বাবার চোখের পানিতে হাইকোর্ট থেকে কানাডিয়ান মেয়ের বিদায়
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৪৬ পিএম, ১৭ এপ্রিল,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ১১:১২ পিএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
চোখের পানিতে ১৯ বছরের মেয়েকে হাইকোর্ট থেকে বিদায় জানালেন সেই বাবা। আদালতের এজলাস কক্ষে মেয়েকে জড়িয়ে কান্না করেন বাবা। মেয়েও জড়িয়ে ধরেন বাবাকে। আদালত কক্ষে আবেগঘন দৃশ্যের অবতারণা হয়। বাবা আদালতকে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ‘আমার মেয়ে কানাডা চলে যাচ্ছে। এতে আমার দুঃখ নেই। যেখানেই যাক আমার আদরের মেয়ে ভাল থাকুক, সুস্থ থাকুক- এটাই আমার চাওয়া। আমার মেয়ের পড়াশুনা নিয়েও মাথাব্যথা নেই। আমার মেয়ে যেন চিকিৎসা পায়, মেয়ে আমার বেঁচে থাকুক এটাই চাওয়া।’
হাইকোর্ট তরুণীকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আমরা চাই তুমি কানাডায় ভালভাবে পড়ালেখা করে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে। আমরা যেন তোমাকে নিয়ে গর্ব করতে পারি।’ পরে রাজধানীর উত্তর মুগদায় ১০ মাস ধরে বাবা-মায়ের বাসায় ‘গৃহবন্দি’ থাকা ১৯ বছরের কানাডিয়ান তরুণীকে দেশটির সরকারের হাতে তুলে দেয়ার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার মো. গোলাম রব্বানীকে আজই (রবিবার) তরুণীকে কানাডিয়ান হাইকমিশনে পৌঁছে দিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে তরুণীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলেছেন আদালত। তরুণীর বাবা-মা দেখা করতে চাইলে সেই ব্যবস্থা করতে কানাডিয়ান হাইকমিশনকে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে গতকাল রবিবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি এসএম মনিরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার সারা হোসেন। বাবা-মায়ের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. অজিউল্লাহ। তরুণীর বাবা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া কানাডিয়ান হাইকমিশনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে গত বৃহস্পতিবার কানাডা হাইকমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বাংলাদেশি বাবা-মায়ের সন্তান ১৯ বছরের কানাডিয়ান তরুণীর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখা, থাকা-খাওয়ার খরচ বহনসহ সব ধরনের নিরাপত্তা দেবে কানাডা সরকার। হাইকোর্টকে লিখিতভাবে কানাডা হাইকমিশনের পক্ষে এ তথ্য জানান রিটের পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন। পরে বিচারপতিগণ এজলাস কক্ষে একান্তে তরুণীর কথা শোনেন। গত ৫ এপ্রিল রাজধানীর উত্তর মুগদায় ১০ মাস ধরে বাবা-মায়ের বাসায় গৃহবন্দি থাকা ১৯ বছরের কানাডিয়ান তরুণীকে হাজির করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। মুগদা থানাপুলিশ ও তার বাবা-মাকে তরুণীকে হাজির করতে বলা হয়। একই সঙ্গে ১৯ বছরের তরুণীর অসম্মতিতে তাকে ১০ মাস ধরে আটক রাখা কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।
রিটের নথি থেকে জানা যায়, ১৯ বছরের ওই তরুণীর জন্ম কানাডায়। তিনি জন্মসূত্রে কানাডার নাগরিক। কানাডার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। তার বাবা-মাও কানাডায় থাকতেন। ১০ মাস আগে তার বাবা-মা বেড়ানোর কথা বলে তাকে নিয়ে বাংলাদেশে আসেন। এরপর ওই তরুণী কানাডায় ফিরে যেতে চাইলেও তাকে যেতে দেয়া হয়নি।
রিট আবেদনে বলা হয়েছে, তরুণীর কাছ থেকে মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে তাকে তার নানি ও মা সব সময় বাসায় বন্দি করে রাখেন। এক পর্যায়ে ওই তরুণী ল্যান্ড ফোনে কানাডা সরকার ও ঢাকায় কানাডিয়ান হাইকমিশনকে তাকে জোরপূর্বক ঘরবন্দি করে রাখার কথা জানান। ওই তরুণী কানাডায় ফিরে যাওয়ার ইচ্ছার কথা জানান। গত ৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মুগদা থানায় কানাডিয়ান হাইকমিশন থেকে সাধারণ ডায়েরি করা হয়। তারপর হাইকমিশনের পক্ষে মানবাধিকার সংগঠন ব্লাস্ট, আইন ও সালিশ কেন্দ্র হাইকোর্টে রিট করে। রিটে পুলিশের আইজি, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার, মুগদা থানার ওসি, ওই তরুণীর বাবা-মাকে বিবাদী করা হয়।