এসকে সিনহা ও তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:৫০ পিএম, ৩১ মার্চ,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ১০:৩৪ এএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (এসকে সিনহা) ও তার ভাই অনন্ত কুমার সিনহার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২ লাখ ৮০ হাজার ডলার বা প্রায় ২ কোটি ৫২ লাখ টাকা (১ ডলার ৯০ টাকা ধরে) ক্যাশ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে (১৭৯, জ্যাপার স্ট্রিট, প্যাটারসন নিউ জার্সি ০৭৫২২) তিনতলা বাড়ি কেনায় এ মামলাটি করা হয়। মানিলন্ডারিং আইনের এ মামলায় এসকে সিনহা ‘বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি থাকাকালীন অবৈধভাবে ওই অর্থ অর্জন’ ও তা ‘যুক্তরাষ্ট্রে পাচারের’ অভিযোগ আনা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে (ঢাকা-১) এ মামলাটি করা হয়। দুদকের উপ-পরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলার বিষয়টি দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, অনন্ত কুমার সিনহা বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ কুমার সিনহার ছোট ভাই। অনন্ত কুমার সিনহার যুক্তরাষ্ট্রে ভ্যালি ন্যাশনাল ব্যাংক, প্যাটারসন, নিউজার্সির অ্যাকাউন্ট নং: ৮৫৮০৩৩৭৫ এ (২০১৮ সালের ১১ এপ্রিল থেকে ২০ জুন পর্যন্ত সময়ে) ১ লাখ ৯৬ হাজার ৪৫৮ ডলার জমা হয়। ২০১৮ সালের ১২ জুন অনন্ত কুমার সিনহা ১৭৯ জ্যাপার স্ট্রিট, প্যাটারসন নিউ জার্সি-০৭৫২২তে ২ লাখ ৮০ হাজার ডলার ক্যাশ দিয়ে একটি বাড়ি ক্রয় করেন। সুতরাং অনন্ত কুমার সিনহা যুক্তরাষ্ট্রের একজন ডেন্টিস্ট হিসেবে কর্মরত থেকে ১ লাখ ৪৫ হাজার ডলার দিয়ে একটি বাড়ি ক্রয় করেন এবং ২০১৮ সালের ১২ জুন ২ লাখ ৮০ হাজার ডলার ক্যাশ দিয়ে অপর একটি বাড়ি ক্রয় করেন। মূলত সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বাংলাদেশে প্রধান বিচারপতি থাকাকালে বিভিন্নভাবে অবৈধ টাকা অর্জন করে তা হুন্ডিসহ বিভিন্ন কায়দায় যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করে তার ছোট ভাইয়ের অ্যাকাউন্টে ওই টাকা ট্রান্সফার করেন এবং তা দিয়েই ১৭৯, জ্যাপার স্ট্রিট, প্যাটারসন নিউজার্সি-০৭৫২২তে ২ লাখ ৮০ হাজার ডলার ক্যাশ দিয়ে একটি বাড়ি কেনেন। সুতরাং ওই বাড়িটি পরোক্ষভাবে সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নিজের বাড়ি।
সাবেক প্রধান বিচারপতি জনাব সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ও তার ছোটভাই অনন্ত কুমার সিনহা অসৎ উদ্দেশ্যে অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ করে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। এসকে সিনহা বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি থাকা অবস্থায় অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করে ওই অপরাধলব্ধ অর্থ নিজেদের ভোগ দখলে রেখে তার অবৈধ প্রকৃতি, উৎস, অবস্থান গোপন করে বা এর ছদ্মাবরণে পাচার করেছেন। ওই অর্থ বিভিন্ন সময় নিজ ভাই অনন্ত কুমার সিনহার যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর, রুপান্তর ও হস্তান্তর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আসামিরা মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪ (২), ৪ (৩) ধারা ও ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলেও এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ৯ নভেম্বর দুর্নীতির এক মামলায় এসকে সিনহার ১১ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে এসকে সিনহাকে এক ধারায় সাত বছর ও আরেক ধারায় চার বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। দুটি ধারায় দেওয়া সাজা একসঙ্গে চলবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়। এতে করে এসকে সিনহাকে সাত বছরের সাজাভোগ করতে হবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
সাবেক ফারমার্স ব্যাংক (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) থেকে চার কোটি টাকা ঋণের নামে আত্মসাতের এ মামলায় ১১ আসামির মধ্যে রায়ে এসকে সিনহা ছাড়া অপর আট আসামির বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ও দুই আসামি খালাস পেয়েছেন।
বিচারপতি এসকে সিনহা বিদেশে পাড়ি জমানোর পর দুদক অভিযোগ পায়, তিনি ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে ব্যবসায়ী পরিচয়ে দুই ব্যক্তির নেওয়া ঋণের চার কোটি টাকা নিজের অ্যাকাউন্টে নিয়েছিলেন। এরপর তদন্তে নামে দুদক। দীর্ঘ তদন্তের পর ২০১৯ সালের ১০ জুলাই সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন।
তদন্ত শেষে দুদকের পরিচালক বেনজীর আহমেদ ২০১৯ সালের ৯ ডিসেম্বর ১১ জনকে আসামি করে মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) আদালতে দাখিল করেন। এ ছাড়া ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্লট বরাদ্দ ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০২১ সালের ৭ অক্টোবর করা আরও একটি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে এসকে সিনহার বিরুদ্ধে।