সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচন ভোট গ্রহণের ৫ দিন পরও হয়নি ফল ঘোষণা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৪৮ পিএম, ২২ মার্চ,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ১১:৪৩ পিএম, ১৬ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচন ২০২২-২৩ ভোটগ্রহণের পাঁচদিন পরও এ ফলাফল ঘোষণা করা হয়নি। আইনজীবীরা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে ভোট গণনা শেষ হয়।
এতে দেখা যায়, সভাপতিসহ ছয়টি পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেল ও সম্পাদকসহ আটটি পদে বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেল বিজয়ের পথে। সম্পাদক পদে নীল প্যানেলের ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল আওয়ামী লীগের প্রার্থী থেকে স্বল্প ভোটের ব্যবধানে বিজয়ের পথে ছিলেন। এ অবস্থায় নির্বাচন উপ-কমিটি আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণার প্রস্তুতি নিলে সম্পাদক পদে ভোট পুনরায় গণনার দাবি তোলেন আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরা। সম্পাদক পদে ভোট পুনঃগণনার আবেদনও করেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী। পুনঃগণনা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে হইচই ও হট্টগোল হয়। এ অবস্থায় নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটির আহ্বায়ক এ ওয়াই মশিউজ্জামান পদত্যাগ করায় ফলাফল ঘোষণা হয়নি। তবে এখন নির্বাচন উপ-কমিটির আহ্বায়ক অসুস্থ থাকায় আগামী দু-এক দিনের মধ্যে তিনি এসে নির্বাচনের পরবর্তী কার্যক্রম সম্পন্ন করবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
এ বিষয়ে সোমবার তিনি বলেন, নির্বাচন পরিচালনা কমিটি এখানে আমাদের সম্মানের জন্য এসে একটা পরিস্থিতিগত কারণে তারা অপমানিতবোধ করেছেন, বহিরাগতদের আক্রমণের স্বীকার হয়েছেন, হামলার স্বীকার হয়েছেন। নির্বাচন উপ-কমিটির আহ্বায়ক নিজেই সেটা প্রকাশ করেছেন। এখানে যারা দায়িত্বশীল নেতারা ছিলেন তারা তাদের নিবৃত করার চেষ্টা করেননি। এ কারণে অত্যন্ত মনোকষ্ট থেকে তাৎক্ষণিকভাবে উনি একটা সিদ্ধান্ত নিলেও আমার মনে হয় উনি সেই সিদ্ধান্তে আর নেই। উনার সাথে আমার কথা হয়েছে। এখন উনি শারীরিকভাবে অসুস্থ। আমার মনে হয়, উনি এক বা দু’দিনের মধ্যে এসে নির্বাচনের বাকি প্রক্রিয়া শেষ করবেন। আর আমাদের গঠনতন্ত্রে নির্বাচনের ফল প্রকাশের আনুষ্ঠানিকতা বার্ষিক সাধারণ সভায় হয়। সুতরাং পরবর্তী সাধারণ সভায় ফল ঘোষণার বাধ্যবাধকতা গঠনতন্ত্রে আছে।
ভোট পুনঃগণনার জন্য একজন প্রার্থীর আবেদনের বিষয়ে তিনি বলেন, ভোট পুনঃগণনার বিধান আমাদের গঠনতন্ত্রে নেই। তাহলে যে কেউ নির্বাচনে পরাজিত হলে ভোট পুনঃগণনা চাইবে। এ রকম কোনো বিধান আমাদের গঠনতন্ত্রে নেই। আর এক দুই ভোটের ব্যবধানে সুপ্রিম কোর্টের অনেক সিনিয়র নেতারও জয়পরাজয় নির্ধারিত হয়েছে। এ ভোটে ৩৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। ৩২ জন প্রার্থী ইতোমধ্যেই নির্বাচনের ফল মেনে নিয়েছেন। পদত্যাগ করার বিষয়ে এ ওয়াই মশিউজ্জামান সাংবাদিকদের বলেছেন, আওয়ামী লীগ সুপ্রিম কোর্ট নেতাদের সামনেই তাদের কর্মীরা আমাকে ঘেরাও করে রেখে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। কিন্তু নেতারা তাদের থামানোর কোনো উদ্যোগ নেননি।
তিনি বলেন, নেতারা প্রতিবাদ করেননি। এটা আমাকে খুবই কষ্ট দিয়েছে। আমার জীবনে এ রকম নোংরামি কখনো দেখিনি। এ কারণে পদত্যাগ করেছি।
তিনি বলেন, আমি সম্পাদক পদে ভোট পুনঃগণনার কথা কখনো বলিনি। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৩টায় বলেছিলাম, তারা যে ভোট পুনঃগণনার আবেদন করেছেন, শুক্রবার বিকেল ৩টায় উভয়পক্ষের উপস্থিতিতে সেই আবেদন নিষ্পত্তি করব। তখন এ কথা না বললে সেখান থেকে বের হয়ে আসতে পারতাম না। আমাকে ঘেরাও করে রাখা হয়েছিল। বলতে পারেন জান বাঁচানোর জন্য ওই কথা বলে চলে এসেছি। যদিও ভোট পুনঃগণনার আবেদন নিয়ে তখন আমার কিছু বলার এখতিয়ার ছিল না। কারণ তার আগে রাত একটায় পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছিলাম। গত ১৫ ও ১৬ মার্চ এ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে পাঁচ হাজার ৯৮২ জন আইনজীবী ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। নির্বাচনে ১৪ পদে প্রার্থী ছিলেন ৩৩ জন। সিনিয়র অ্যাডভোকেট এ ওয়াই মশিউজ্জামানের নেতৃত্বে সাত সদস্যের উপ-কমিটি নির্বাচন পরিচালনা করেন। দু’দিনের ভোটগ্রহণ শেষে গত ১৭ মার্চ বিকেল থেকে ভোট গণনা শুরু হয়। ওই দিন রাতে গণনার একপর্যায়ে অনিয়মের অভিযোগ তুলে রাত ১২টার দিকে সম্পাদক পদে পুনরায় ভোট গণনা চেয়ে নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটির আহ্বায়কের কাছে আবেদন করেন আওয়ামী লীগ-সমর্থিত সাদা প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী আবদুন নূর দুলাল। তবে অনানুষ্ঠানিক ফলাফলে বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেলের প্রার্থী মো: রুহুল কুদ্দুসসহ (বর্তমান সম্পাদক) আট পদে এগিয়েছিলেন। আর সভাপতিসহ ছয় পদে এগিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেল। সুপ্রিম কোর্ট বার কার্যকরী কমিটির সভাপতি পদে একটি, সহ-সভাপতি পদে দুটি, সম্পাদক পদে একটি, কোষাধ্যক্ষ পদে একটি, সহ-সম্পাদক পদে দুটি ও কার্যকরী কমিটির সদস্য পদে সাতটি পদসহ ১৪টি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।