নিজ বিধিবিধান নিজেই মানছে না জনপ্রশাসন!
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৫১ পিএম, ২৯ মে,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ০৭:৪২ এএম, ১৩ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
ডেটা এন্ট্রি/কন্ট্রোল অপারেটররা ১৯৮৫ সালের টেকনিক্যাল বিধিতে নিয়োগপ্রাপ্ত, যা সংশোধনের মাধ্যমে ২০১৯-এ প্রতিস্থাপিত হয়েছে। নিজস্ব বিধিবিধান থাকলেও তারা পদোন্নতি চান সচিবালয়ের নিয়োগ বিধিমালার আওতায়। ডেটা এন্ট্রি/কন্ট্রোল অপারেটরদের এমন অযৌক্তিক প্রস্তাব ২০০৭ ও ২০১২ সালে ফিরিয়ে দিয়ে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। অথচ নিজেদের সিদ্ধান্তে শেষ পর্যন্ত অটল থাকতে পারেনি তারা। খামখেয়ালিপনার দারুণ এক উদাহরণ সৃষ্টি করে সংস্থাটি। যে কর্মকর্তার স্বাক্ষরে ২০১২ সালে ‘এক বিধির লোক আরেক বিধিতে প্রবেশের সুযোগ নেই’ বলে মতামত দিয়েছিল, সেই কর্মকর্তার অধীনেই নিজেদের মত পরিবর্তন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। শুধু তা-ই নয়, নিজেদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে উদাহরণ সৃষ্টি করতে গিয়ে আদালতে মামলা থাকাবস্থায় বাংলাদেশ সচিবালয় (ক্যাডার বহির্ভূত গেজেটেড কর্মকর্তা এবং নন-গেজেটেড কর্মচারী) নিয়োগ বিধিমালা ২০১৪ সংশোধন করে নতুন গেজেট জারি করে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাটি। তারা (জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়) সচিবালয় নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন করে অন্য বিধিতে নিয়োগপ্রাপ্তদের এ বিধিতে যুক্ত করে। ফলে মামলা জটিলতায় আটকে আছে সচিবালয় নিয়োগ বিধিমালায় নিয়োগপ্রাপ্তদের পদোন্নতি।
এদিকে, পদোন্নতি পেতে দেরি হওয়ায় বর্তমানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগে শূন্যপদ তৈরি হয়েছে, যা দীর্ঘদিন ধরে চলমান। পদ শূন্য থাকায় প্রশাসনিক কাজে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ সচিবালয় নিয়োগ বিধিমালা ১৯৯৮ এর সংশোধন করা হয় ২০০৬ সালে। এ নিয়োগ বিধিতে কম্পিউটার অপারেটর ও ডেটা এন্ট্রি অপারেটর পদ দুটিতে কর্মরত কর্মচারীদের বাংলাদেশ সচিবালয় নিয়োগ বিধিমালা (ক্যাডার বহির্ভূত গেজেটেড কর্মকর্তা এবং নন-গেজেটেড কর্মচারী) ২০০৬ এ প্রবেশের কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টি স্পষ্ট করে ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৭ এবং ৩ এপ্রিল ২০১২ সালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি- ১ শাখা থেকে চিঠির মাধ্যমে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু নিজেদের দেওয়া সিদ্ধান্ত ভেঙে প্রথমে ২০১৪ সালে প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে এবং পরবর্তীতে ২০২০ সালে ব্যক্তিগত কর্মকর্তা পদে পদোন্নতির সুযোগ অন্তর্ভুক্ত করে বাংলাদেশ সচিবালয় নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন করে গেজেট প্রকাশ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এ সংশোধনী গেজেটে ‘বাংলাদেশ সচিবালয় বিধিমালা’র আওতায় নিয়োগপ্রাপ্তদের মারাত্মকভাবে বঞ্চিত করা হয়। সংক্ষুব্ধরা সচিবালয় নিয়োগ বিধিমালার বিষয়ে আদালতে দীর্ঘদিন ধরে মামলা চালিয়ে আসছিলেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে চলমান মামলা থাকাবস্থায় নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন করায় তার ওপর আদালত তিন মাসের স্থগিতাদেশ দিয়েছেন।
সূত্রে আরও জানা যায়, বাংলাদেশ সচিবালয় (ক্যাডার বহির্ভূত গেজেটেড কর্মকর্তা এবং নন-গেজেটেড কর্মচারী) নিয়োগ বিধিমালা, ২০২০ (সংশোধিত) প্রকাশিত হওয়ার পর প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে ১০৪/২০২০ মামলা চলমান থাকা অবস্থায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৫ নভেম্বর ২০২০ সালে বাংলাদেশ সচিবালয় (ক্যাডার বহির্ভূত গেজেটেড কর্মকর্তা এবং নন-গেজেটেড কর্মচারী) নিয়োগ বিধিমালা, ২০১৪ সংশোধন করে নতুন গেজেট জারি করে। যেখানে টেকনিক্যাল নিয়োগ বিধিতে (সরকারি প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার পার্সোনাল নিয়োগ বিধিমালা ২০১৯) নিয়োগপ্রাপ্ত ডেটা এন্ট্রি/কন্ট্রোল অপারেটরদের ব্যক্তিগত কর্মকর্তার ফিডার পদে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এখানে টেকনিক্যাল নিয়োগ বিধিতে (সরকারি প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার পার্সোনাল নিয়োগ বিধিমালা ২০১৯) নিয়োগপ্রাফত ডেটা এন্ট্রি/কন্ট্রোল অপারেটরদের নিজস্ব নিয়োগ বিধি থাকার পরও সচিবালয় নিয়োগ বিধিতে তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এখানে বলে রাখা ভালো, টেকনিক্যাল নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন হওয়ায় সরকারি সব দফতরের ডেটা এন্ট্রি অপারেটররা নিয়োগ বিধিমালা- ১৯৮৫ বিধিতে নিয়োগপ্রাপ্ত, যা পরবর্তীতে সংশোধন হয়ে নিয়োগ বিধিমালা- ২০১৯ নামে প্রতিস্থাপিত হয়।
ডেটা এন্ট্রি/কন্ট্রোল অপারেটর নিয়োগে সংশোধিত বিধিতে বলা হয়েছে, “এই বিধির অধীনে নিয়োগপ্রাফতদের এবং উহার ধারাবাহিকতায় প্রাফত প্রশিক্ষণ, শিক্ষানবিশসহ চাকুরীতে স্থায়ীকরণ, পদোন্নতি ও অর্জিত অধিকারসমূহ এমনভাবে চলমান থাকবে যেন উহা এই বিধিমালার বিধান অনুযায়ী প্রাফত ও অর্জিত হয়েছে।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, নিজস্ব নিয়োগ বিধিতে শতভাগ পদোন্নতির সুযোগের পরও টেকনিক্যাল নিয়োগ বিধিতে নিয়োগপ্রাপ্তদের ৬০ শতাংশ পদ সচিবালয় নিয়োগ বিধিতে পদোন্নতির সুযোগ দেওয়া হয়েছে কেন? ২০০৭ ও ২০১২ সালে টেকনিক্যাল নিয়োগ বিধিতে নিয়োগপ্রাপ্তদের সচিবালয় নিয়োগ বিধিতে প্রবেশের সুযোগ নেই, সাফ জানিয়ে দেওয়ার পরও কার স্বার্থে তাদের ৬০ শতাংশ পদ দিচ্ছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়? নিজ বিধিতে নিয়োগপ্রাপ্তদের কেন বঞ্চিত করে অন্য বিধির জনবলদের গুরুত্ব দিচ্ছে সংস্থাটি— এমন প্রশ্ন রেখেছেন সচিবালয় নিয়োগ বিধির নিয়োগপ্রাপ্তরা।
সচিবালয় নিয়োগ বিধিমালায় নিয়োগপ্রাপ্ত যারা : বাংলাদেশ সচিবালয় (ক্যাডার বহির্ভূত গেজেটেড কর্মকর্তা এবং নন-গেজেটেড কর্মচারী) নিয়োগ বিধিমালা, ১৯৯৮, ২০০৬, ২০১৪ ও ২০১৪ (সংশোধিত ২০২০) এ পদসমূহ হচ্ছে- উপসচিব (ক্যাডার বহির্ভূত), সিনিয়র সহকারী সচিব (ক্যাডার বহির্ভূত), সহকারী সচিব (ক্যাডার বহির্ভূত), প্রশাসনিক কর্মকর্তা, ব্যক্তিগত কর্মকর্তা, প্রটোকল অফিসার, সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক, অফিস সহায়ক ও অন্যান্য। এ বিভাগের সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক উক্ত বিধিতে নিয়োগপ্রাপ্ত। দ্য কম্পিউটার পারসোনাল (গভরমেন্ট অ্যান্ড লোকাল অথরিটিস) রিক্রুটমেন্ট রুলস ১৯৮৫, যা ২০১৯ এ প্রতিস্থাপিত। এ বিধিমালার পদসমূহ হচ্ছে- সিস্টেম ম্যানেজার, মুখ্য রক্ষণাবেক্ষণ প্রকৌশলী, সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট, সিনিয়র রক্ষণাবেক্ষণ প্রকৌশলী, সিস্টেম এনালিস্ট, সিনিয়র প্রোগ্রামার, প্রোগ্রামার, সহকারী প্রোগ্রামার, সিনিয়র কম্পিউটার অপারেটর, সহকারী রক্ষণাবেক্ষণ প্রকৌশলী, ডেটা এন্ট্রি/কন্ট্রোল সুপার ভাইজার, কম্পিউটার অপারেটর, সিনিয়র ডেটা এন্ট্রি/কন্ট্রোল অপারেটর, ডেটা এন্ট্রি/কন্ট্রোল অপারেটর। এ বিভাগের কম্পিউটার অপারেটর ও ডেটা এন্ট্রি/কন্ট্রোল অপারেটর উক্ত বিধিতে নিয়োগপ্রাপ্ত। এছাড়া বিভাগের জন্য একটি স্বতন্ত্র নিয়োগ বিধিমালা রয়েছে। ২০০৭ সালে ১৪ ফেব্রুয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব খোদেজা আক্তার খানম নিয়োগ বিধিমালা, ২০০৬ এ প্রশাসনিক কর্মকর্তার ফিডার পদে অন্তর্ভুক্ত হবে কি না, সে বিষয়ে মতামত দেন।
সেখানে উল্লেখ করা হয়, ‘এই প্রসঙ্গের আলোকে জানানো যাচ্ছে যে, দ্য কম্পিউটার পারসোনাল (গভর্নমেন্ট অ্যান্ড লোকাল অথরিটিস) রিক্রুটমেন্ট রুলস ১৯৮৫ অনুযায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারীগণ বাংলাদেশ সচিবালয় (ক্যাডার বহির্ভূত গেজেটেড কর্মকর্তা এবং নন-গেজেটেড কর্মচারী) নিয়োগ বিধিমালা ২০০৬-এর আওতায় প্রশাসনিক কর্মকর্তার ফিডার পদধারী হওয়ার কোনো অবকাশ নেই।
পরবর্তীতে ২০১২ সালে ৩ এপ্রিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন দ্বিতীয়বারের মতো চিঠিতে উল্লেখ করেন, এক নিয়োগ বিধিমালার আওতায় নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ অন্য নিয়োগ বিধিমালার আওতায় পদোন্নতি পাওয়ার বিধিগত সুযোগ নেই। যেহেতু উল্লিখিত ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাগণ বাংলাদেশ সচিবালয় (ক্যাডার বহির্ভূত গেজেটেড ও নন-গেজেটেড কর্মকর্তা-কর্মচারী) নিয়োগ বিধিমালা, ২০০৬-এর আওতায় নিয়োগপ্রাপ্ত সেহেতু উক্ত ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা আইএমইডি’র বিদ্যমান নিয়োগবিধি ‘দ্য গেজেটেড অফিসারস (ইম্পিলিমেন্টেশন মনিটরিং অ্যান্ড ইভুলেশন ডিভিশন) রিক্রুটমেন্ট রুলস, ১৯৮৩’-এর আওতায় পদোন্নতি পাওয়ার জন্য বিবেচনা হবেন না। বর্ণিতবস্থায় নির্দেশক্রমে এই মর্মে মতামত দেয়া যাচ্ছে যে, আইএমইডির ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাগণকে উক্ত বিভাগের বিদ্যমান নিয়োগবিধি ‘দ্য গেজেটেড অফিসারস (ইম্পিলিমেন্টেশন মনিটরিং অ্যান্ড ইভুলেশন ডিভিশন) রিক্রুটমেন্ট রুলস, ১৯৮৩’-এর আওতায় সহকারী পরিচালকের ফিডার পদ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ নেই।
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালে ৩ এপ্রিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব হিসেবে মতামত দেয়া আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন বর্তমানে বিধি- ১ শাখার অতিরিক্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ‘বাংলাদেশ সচিবালয় (ক্যাডার বহির্ভূত গেজেটেড কর্মকর্তা এবং নন-গেজেটেড কর্মচারী) নিয়োগ বিধিমালা, ২০১৪’ প্রকাশিত হয় ২০১৪ সালের ৬ মার্চ। পরে এ বিভাগের ডেটা এন্ট্রি/কন্ট্রোল অপারেটররা (যারা ১৯৮৫ এর টেকনিক্যাল বিধি দ্বারা নিয়োগপ্রাপ্ত, যা পরবর্তীতে ২০১৯ নামে প্রতিস্থাপিত হয়) মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশনে ওই বছরের ৬ মে মামলা দায়ের করেন। মামলা নং- ৪২০৫/২০১৪। মামলায় ২০১৪ এর আগের কোনো নিয়োগ বিধিমালায় সুবিধা না থাকা সত্ত্বেও এবং টেকনিক্যাল বিধিতে নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ার পরও শুধুমাত্র ‘বাংলাদেশ সচিবালয় (ক্যাডার বহির্ভূত গেজেটেড কর্মকর্তা এবং নন-গেজেটেড কর্মচারী) নিয়োগ বিধিমালা ২০১৪’ তে প্রথমবারের মতো ডেটা এন্ট্রি/কন্ট্রোল অপারেটরদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে পদোন্নতির সুযোগ দেয়া হয়। তা সত্ত্বেও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা পদে পদোন্নতির সুযোগ দাবি করে ডেটা এন্ট্রি/কন্ট্রোল অপারেটরগণ উল্লিখিত মামলা দায়ের করেন। পদোন্নতির সুযোগ পেয়েও সচিবালয় নিয়োগ বিধিতে ৬০ শতাংশ পদ দখল করতে চাইছে। যেটা শুধু ‘অযৌক্তিকই নয় বরং অন্যায়’ বলে মনে করছেন ভুক্তভোগীরা।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মিজানুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ সচিবালয় নিয়োগ বিধিমালায় নিয়োগপ্রাপ্তদের সঙ্গে অন্যায় করেছে। সর্বপ্রথম টেকনিক্যাল বিধিতে নিয়োগপ্রাপ্তরা (ডেটা এন্ট্রি/কন্ট্রোল অপারেটর) ২০১৪ সালে মামলা করেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট বিভাগ তাদের পক্ষে রায় দেন। কিন্তু সচিবালয় নিয়োগ বিধিমালায় নিয়োগপ্রাপ্তদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের রায় বাতিল করে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। ওই বাতিল করা রায় এক্সিকিউট করে ২০২০ সালে সচিবালয় নিয়োগ বিধিমালা- ২০১৪ সংশোধন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এ সংশোধনের মাধ্যমেই ডেটা এন্ট্রি/কন্ট্রোল অপারেটরদের সচিবালয় নিয়োগ বিধিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এরপর সচিবালয় বিধিমালার নিজস্ব বিধির জনবলদের বঞ্চিত করে টেকনিক্যাল বিধি থেকে আসা ডেটা এন্ট্রি/কন্ট্রোল অপারেটরদের পদোন্নতি দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। যেখানে সচিবালয় বিধির জনবল দীর্ঘদিন ধরে পদোন্নতি বঞ্চিত ছিলেন, সেখানে টেকনিক্যাল বিধির জনবল অন্তর্ভুক্ত হয়েই পদোন্নতি পেয়ে যান।
তিনি আরও বলেন, সংশোধিত এ বিধিমালার ওপর পরবর্তীতে নিষেধাজ্ঞা দেয় আপিল বিভাগ। আপিল বিভাগের নিষেধাজ্ঞার পর সচিবালয় বিধিমালা ২০২০ এর আর কোনো ভিত্তি থাকে না। সেক্ষেত্রে নিজস্ব বিধির লোকজনের পদোন্নতির ক্ষেত্রে সুযোগ পাওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে সেটা করেনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। নিজস্ব বিধির লোকজনের পদোন্নতির পর যদি কোনো পদ খালি থাকে, তাহলে অন্য বিধি থেকে আসাদের পদোন্নতি দিতে পারত সংস্থাটি। যে যে-ই বিধিমালায় চাকরিতে যোগদান করেছেন তার পদোন্নতি, নিয়োগ সবকিছু নিজস্ব বিধিমালায় নিয়ন্ত্রিত হবে মর্মে আপিল বিভাগের অসংখ্য জাজমেন্ট আছে। এসবের কিছুই আমলে নেয়নি মন্ত্রণালয়। সর্বশেষ আদালতের সিদ্ধান্ত হচ্ছে, এ মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ২০২০ সালের সংশোধিত সচিবালয় বিধিমালায় কোনো ধরনের পদোন্নতি দেয়া যাবে না। এ সংশোধিত বিধিমালার ওপর আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, বলেন আইনজীবী মো. মিজানুর রহমান। এ বিষয়ে জানতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম এবং বিধি অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তাদের দপ্তর থেকে বলা হয়, বর্তমানে তারা দেশের বাইরে আছেন। পরে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্বে থাকা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. আনিছুর রহমান মিঞার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।
তিনি বলেন, আমি ওই সেক্টরে কাজ করিনি। যেহেতু দায়িত্বে আছি, সেহেতু এ বিষয়ে মিডিয়া সেল থেকে তথ্য নিতে হবে। বিষয়টি না জেনে বলা যাবে না। মিডিয়া সেল থেকে জেনে পরে আপনাকে বলতে পারব। মিডিয়া সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অতিরিক্ত সচিব মো. আবুল হাছানাত হুমায়ুন কবীরের সঙ্গেও এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ছুটিতে থাকায় তার মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনকে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।