পির সিন্ডিকেট : মানবাধিকার কমিশনের সুপারিশ নিয়ে হাইকোর্টের রুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:১৮ পিএম, ২৭ এপ্রিল,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ১২:৫৭ পিএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
ঢাকার আশুলিয়ার বাসিন্দা মুহম্মদ মুফিজুল ইসলামের দায়েরকৃত মামলা ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এবং কক্সবাজারের বাসিন্দা নুরুল ইসলামের দায়ের করা মামলা চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন থাকা সত্ত্বেও ওই দুই মামলার বিষয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদন ও সুপারিশ কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না মর্মে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। আইন মন্ত্রণালয়, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনসহ সংশ্লিষ্টদের আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আজ বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি জাফর আহমেদ এবং বিচারপতি কাজী জিনাত হকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই রুল জারি করেন। অ্যাডভোকেট ইলিয়াস আলী মন্ডল আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। আদালতে আজ রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট শিউলি খানম, অ্যাডভোকেট ইলিয়াস আলী মন্ডল ও অ্যাডভোকেট মাসুমা জামায়েল।
আদেশের বিষয়ে অ্যাডভোকেট ইলিয়াস আলী মন্ডল বলেন, রাজধানীর রাজারবাগ দরবার শরীফের পিরের বিরুদ্ধে যে প্রতিবেদন মানবাধিকার কমিশন প্রকাশ করেছে, সেখানে বলা হয়েছে ভুক্তভোগী মফিজুল ইসলাম ও নুরুল ইসলাম তাদের পির সাহেবের প্ররোচনায় হয়রানিমূলকভাবে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন। অথচ মফিজুল ইসলাম তার নিখোঁজ শ্যালকের সন্ধান চেয়ে অপহরণ মামলা করেছিলেন। পরে পুলিশ তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে হত্যা মামলা দায়ের করে হত্যাকারীদের শনাক্ত করেন। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন।
তিনি বলেন, মানবাধিকার কমিশন আইন অনুযায়ী, বিচারাধীন মামলা কমিশনের কার্যাবলীর অন্তর্ভুক্ত নয় এবং একই সঙ্গে অভিযুক্ত ব্যক্তির শুনানি গ্রহণ না করে কোনো সুপারিশ কমিশন পাঠাবে না। অথচ রিট আবেদনকারীর বক্তব্য না শুনে মানবাধিকার কমিশন আমার মক্কেলের মানবাধিকার লংঘন করেছেন। আদালত কমিশনের তদন্তকে কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না মর্মে রুল জারি করেছেন। এছাড়াও ভুক্তভোগী নুরুল ইসলামের দায়ের করা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল, চট্টগ্রামে মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় এবং উক্ত মামলার পলাতক আসামি জয়নাল, মলি হোসেন, জিন্নাত আলী কুতুবী ও আলাউদ্দিনের অভিযোগ কোনোরকম সত্যতা যাচাই না করেই মানবাধিকার কমিশন যে বিতর্কিত তদন্ত প্রতিবেদন করেছে সেটিকেও আমরা চ্যালেঞ্জ করেছি। মহামান্য হাইকোর্ট পৃথক রিট দুটির শুনানি অন্তে কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদনকে কেন কর্তৃত্ববহির্ভূত, বেআইনি ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না-এই মর্মে রুল জারি করেছেন।
গত ২১ এপ্রিল মানবপাচার মামলা চলমান থাকায় রাজারবাগ দরবার শরীফের পীর সাহেবের বিরুদ্ধে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত করাকে কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। রিট আবেদনের নথি থেকে জানা যায়, মানবাধিকার কমিশন তার তদন্ত রিপোর্টে বলেছে, মানবপাচার মামলার আসামি ইকরামুল আহসান কাঞ্চন ২০২০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি কমিশনের কাছে তার বক্তব্য দিয়েছেন। অথচ এই কাঞ্চন ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি মানবপাচার মামলায় কারাগারে যান এবং জামিনে মুক্ত হন ২৫ ফেব্রুয়ারি। এখন প্রশ্ন হলো, ২৫ ফেব্রুয়ারি যদি তিনি জামিন পান তাহলে ১৩ ফেব্রুয়ারি তিনি কীভাবে মানবাধিকার কমিশনের কাছে বক্তব্য দিলেন? এর আগে রাজারবাগ দরবার শরীফের পীর ও তার প্রতিষ্ঠানের নামে যে সম্পদ রয়েছে তার তালিকা প্রস্তুত করে আয়ের উৎস্য ও রাজস্ব দেয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে এমন ৭ দফা সুপারিশ দিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন তদন্ত প্রতিবেদন করে। ওই প্রতিবেদনের আলোকে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমান তৎকালীন ডিভিশন বেঞ্চে কমিশনের দাখিল করা সুপারিশ বিবেচনায় নেয়ার নির্দেশ দেন।