৫১ ফেরির ১১টি বিকল : ঈদ যাত্রায় চরম দুর্ভোগের আশঙ্কা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৩৮ পিএম, ২২ এপ্রিল,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ০৩:৩৪ এএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
ঢাকা থেকে ঈদের যাত্রীরা ফেরিঘাটে গিয়ে চরম ভোগান্তির শিকার হতে পারে—এমন আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের (মাওয়া) শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ও শিমুলিয়া-মাঝিকান্দি রুটে বাসসহ ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকছে ঈদেও।
পদ্মা সেতুতে ধাক্কা লাগার পর রাতে ফেরি চলাচল বন্ধ আছে প্রায় আট মাস। আর দেশের ছয়টি নৌপথে ৫১টি ফেরির মধ্যে চালু আছে ৪০টি।
বাকিগুলো বিকল বা মেরামতের অবস্থায় রয়েছে। শরীয়তপুরের জাজিরার মাঝিকান্দিতে নতুন একটি ঘাট স্থাপনের উদ্যোগ েেনয়া হলেও সেখানে নেই পার্কিং ইয়ার্ড। রাস্তাও সরু। ঘাটসংকটের কারণে ঈদের চাপ সামলাতে ফেরির সংখ্যাও বাড়াতে না পারার কথা বলছে কর্তৃপক্ষ। এসব কারণে মাওয়া পথে দক্ষিণাঞ্চলগামী যাত্রীরা চরম হয়রানিতে পড়তে পারে।
একই চিত্র অন্য প্রধান ফেরিঘাট মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও আরিচা-কাজিরহাট রুটে। বিকল্প ঘাট কাঁঠালবাড়ী-কাওড়াকান্দি সচল না থাকা এবং পুরনো ফেরির কারণে সংকট চরম হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এবার মাওয়া রুটে ভারী যান চলাচল বন্ধ থাকায় ঈদের সময় বাস-ট্রাকের সঙ্গে ব্যক্তিগত গাড়ির চাপ বাড়বে এখানে। চলাচলকারী ফেরিগুলোর ইঞ্জিন প্রায়ই বিকল হয়ে বন্ধ থাকে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থার (বিআইডব্লিউটিসি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশে ফেরি চলাচলের ছয় রুটের ৫১টি ফেরির মধ্যে ১১টিই বিকল হয়ে পড়ে আছে। ঈদের চাপ সামলাতে শিমুলিয়ার দুটি রুটে চারটি ফেরি, পাটুরিয়ায় দুটি এবং আরিচায় একটি ফেরি বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিকল পড়ে থাকা ফেরিগুলো সচল করে ঈদের সময় ছয়টি রুটে যুক্ত করার কাজ চলছে।
এ ছাড়া শিমুলিয়া-বাংলাবাজার রুটে ২৪ ঘণ্টাই হালকা যানবাহন পারাপার করতে চাইছে বিআইডব্লিউটিসি। এ জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। ঘাটের ইয়ার্ড ও রাস্তা তৈরির জন্য সংস্থাটির পক্ষ থেকে সড়ক ও জনপদ বিভাগকে চিঠি দেয়া হয়েছে।
ঘাটসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে এখন দেশের সবচেয়ে আরামদায়ক রাস্তা হলেও ঈদে দক্ষিণবঙ্গের যাত্রীদের চরম দুর্ভোগের কারণ হতে পারে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ও শিমুলিয়া-মাঝিকান্দি নৌপথ। মাসখানেক ধরে এসব ঘাট ভিআইপি গাড়ি পারাপারেই বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। মাঝিকান্দিতে মাত্র একটি ঘাট বা টার্মিনাল থাকায় সেখানে ফেরি বাড়াতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। সেখানে ২৮ এপ্রিলের আগে আরেকটি ঘাট চালু করতে যাচ্ছে বিআইডব্লিউটিএ। তবে ইয়ার্ড ও পর্যাপ্ত রাস্তা না থাকায়, সেখানে ফেরি বাড়াতে পারছে না সংস্থাটি।
বিআইডব্লিউটিসির শিমুলিয়া ঘাটের এজিএম শফিকুল ইসলাম বলেন, ঈদে শিমুলিয়া ঘাটে যাত্রী ভোগান্তি হতে পারে ফেরিসংকটের কারণে। আগে ঈদের সময় ১৮-২০টি ফেরিও চালানো হয়েছে। এখন সেখানে রয়েছে মাত্র ৯টি। বর্তমানে বেগম রোকেয়া ও ফরিদপুর নামে তিনটি ফেরি ডক ইয়ার্ডে থাকায় মাত্র পাঁচটি ফেরি দিয়ে শিমুলিয়া ঘাট থেকে দুটি নৌপথ সচল রাখা হয়েছে।
পাটুরিয়া ও আরিচা ঘাটের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ঈদ যাত্রায় অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হবে ঘাট কর্তৃপক্ষকে। চলাচলকারী ১৯টি ফেরির মধ্যে ছোটগুলোর ফিটনেস ভালো থাকলেও বড়গুলো প্রায়ই বিকল হয়ে যায়।
বিআইডব্লিউটিসি সূত্রে জানা যায়, পদ্মা সেতুর নিরাপত্তার কারণে মাওয়া রুটে চলাচল সীমিত হওয়ায় আরিচা-পাটুরিয়ায় চাপ বেড়েছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে আগে এটি দৃশ্যমান না হলেও এবার ঈদে তা প্রকট আকার ধারণ করবে। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে এই ঘাট দিয়ে দিনে গড়ে পার হয়েছে আড়াই হাজার গাড়ি। গত মার্চে সংখ্যাটি তিন হাজার ৬০০ ছাড়িয়ে গেছে।
এই রুটে চলাচলকারী দূরপাল্লার বাসের কয়েকজন চালক জানান, বাসের সব চাপ এ ঘাটে পড়ছে। ছোট গাড়িগুলো সবই যদি মাওয়া ঘাট দিয়ে পার করা হয় অথবা কোন জেলার বাস কোন রুটে যাবে ঠিক করা হয়, তবে চাপ কমবে।
বিআইডব্লিউটিসির প্রকৌশলী রুবেলুজ্জামান বলেন, ফেরিগুলোর সাময়িক মেরামতের কাজ চলছে। পাশাপাশি যেসব ফেরির বড় মেরামতের কাজ রয়েছে সেগুলোর লিস্ট করে হেড অফিসে পাঠানো হয়েছে। আশা করি, ঈদ যাত্রা নির্বিঘœ করতে ফেরি তেমন সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
বিআইডব্লিউটিসির পরিচালক (বাণিজ্য) এস এম আশিকুজ্জামান বলেন, ‘শিমুলিয়া, পাটুরিয়াসহ দেশের ছয়টি নৌপথে ৫১টি ফেরি রয়েছে। এর মধ্যে ৪০টি চালু থাকে। বাকিগুলো নষ্ট বা মেরামতে থাকে। আমরা ঈদের জন্য সব কটি ফেরি একযোগে চালু করার চেষ্টা করছি। ’