অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচন করতে সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করবো : সিইসি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:১৩ পিএম, ৬ এপ্রিল,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০৪:১৭ এএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, সাংবিধানিকভাবে আইন ও বিধান অনুযায়ী দায়িত্ব পালনের শপথ নিয়েছি। সুষ্ঠু নির্বাচন করার প্রয়াসের কোনো ত্রুটি থাকবে না। সর্বপ্রয়াস, সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করবো অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচন করার।
আজ বুধবার (৬ এপ্রিল) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ইসির সঙ্গে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে সংলাপের পর এ কথা বলেন তিনি।
সিইসি বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার রাজনৈতিকভাবে ফয়সালা হবে। তবে আইন ও সংবিধানের অধীনে থেকেই কাজ করবে নির্বাচন কমিশন। তিনি বলেন, আমরা সংলাপ করছি, সংলাপের ফলাফল লিপিবদ্ধ করে, পর্যালোচনা করা হবে।
সংলাপে অংশ নেয়া জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে কমিশনকে শক্তিশালী ভূমিকা রাখার পরামর্শ দেন। তারা বলেন, নতুন কমিশনকে সততা নিয়ে কাজ করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা করার পরামর্শও দেয়া হয় এসময়। এছাড়া ক্ষমতাসীনদের হস্তক্ষেপ বন্ধে নির্বাচন কমিশনের পদক্ষেপ নিতে হবে।
প্রয়োজনে একদিনে ভোট না করে কয়েকদিনে ভোট করার পরামর্শও দেয়া হয়।
ইত্তেফাক সম্পাদক তাসমিমা হোসেন জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের নির্বাচন একদিনে না করে কয়েক সপ্তাহ ধরে বিভাগ ভিত্তিক করার সুপারিশ করেন। তিনি বলেন, প্রত্যেক জেলায় একেকদিন একেকটা নির্বাচন করেন, তাহলে নির্বাচনের পুরো পরিস্থিতি পাল্টে যাবে। বিভাগভিত্তিক জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা যায় কি-না, দেখবেন কে কত ভোট পায়। এই ডিভিশনে এক সপ্তাহ, ওই ডিভিশনে ওই সপ্তাহ, দেখেন তো কয়টা লোক আসে। কয়টা আওয়ামী লীগ সিট পায়, কয়টা সিট বিএনপি পায়।
তিনি আরো বলেন, ৩০ শতাংশ ভোটার যদি ভোট দিতে যান, তাহলে একজন এতো ভোট পান কী করে? এগুলো অভিজ্ঞতা থেকে বলছি।
গত নির্বাচনে কে কত ভোট পেয়েছেন এগুলো রিসার্চ করা যায়। কেন বিএনপি আসবে না, ওরা তো ভোট পাবেই না। আশা করি না একটা শতভাগ ন্যায্য ভোট করবেন। ৫০ শতাংশ সাফল্য পেলে স্যালুট জানাবো। আগামী নির্বাচন ভালোভাবে না হলে খুনাখুনি হবে। তিনি বলেন, এসপি, ডিসিকে বললে এখন আর কোনো কাজ হয় না। আমরা যাচ্ছি কোথায় লিডারশিপের অভাব প্রতিটি বেলায়। আমরা এখন ওপরের দিকে তাকিয়ে থাকি। প্রথমে গণভবন, তারপর আল্লাহর দিকে।
তিনি আরো বলেন, একেকটা নির্বাচন একেক রকম ছিল। পাবলিকও পরিবর্তন হচ্ছে। দুই কোটি মানুষ সুপার স্মার্ট। মানুষ কেন বদলে যাচ্ছে, নির্বাচন কমিশন আপনারা ভালো একটা কাজ করতে এসেছেন। সবাই বলে আগে টাকা করবো, তারপর রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাব। লোকাল ইলেকশন থেকে সব জায়গায় একই হচ্ছে। সিস্টেম হ্যাজ বিন ব্রোকেন, ম্যুরাল হ্যাজ বিন ব্রোকেন। তিনি এ সময় সংসদীয় আসনের সীমানা পরিবর্তন নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তাসমিমা হোসেন বলেন, প্রত্যেকটা নির্বাচনী এলাকা সীমানা পরিবর্বতন হয় হঠাৎ করে। আমাদের এলাকায় তিনবার হয়েছে।
সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান বলেন, আমরা দেখতে চাই- ইসি কোনো দল বা মহলের নয়। ইসি দেশের। সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে এবং ইসির ওপর অর্পিত দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করতে হবে। আবু সাঈদ খান বলেন, সরকারের দিকে তাকাবেন না। কোনো প্রভাবশালীদের দিকেও তাকাবেন না। সংবিধানে আপনাদের যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সেটা ভালোভাবে পালন করলেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে অবশ্যই বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে উদ্যোগ নিতে হবে। আর সে উদ্যোগ নির্বাচন কমিশনকেই নিতে হবে। কারণ, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব ইসির। এজন্য বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে ইসির এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে সবার আগে সাধারণ জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে। সাধারণ জনগণের আস্থা ফেরাতে না পারলে গ্রহণযোগ্য ভোট হবে না। সব দলকে নির্বাচনে আনার পাশাপাশি জনগণকেও ভোটের মাঠে আনতে হবে।
প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান বলেন, নির্বাচন কমিশনকে বিগত তিনটি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে হবে। পর্যালোচনা করে দেখতে হবে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার ক্ষেত্রে কি কি বাঁধা ছিল। সেই বাঁধাগুলো দূর করতে হবে। তিনি বলেন, বিগত নির্বাচন কমিশন ও প্রাশাসন সরকারের প্রতি অনুগত ছিল। সেই অনুগত অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে সাহসী ভূমিকা নিতে হবে। জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে রিটার্নিং কর্মকর্তা খুব গুরুত্বপূর্ণ। নিজস্ব জনবলকে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োজিত করতে হবে। তাহলে প্রাশাসনিক এবং সরকারি হস্তক্ষেপ অনেক কমে যাবে।