সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সন্ত্রাসী কায়দায় জবরদস্তি ফল - মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:২৯ পিএম, ২৮ এপ্রিল,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০৭:০৩ এএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
দেশের অবস্থা কোথায় গিয়েছে প্রশ্ন করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ফলাফলও সন্ত্রাসী কায়দায় জবরদস্তি করে ছিনিয়ে নিয়ে ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। এর বিরুদ্ধে আইনজীবীদের বেরিয়ে আসা উচিত ছিল।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর ইস্কাটনে লেডিস ক্লাবে পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ ও বিশিষ্ট নাগরিকদের সম্মানে বিএনপি আয়োজিত ইফতার মাহফিলে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ইফতার মাহফিলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন।
দেশের অবস্থা কোথায় গিয়েছে প্রশ্ন করে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা দেখেছেন বুধবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির যে নির্বাচন কিছুদিন আগে হয়েছিল, সেই নির্বাচনের কমিশনের প্রধানকে ফলাফল ঘোষণা করতে দেয়া হয়নি। তাকে অপমান করা হয়েছিল, সেজন্য তিনি পদত্যাগ করেছিলেন। তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আইনজীবী সমিতির কমিশনের কক্ষে ফলাফল তালাবদ্ধ করে রেখে দেয়া হয়েছিল। গতকাল আওয়ামী সন্ত্রাসীরা যারা জোর করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে আছে তারা একই কায়দায় জোর জবরদস্তি করে সন্ত্রাসী কায়দায় সেই ঘর ভেঙে ফলাফল ঘোষণা করেছে। অর্থাৎ আমরা এখনও যেখানে কিছুটা আশা করতাম ওই প্রতিষ্ঠানটিতে হাত দেয়া সম্ভব হয়নি। সেখানেও সন্ত্রাসী কায়দায় দখল করে নিয়েছে। পেশাজীবীদের কাছে আহবান রাখতে চাই, এই বিষয়গুলো নিয়ে আপনাদের প্রতিবাদ করা দরকার। আজকে আইনজীবীদের বেরিয়ে আসা উচিত ছিল। এই ভয়াবহ অন্যায় সহ্য করা যাবে না। আইনজীবীদের উচিত ছিল প্রধান বিচারপতির কাছে যাওয়া এবং সারা বাংলাদেশের আইনজীবীদের প্রতিবাদ করা উচিত ছিল। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় ফ্যাসিবাদ যখন আক্রমণ করে তখন এইভাবে তারা প্রতিবাদকে রুদ্ধ করে দেয়। একই কায়দায় তারা রুদ্ধ করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, আপনারা কয়েকদিন আগে দেখেছেন একটা খেলার মাঠ যেখানে বাচ্চারা খেলে সেটা দখল করে নিয়ে ঘর করছে। সেটা নাকি তাদের সম্পত্তি। সেখানে প্রতিবাদ হয়েছে। পরিবেশবিদ যারা আছেন তারা আজকে প্রতিবাদ করেছেন। শিশুরা প্রতিবাদ করছে।
কয়েকদিন আগে দেখেছেন, ঢাকা কলেজের ছাত্র বলবো না, আওয়ামী সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যে সংঘর্ষ হয়েছে সেই সংঘর্ষে নিরীহ অসহায় দুজন নিহত হয়েছেন। সেখানে তারা বিএনপির নেতাকে গ্রেফতার করেছে। আমি ধন্যবাদ দিতে চাই, গণমাধ্যমকে তাদের তদন্তের মধ্যে দিয়ে যে সংবাদ পরিবেশন করেছেন সেখানে বেরিয়ে এসেছে তারা প্রত্যেকে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী ছিল। ছবি দিয়ে তারা প্রকাশ করেছে। আমি তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। আজকে শুনলাম পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে। তার আগে আমাদের নেতা মকবুলসহ আরও ২৪ জনের নাম দিয়ে মামলা করেছে। এ অবস্থা সারা দেশে। আজকে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন রয়েছে। নতুন আইন হচ্ছে গণমাধ্যমকর্মী আইন। এসব আইন দিয়ে কেউ যেন কোনো কথা বলতে না পারে সেই ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়েছে। শুধু তাই নয়, নিচের কোর্টে পাঁচ বছর দেয়ার পর ওপরের কোর্টে দশ বছর সাজা দেয়া হয়েছে। আজকে সরকারের নির্দেশ ছাড়া কোনো বিচার হয় না। সরকার যেভাবে বলে সেভাবে হয়। আমরা যারা রাজনীতি করছি, যারা গণতন্ত্রের জন্য কাজ করছি তাদের বেলায় এটা সবচেয়ে বেশি প্রযোজ্য হয়।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আজকে আমাদের দুঃখ হয়, লজ্জা হয়, আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রকাশ্যে বলেন, এখন স্যাংশন উঠানোর জন্য তাদেরকে ভারতের কাছে ধরনা দিতে হবে। কোন জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছি আমরা। আজকে বাংলাদেশের জাতীয় সমস্যার সমাধান করতে ভারতের কাছ থেকে আমাদের সাহায্য নিতে হবে। আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করার জন্য বিভিন্ন দেশকে এক জায়গায় নিয়ে আসা। সেটা করতে তারা ব্যর্থ হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে পেশাজীবীদের কাছে আহবান জানাই, আমাদের নেতা জাতীয় ঐক্যের আহবান জানিয়েছেন। আমাদের পক্ষ থেকে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে জাতীয় ঐক্যের আহবান আসছে। আসুন আমরা সবাই এই ভয়াবহ দানবকে প্রতিরোধ করার জন্য তাকে সরিয়ে সত্যিকার অর্থে জনগণের একটা সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই। আমাদের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন এদেরকে সরাতে হবে। তাদেরকে বলতে হবে তোমরা চলে যাও। তাদেরকে বলতে হবে চলে গিয়ে একটা নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করো। একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে আমাদের অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে।
ইফতার মাহফিলে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, ডা. এজেড এম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আযম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, প্রফেসর ডা. আব্দুল কুদ্দুস, সাহিদা রফিক, সাবেক সচিব ইসমাইল জবি উল্লাহ, বিমান বাহিনীর সাবেক প্রধান ফখরুল আযম, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. দিলারা চৌধুরী, ঢাবির সাবেক প্রোভিসি আফম ইউসুফ হায়দার, সাবেক সচিব আ ন হ আখতার হোসেন, সাবেক আইজিপি এমএ কাইয়ুম, ঢাবির অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, ঢাবি সাদা দলের আহবায়ক প্রফেসর লুৎফর রহমান, বিএনপির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ঢাবির শিক্ষক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়া, এসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্সের আহবায়ক প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, মহাসচিব প্রকৌশলী আলমগীর হাসিন আহমেদ, সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজী, আবদুল হাই সিকদার, এম আব্দুল্লাহ, কামাল উদ্দিন সবুজ, কাদের গনি চৌধুরী, ইলিয়াস খান, নুরুল আমীন রোকন, আমিরুল ইসলাম কাগজী, শহীদুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম আজাদ, খোন্দকার কাওছার হোসেন, ড্যাবের সভাপতি প্রফেসর হারুন আল রশিদ, মহাসচিব প্রফেসর আব্দুস সালাম, জাবির অধ্যাপক ড. শামসুল আলম সেলিম, ড. নজরুল ইসলাম, ড. নুরুল ইসলাম, ড. আমির হোসেন ভূইয়া, ড. আবদুর রহমান, বিএনপি নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, জেড খান রিয়াজ উদ্দিন নসু, শামীমুর রহমান শামীম, আবু নাসের মোহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, মাওলানা শাহ মোহাম্মদ নেছারুল হক, মাওলানা নজরুল ইসলাম, চিত্রনায়ক আশরাফ উদ্দিন উজ্জল, রোকেয়া চৌধুরী বেবী প্রমুখ।