শাস্তির মুখে পড়ছেন আমির হামজার ছেলে সেই উপসচিব
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:২৭ পিএম, ১০ মে,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ০৩:২২ পিএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
বাবা আমির হামজাকে স্বাধীনতা পুরস্কার পাওয়াতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে আবেদন করার অভিযোগে শাস্তির মুখে পড়তে যাচ্ছেন ছেলে প্রশাসনের কর্মকর্তা মো. আছাদুজ্জামান। আছাদুজ্জামান উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা, তিনি বর্তমানে খুলনা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
আজ মঙ্গলবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (শৃঙ্খলা ও তদন্ত অনুবিভাগ) ফরিদ উদ্দিন আহমদ বলেন, আছাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। আরও কিছু প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, আছাদুজ্জামানের নামে বিভাগীয় মামলা করতে খসড়া অভিযোগনামা ও অভিযোগ বিবরণী জরুরিভিত্তিতে পাঠাতে সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ (এপিডি) অনুবিভাগকে চিঠি দিয়েছে জনপ্রশাসনের শৃঙ্খলা-১ অধিশাখা। এপিডি অনুবিভাগ অভিযোগ বিবরণী পাঠালেই তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হবে। গত ১৫ মার্চ স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের তালিকা প্রকাশ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ‘সাহিত্য’ ক্ষেত্রে মরহুম আমির হামজাকে রাষ্ট্রীয় এ সর্বোচ্চ পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়। তালিকা ঘোষণার পরই আমির হামজাকে নিয়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। খ্যাতিমান লেখক-কবি-সাহিত্যিকদের বাইরে একেবারে অচেনা আমির হামজার সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কার পাওয়া নিয়ে সমালোচনায় সরব হয়ে ওঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। ২০১৯ সালের ২৩ জানুয়ারি ৮৭ বছর বয়সে আমির হামজা মারা যান। বলা হচ্ছে, আমির হামজা একজন মরমী গায়ক, গান লিখেছেন। তার তিনটি বই প্রকাশিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ২০১৮ সালে মাগুরার শ্রীপুরের সারথি ফাউন্ডেশন থেকে ‘বাঘের থাবা’ নামে একটি বই প্রকাশিত হয়। পরে ২০১৯ সালে এ বইয়েরই গান অংশ নিয়ে বের হয় আরেকটি বই, ‘পৃথিবীর মানচিত্রে একটি মুজিব তুমি’। এছাড়া ‘একুশের পাঁচালি’ নামেও তার একটি বই প্রকাশিত হয়েছে বলে জানা গেছে। মূলত সরকারের উপসচিব মো. আছাদুজ্জামান তার সাহিত্যিক বাবার নাম স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য প্রস্তাব করেন। এতে সমর্থন দিয়েছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ।
একই সঙ্গে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, প্রয়াত আমির হামজা মো. শাহাদাত হোসেন ফকির নামে এক ব্যক্তিকে হত্যা মামলার যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন। ১৯৭৮ সালের ঘটনা এটা। গরুর ক্ষেতের ফসল খাওয়ার ঘটনা নিয়ে খুনের এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আমির হামজা ও তার ভাইসহ মোট ৬ জনের কারাদন্ড হয়। আট বছর জেল খাটার পর ১৯৯১ সালের মাগুরার এক মন্ত্রীর সহায়তায় বেরিয়ে আসেন আমির হামজা। মূলত জাতীয় পুরস্কার সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি স্বাধীনতা পুরস্কারের তালিকা চূড়ান্ত করে থাকে। এ কমিটির আহ্বায়ক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কমিটির দুর্বলতা স্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, যারা আমির হামজার বিষয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সমালোচনার মুখে ১৮ মার্চ স্বাধীনতা পুরস্কারের তালিকার ‘সাহিত্য’ ক্যাটাগরি থেকে আমির হামজার নাম বাদ দিয়ে নতুন তালিকা প্রকাশ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এরপর আমির হামজাকে স্বাধীনতা পুরস্কার দিতে সুপারিশ করার বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষের কাছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জানতে চাওয়া হয়। পরে তাকে ভুল তথ্য দেয়া হয়েছে দাবি করে আছাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করে তরুণ কান্তি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠান। মো. আছাদুজ্জামান ২৪তম ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা। এরই মধ্যে তিনি বান্দরবান ও কুমিল্লা জেলার ম্যাজিস্ট্রেট, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ ও খুলনার পাইকগাছা উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি), সাতক্ষীরার সদর উপজেলা ও খুলনার তেরখাদা উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ঝিনাইদহ জেলার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক ও রাজস্ব) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০১৯ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি খুলনা জেলা পরিষদে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পদে যোগ দেন।