ধর্মঘটে ভোগান্তি, আলোচনায় প্রত্যাহার, ট্রেন চলাচল শুরু
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:৪৬ পিএম, ১৩ এপ্রিল,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০১:০৫ পিএম, ১৬ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
রানিং স্টাফদের ডাকা ধর্মঘট প্রত্যাহারের পরে ঢাকার থেকে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে।
আজ বুধবার (১৩ এপ্রিল) বেলা ১টা ৩৯ মিনিটে সিলেটগামী পারাবত কমলাপুর স্টেশন থেকে ছেড়ে যায়।
এদিকে রেলওয়ের রানিং স্টাফ (ট্রেন চালক, সহকারী চালক, গার্ড ও টিকিট পরিদর্শকদ–টিটি) ও শ্রমিক-কর্মচারী অঘোষিত ধর্মঘটের কারণে বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা। আজ সকাল ছয়টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ১৮টি ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে। তবে রেলের কর্মকর্তারা মনে করছেন, এ কারণে শিডিউল বিপর্যয় স্বাভাবিক। শিডিউল আজ বা আগামীকালের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে।
রানিং স্টাফদের কাজে ফিরিয়ে আনতে কমলাপুর স্টেশনে আজ সকাল সাড়ে নয়টার পরিস্থিতি সামাল দিতে আসেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। সঙ্গে ছিলেন রেল সচিব হুমায়ুন কবীর ও রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার। তবে রানিং স্টাফরা দাবি আদায়ে অটল থাকেন এবং মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে প্রথমেই চাননি। পরে বেলা পৌনে ১২টার দিকে রানিং স্টাফরা রেলমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় রেলমন্ত্রীর আশ্বাসে রানিং স্টাফরা কাজে যোগ দেবেন বলে জানান। তবে স্টাফদের একাংশ ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এর ট্রেন চলাচল বেলা ১ টা ৩৯ মিনিটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়।
রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বলেন, ‘হঠাৎ করে সকাল বেলা থেকে আমাদের ট্রেন চলাচল বন্ধ। আমরা জানতে পেরেছি আমাদের যারা রানিং স্টাফ তাদের কিছু দাবি দাওয়া এবং একটি প্রজ্ঞাপন অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জারি করার কারণে তারা এই চরম কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। হঠাৎ করে ট্রেন চলাচল বন্ধের কারণ আমরা নিজেরাও জানিনা, আমাদের আগে জানানো হয়নি। রেল বিভাগে যারা রানিং স্টাফ তারা রানিং অ্যালায়েন্স পেয়ে থাকেন। এ রানিং অ্যালায়েন্স পেনশনের সঙ্গে পরে যুক্ত হয়। এ সবই তারা পেয়ে আসছিল। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সুবিধা গুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়।
কমলাপুর রেলস্টেশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সকাল ছয়টা থেকে দুপুর বারোটা পর্যন্ত ১৮ টি ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় হয়েছে। এসব ট্রেনের যাত্রীরা যেতে পারেননি বলে তাঁদের টিকিটের টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ব্যবস্থাপক মো. মাসুদ সারওয়ার বলেন, কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে দিনে ৭২টি ট্রেন দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যায়। কিন্তু আজ ধর্মঘট থাকায় সকাল ছয়টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ১৮ টি ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে। এসব ট্রেনের টিকিট যাত্রীদের ফেরত দেওয়া হচ্ছে। একই ভাবে দেশের অন্যান্য স্টেশন থেকে টিকিটের টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে। কী পরিমাণ যাত্রী টিকিটের টাকা ফেরত নিয়েছেন সেটির সঠিক তথ্য তিনি দিতে পারেননি।
বেলা ১২টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, টিকিট কাউন্টারগুলোতে টাকা ফেরত নেওয়ার জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন যাত্রীরা। চাপ সামলাতে হিমসিম খাচ্ছেন রেলওেয়ের কর্মকর্চারীরা।
সকাল থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। এ সময় স্টেশনে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অনেকেই ফেরত যান। দুপুর বারোটার দিকে সরেজমিন দেখা যায়, কমলাপুর স্টেশনে ট্রেন ফের চালুর অপেক্ষায় স্টেশনে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছেন অনেক যাত্রীরা। তেমনই একজন মগবাজারের বাসিন্দা সঞ্জয় চন্দ্র দাস। তিনি সকাল দশটায় কমলাপুর স্টেশনে এসেছেন। তাঁর সঙ্গে মা, ভাইসহ পরিবারের পাঁচজন সদস্য।
সঞ্জয় বলেন, ‘বেলা ১১টার সিলেটগামী জয়ন্তিকা এক্সপ্রেসের যাত্রী আমরা। আগে থেকে ধর্মঘটের কথা জানতাম না। ধর্মঘটের কারণে এতক্ষণ বসে থাকতে হলো। রেলমন্ত্রী আসার পর ঘোষণা দেওয়া হলো ট্রেন চালু হবে। কিন্তু, এখনো শুরু হয়নি।’
সকাল সাড়ে আটটার ট্রেনে রাজশাহীর ট্রেনের টিকিট কেটেছিলেন তারেক সারওয়ার। কিন্তু ধর্মঘটের কারণে তিনি যেতে পারেননি। এক ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে পরে টিকিটের টাকা ফেরত পেয়েছেন তিনি। তারেক সারওয়ার বলেন, ধর্মঘট করে করুক। কিন্তু, আগে থেকে কিছু জানায়নি। এভাবে জনদুর্ভোগে ফেলার তো কোনো কারণ দেখি না। এমনিতেই ট্রেনের টিকিট পাওয়া যায় না। এখন টিকিট পেয়েও আবার ফেরত দিয়েছি। বাড়ি যাব বলে ভোগান্তির শিকার হলাম।
কর্মবিরতি করা শ্রমিকদের নিজ কাজে যোগ দেবে বলে সাংবাদিকদের বেলা সাড়ে ১২টার দিকে জানিয়েছেন রেলওয়ে রানিং স্টাফ শ্রমিক কর্মচারী সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সাইদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘রেলমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। সব কর্মচারীদের অনুরোধ করবো এখন থেকেই নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার জন্য।’
এর আগে দুপুর বারোটার দিকে কমলাপুর রেলস্টেশনে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সঙ্গে রেলের রানিং স্টাফ ও কর্মচারীদের সঙ্গে বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম বলেন, ‘মাইলেজের বিষয়টি নিয়ে আমি অর্থ মন্ত্রণালয় এবং সরকারের উচ্চপর্যায়ে কথা বলেছি। যে বিজ্ঞপ্তির কারণে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে, সেটি বাতিল করা হবে। আমরা রেলের রানিং স্টাফদের আন্দোলনের পক্ষে আছি। আগামী ১৯ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী আমাদের সময় দিয়েছেন। আমি এবং রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব সার্বিক বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করব। সেদিনের মধ্যে মাইলেজ সুবিধাসহ সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আগে যে সুযোগ-সুবিধাগুলো শ্রমিকরা পেত সেগুলো পুনরায় তাঁরা ফেরত পাবেন।’
এদিকে রেলমন্ত্রী শ্রমিকদের অনুরোধ করে বলেন, ‘ঈদের আগে যাত্রীদের যেন কোনো ধরনের ভোগান্তির শিকার না হতে হয় সেই বিষয়টি আপনাদের মাথায় রাখতে হবে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আজ যে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে সেটির জন্য রানিং স্টাফদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। পূর্বেও রেলকে নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। তখন রেলকে পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছে। এখনো রেল কে নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। সেসব ষড়যন্ত্রে রানিং স্টাফরা পা দিবেন না।’
দুপুর দেড়টার দিকে কমলাপুর রেলস্টেশনের স্টেশন ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। তবে সকালের কোনো ট্রেন ছেড়ে যায়নি। সকাল থেকে না যেতে পারা ট্রেনগুলো একেক করে স্টেশন ছেড়ে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যাবে। যে ট্রেনের ইঞ্জিন আগে পাবো, সেটি আগে যাবে। তিনি বলেন, সারা দেশের ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। আর কমলাপুর স্টেশন থেকে ট্রেন চলাচল শুরু হবে কিছুক্ষণের মধ্যেই। এ কারণে যে শিডিউল বিপর্যয় তা স্বাভাবিক বিষয়। শিডিউল আজ বা আগামীকালের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে।