চাহিদার চেয়ে উৎপাদন ক্ষমতা বেশি, তবু হবে লোডশেডিং
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৫৯ পিএম, ২৮ মার্চ,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ০৪:০৩ এএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
সরকার থেকে বারবার ঘোষণা করা হচ্ছে, দেশের চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে বেশি। কিন্তু গ্রীষ্মের তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেশে বিভিন্নস্থানে শুরু হয়ে গেছে লোডশেডিং। দিনে তিন-চারবার লোডশেডিংয়ের মুখে পড়তে হচ্ছে। সরকারের হিসাব বলছে, চাহিদার তুলনায় অন্তত ১০ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা বেশি। এর জন্য সরকারকে গুনতে হচ্ছে বাড়তি অর্থ। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩৭টি বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে বছরের অধিকাংশ সময় অলস বসিয়ে রেখে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ ১৩ হাজার কোটি টাকা দিতে হয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বা বিপিডিবিকে; যা আগের বছরের চেয়ে ২১ শতাংশ বেশি। এরপরও জিরো লোডশেডিং আওয়ার বা শূন্য লোডশেডিং-এ পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। গ্রীষ্ম এবং সেচ মিলিয়ে দেশে সর্বোচ্চ বিদ্যুতের চাহিদা থাকে এপ্রিলে। মে থেকেই বৃষ্টির কারণে বিদ্যুতের চাহিদা কমতে থাকে। জুনের পর কিছুটা চাহিদা বাড়লেও বেশি জুলাই এবং আগস্টে এসে আবার কমতে শুরু করে।
এপ্রিল মাসে মোট বিদ্যুতের চাহিদা দাঁড়াবে ১৫ হাজার ৭৬৬ মেগাওয়াট, যা গত বছর ছিল ১৪ হাজার ৭৩৫ মেগাওয়াট। এর মধ্যে ঢাকার চাহিদা ছিল ৫ হাজার ৯০৩, আর এবার হবে ৬ হাজার ৩১৬, একইভাবে চট্টগ্রামে চাহিদা ছিল ১ হাজার ৪৫৬, এবার ১ হাজার ৫৫৮, ময়মনসিংহে ছিল ৭২২, এবার ৭৭৩, সিলেটে ছিল ৫৭৪, এবার ৬১৪, কুমিল্লায় ছিল ১ হাজার ৩২৭, এবার ১ হাজার ৪২০, খুলনায় ছিল ১ হাজার ৭৬০, এবার ১ হাজার ৮৮৩, বরিশালে ছিল ২৯৩, এবার ৩১৪, রাজশাহীতে ছিল ১ হাজার ৭৫৪, এবার ১ হাজার ৮৭৬, রংপুরে ছিল ৯৪৬, এবার ১ হাজার ১২ মেগাওয়াট চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে।
গত রবিবার দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ১৩ হাজার ৩৬৯ মেগাওয়াট। রোদের তীব্রতা বাড়লে চাহিদা বেড়ে হবে ১৫ হাজার ৭৬৬ মেগাওয়াট। অর্থাৎ চাহিদা আরও ২ হাজার ৩৯৭ মেগাওয়াট বেড়ে যাবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনে মূল সংকট জ্বালানি। এখন বিদ্যুৎ উৎপাদনে মোট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে ২ হাজার ২৫২ মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু এখন সরবরাহ করা হচ্ছে এর অর্ধেক ১ হাজার ১১৪ মিলিয়ন ঘনফুট। এর চাইতে বেশি গ্যাস সরবরাহ করা বেশ কঠিন বলে জানিয়েছে পেট্রোবাংলা।
অন্যদিকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের বিকল্প হিসেবে জ্বালানি তেল ব্যবহার করা হয়। গ্রীষ্মে চাহিদা বেড়ে গেলে বেশি মাত্রায় জ্বালানি তেল ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এখন আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দর বেড়ে যাওয়াতে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে।
ফলে গ্রীষ্মে অতিরিক্ত চাহিদা প্রায় আড়াই হাজার মেগাওয়াট সৃষ্টি হলে তা মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। এই দুই কারণ ছাড়াও বিতরণ ব্যবস্থার ত্রুটির কারণে বিদ্যুৎ গ্রীষ্মে লোডশেডিং করতে হয়। শহরাঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ করা হলেও গ্রামীণ জনপদে এই সময় লোড ম্যানেজমেন্ট করা হয়। এবারও সেই উদ্যোগ আগেভাগেই নিয়েছে সরকার।
বিদ্যুৎ বিভাগ গ্রীষ্ম এবং সেচকে সামনে রেখে যে পুস্তিকা প্রকাশ করেছে তাতে বলা হচ্ছে, ‘চলতি মৌসুমে অনুরূপ লোড ম্যানেজমেন্ট হাতে নেয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের বর্তমান পরিস্থিতিতে লোডশেডিং হবে না বলে আশা করা যায়। হলেও তা সহনীয় পর্যায়ে রাখার ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
অর্থাৎ এবারও লোডশেডিং হবে না এই কথা জোর দিয়ে বলতে পারছে না বিদ্যুৎ বিভাগ। বিভাগের পুস্তিকা বলছে, লোডশেডিং হবে। কিন্তু তা থাকবে সহনীয় মাত্রায়।