বাংলাদেশ থেকে হজযাত্রী নেয়ার অনুমতি পেল ফ্লাইনাস
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:১৬ পিএম, ১০ মে,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ০৫:৫২ এএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্সের পর তৃতীয় এয়ারলাইন্স হিসেবে বাংলাদেশের হজযাত্রী বহনের অনুমতি পেল সৌদি আরবভিত্তিক কম খরুচে এয়ারলাইন্স প্রতিষ্ঠান ফ্লাইনাস। এ বছর থেকেই এয়ারলাইন্সটি হজযাত্রী বহন করতে পারবে। সম্প্রতি বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ফ্লাইনাসকে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেয়। অনুমতিপত্রে ডিজিটালি (স্ক্যান করা) স্বাক্ষর করেছেন বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম. মফিদুর রহমান। বেবিচকের দায়িত্বশীল সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। গত ২০ এপ্রিল এ বিষয়ে সৌদি আরবের সিভিল এভিয়েশন অথরিটি থেকে বাংলাদেশের বেবিচককে একটি চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে বলা হয়, সৌদি আরবের হজ ও উমরাহ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ থেকে হজযাত্রী বহনের জন্য তৃতীয় এয়ারলাইন্স হিসেবে ফ্লাইনাসকে মনোনীত করা হয়েছে। সৌদির সিভিল এভিয়েশন হজযাত্রী পরিবহনে ফ্লাইনাসকে অনুমতি দেয়ার বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া আশা করছে। অনুমতি পাওয়া পর ফ্লাইনাস তাদের ফ্লাইট সংখ্যা এবং সময়সূচি ঘোষণা করবে।
বেবিচকের একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি বলেন, সম্প্রতি ফ্লাইনাসকে অনুমতি দিয়ে বেবিচকের ফিরতি চিঠিতে বলা হয়েছে, হজযাত্রী বহনে ফ্লাইনাসের ফ্লাইট পরিচালনায় বাংলাদেশের বেবিচকের কোনো আপত্তি নেই। বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের হজচুক্তি অনুযায়ী সৌদি আরবের ফ্লাইনাস ৫০ শতাংশ হজযাত্রী বহন করতে পারবে। এতে আরও বলা হয়, ফ্লাইনাস যদি কূটনীতিকভাবে সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে হজ ফ্লাইটের আবেদন করে সেক্ষেত্রে বেবিচক সেই আবেদনে অনুমোদন দেবে। করোনা সংকট কাটিয়ে দুবছর পর উন্মুক্ত হওয়া হজে বাংলাদেশ থেকে এ বছর ৫৭ হাজার ৮৫৬ জন যেতে পারবেন। সৌদি সরকারের চুক্তি অনুযায়ী, যাত্রীদের ৫০ শতাংশ বহন করবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স আর বাকি অর্ধেক সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্স (সাউদিয়া)। এবার সৌদি আরবের অংশের ৫০ ভাগ যাত্রীতে সাউদিয়ার সঙ্গে ভাগ বসাবে ফ্লাইনাস। তবে তাদের অনুপাত কেমন হবে সেটি জানায়নি সৌদি। এ বিষয়ে হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, মাত্র দুটি এয়ারলাইন্সকে দায়িত্ব দিলে ভাড়া যেমন বেশি থাকে, তেমনি যাত্রীরা ভালো সেবা থেকে বঞ্চিত হন। তাই আমরা দীর্ঘদিন ধরে অন্য কয়েকটি এয়ারলাইন্সকে অনুমতি দেয়ার আবেদন জানিয়ে এসেছি। এবার হজযাত্রীদের বিমানভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে জনপ্রতি এক লাখ ৪০ হাজার টাকা। এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বরাবরই একে অতিরিক্ত বলে মন্তব্য করেছে। এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বছরের পর বছর এ দুই এয়ারলাইন্সকে যাত্রী নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়ার কারণে তারা ‘মনোপলি’ মার্কেট তৈরি করে অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে। অথচ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে সরকারি-বেসরকারি তিন-চারটির বেশি এয়ারলাইন্স হজযাত্রী বহনের দায়িত্ব পায়। সবকিছু বিবেচনায়ই এবার ফ্লাইনাসকে অনুমতি দিয়েছে বেবিচক।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরব ছাড়াও ইয়েমেনের ইয়েমেনিয়া (ইয়েমেন এয়ারওয়েজ), কাতারের কাতার এয়ারওয়েজ, বাহরাইনের গালফ এয়ার, সৌদি আরবের ফ্লাইনাস, কুয়েতের কুয়েত এয়ারলাইন্স, পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স (পিআইএ) বাংলাদেশের হজযাত্রী বহন করত। তখন এয়ারলাইন্সগুলোর মধ্যে কম ভাড়া নিয়ে প্রতিযোগিতা ছিল। ট্রাভেল এজেন্সিগুলো সুবিধা দিয়ে ইচ্ছেমতো এয়ারলাইন্সের টিকিট কেটে যাত্রীদের হজ প্যাকেজ অফার করত। তবে ২০১২ সালে হজের আগমুহূর্তে বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে একটি চুক্তি হয়। সেই চুক্তিতে বলা হয়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও সৌদি এয়ারলাইনস ছাড়া তৃতীয় কোনো এয়ারলাইন্স বাংলাদেশি হজযাত্রী বহন করতে পারবে না। এরপর থেকে এই দুই এয়ারলাইন্সের একচেটিয়া ব্যবসা শুরু হয়। ২০১৯ সালে সর্বশেষ হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ লাখ ২৮ হাজার টাকা। এবার শুধুমাত্র জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ৪০ হাজার টাকা। অথচ স্বাভাবিক সময়ে এয়ারলাইন্সগুলোর ঢাকা থেকে জেদ্দা-মদিনা রুটে আসা-যাওয়ার ভাড়া ৭৫ থেকে ৭৭ হাজার টাকা। বাংলাদেশে দুই এয়ারলাইন্স একচেটিয়া ব্যবসা করলেও পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর চিত্র এমন নয়। ভারতে প্রতিবছর সৌদি এয়ারলাইন্স ছাড়াও এয়ার ইন্ডিয়া, স্পাইস জেট, এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস ও ইন্ডিগো এয়ার হজযাত্রী বহন করে। পাকিস্তানে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স, সৌদি এয়ারলাইন্স ও শাহীন এয়ারলাইন্স যাত্রী বহন করে। ইন্দোনেশিয়া থেকে লায়ন এয়ার, গারুদা ইন্দোনেশিয়া ও সৌদি এয়ারলাইন্স যাত্রী বহন করে।