম, ১৩ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
সচিবালয়ে কর্মরত প্রধান সহকারী ও উচ্চমান সহকারীসহ সমপদের কর্মকর্তাদের পদ ও বেতন স্কেল উন্নীত করে করা হয় ‘প্রশাসনিক কর্মকর্তা’ ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা। কিন্তু দীর্ঘ ২৫ বছরেও দেশের সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন অধিদফতর ও দফতরে কর্মরত সমপদের প্রায় ১৪ হাজার কর্মচারীকে পদ ও বেতন স্কেল থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে। শুধু তাই নয়, এই বৈষম্যের কারণে অধিদফতরগুলোর প্রধান সহকারী ও উচ্চমান সহকারীর নিচের পদের (ফিডার পদধারী) আরও ৫০ হাজার কর্মচারীও পদোন্নতি বঞ্চিত হচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ওই সময়ের সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের (বর্তমানে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়) এক আদেশে সচিবালয়ে কর্মরত সব মন্ত্রণালয়ের প্রধান সহকারী, শাখা সহকারী, উচ্চমান সহকারী, বাজেট পরীক্ষক ও সাঁটলিপিকার পদগুলোকে ১৩ ও ১৪তম গ্রেড থেকে ১০ম গ্রেডে ‘প্রশাসনিক কর্মকর্তা’ ও ‘ব্যক্তিগত কর্মকর্তা’ পদে উন্নীত করা হয়। পরবর্তীতে ২০০৯ সালের ২৮ জানুয়ারি সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) সচিবালয়, ২০০৮ সালের ২৫ মে সুপ্রিম কোর্ট ও ২০১৬ সালের ১৮ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) এসব পদগুলোকে পরিবর্তন করে ‘প্রশাসনিক কর্মকর্তা’ করা হয়। কিন্তু বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আওতাধীন অধিদফতর ও দফতরে কর্মরতদের পদ পরিবর্তন না করে কর্মচারীদের মধ্যে পদ ও বেতন বৈষম্যের সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে সচিবালয়ের ১৬তম গ্রেডের একজন কর্মচারী (অফিস সহকারী ও সমপদ) চাকরির পাঁচ বছর পূর্তিতে ১০ম গ্রেডের প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি পান। অথচ অধিদফতর ও দফতরের ১৬ গ্রেডের একজন কর্মচারীকে একই শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে ১৪তম এবং ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত পদোন্নতি না পেয়েই হতাশা নিয়ে চাকরি থেকে অবসরে যাচ্ছেন। বিগত ২৫ বছর আগে কর্মচারীদের মধ্যে সৃষ্ট এ বৈষম্য নিরসনের জন্য ১০ম ও ১১তম সংসদের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় চার বার সুপারিশ করা হয়। পদ ও বেতন স্কেল বৈষম্য নিরসনের দাবিতে বাংলাদেশ প্রশাসনিক কর্মকর্তা বাস্তবায়ন ঐক্য পরিষদের ব্যানারে বিগত সময়ে মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন ও কর্মবিরতিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি। তবে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশনায় এসব পদগুলোকে সচিবালয়ের মতো প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে পদনাম পরিবর্তন ও বেতন স্কেল উন্নীত করার জন্য ২০২১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি উপকমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু গত এক বছরের বেশি সময় এ বিষয়টি নিয়েও কোনও অগ্রগতি নেই।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর সরকারি কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. বেলাল হোসেন বলেন, অধিদফতর ও দফতরের প্রধান সহকারী ও উচ্চমান সহকারী পদগুলো সংস্থাপন ক্যাটাগরির পদ। জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী পদগুলোর ১৪তম ও ১৩তম বেতন গ্রেডভুক্ত পদ এবং সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক ডিগ্রি। তাছাড়া পদগুলোর প্রায় ৮০ শতাংশ পদ ১৬তম বেতন গ্রেডভুক্ত অফিস সহকারী ও সমপর্যায়ের পদ থেকে পদোন্নতিযোগ্য। অথচ পদ ও বেতন বৈষম্য দূর করা হয়নি দীর্ঘ দিনেও।
বৈষম্য নিরসনের বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ ও অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মো. নবীরুল ইসলাম বলেন, অনেকগুলো ইস্যু, সব বিষয় সব সময় মনে থাকে না। এক সময় অফিসে চলে আসেন। সুনির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যাবে। এই বিষয়ে দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (কল্যাণ শাখা) মো. আব্দুর রউফ মিয়া বলেন, ‘অফিসিয়াল কোনও বিষয়ে তথ্য চাইতে হলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি কমিটি আছে, কমিটিই শুধু তথ্য দিতে পারবে। আপনি অতিরিক্ত সচিব প্রশাসনের সঙ্গে আলাপ করতে পারেন।