সব প্রচলিত আইন বাংলায় রূপান্তরে হাইকোর্টের কমিটি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:২৮ পিএম, ১৪ মার্চ,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ১২:৩২ এএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
দেশের সর্বাধিক প্রচলিত ও মৌলিক আইনগুলো ইংরেজি থেকে বাংলা ভাষায় রূপান্তর করে নির্ভরযোগ্য পাঠ (অথেনটিক টেক্সট) সর্বসাধারণের পাঠ-উপযোগী করার উদ্যোগ নিতে আইন কমিশনসহ সংশ্লিষ্টদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করেছেন হাইকোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল, বাংলা একাডেমি, আইন কমিশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আইন অনুষদ ও বাংলা বিভাগের সমন্বয়ে এ কমিটি গঠন হয়েছে। এ বিষয়ে একটি অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্যও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে দেশের সব আদালতে বাংলা ভাষা ব্যবহারের জন্য মৌলিক আইনসমূহের নির্ভরযোগ্য বাংলা পাঠ প্রকাশ করতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।
আজ সোমবার হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেন রিটকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।
তিনি জানান, আদেশ হাতে পাওয়ার পর একটি কমিটি গঠন করার কথা বলা হয়েছে। তবে সে কমিটি কতদিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে, এ বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। দেশের প্রচলিত আইন বাংলায় রূপান্তর করার বিষয়ে উদ্যোগ নিতে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি আইন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছিলেন ১০ আইনজীবী। ওইদিন ১০ আইনজীবীর পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের অপর আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির এ লিগ্যাল নোটিশ পাঠান। নোটিশ হাতে পাওয়ার পর সাতদিনের মধ্যে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছিল। অন্যতায় আইনি প্রতিকার চাওয়া হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়। নোটিশে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার, আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও বাংলা একাডেমির মহাপরিচালককে (ডিজি) বিবাদী করা হয়েছিল।
নোটিশে বলা হয়, আদালতের সব ধরনের কার্যাবলি আইনের আলোকে পরিচালিত হয়। আদালতে ফৌজদারি এবং দেওয়ানি মামলার বিভিন্ন পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে এসব আইনের গুরুত্ব ও ব্যবহার সর্বাধিক। এ আইনগুলোর বাংলায় অনূদিত নির্ভরযোগ্য পাঠ প্রণয়ন ও প্রকাশ ব্যতীত আদালতের সর্বস্তরে বাংলা ভাষা ব্যবহারের আইনি বিধান সম্পূর্ণ অর্থহীন এবং অযৌক্তিক। এখন পর্যন্ত এসব মৌলিক আইনের কোনো নির্ভরযোগ্য বাংলা পাঠ প্রণয়ন করা হয়নি। সর্বস্তরে বিশেষত আদালতে বাংলা ভাষা প্রচলনের স্বার্থে মৌলিক আইনসমূহের বাংলায় অনূদিত নির্ভরযোগ্য পাঠপ্রকাশ অত্যাবশ্যক বলেও ওই নোটিশে উল্লেখ করা হয়। এমতাবস্থায় মৌলিক আইনগুলোর বাংলায় অনূদিত নির্ভরযোগ্য পাঠ (অথেনটিক টেক্সট) প্রকাশে কার্যকর উদ্যোগ নিতে নোটিশে অনুরোধ জানানো হয়।
নোটিশ পাঠানো ওই ১০ আইনজীবীরা হলেন- মোস্তাফিজুর রহমান, মীর ওসমান বিন নাসিম, মো. আসাদ উদ্দিন, মোহা. মুজাহিদুল ইসলাম, মো. জোবায়েদুর রহমান, মো. আব্দুস সবুর দেওয়ান, আল রেজা মো. আমির, আব্দুল্লাহ হিল মারুফ ফাহিম, জি এম মুজাহিদুর রহমান ও মো. জহিরুল ইসলাম। বর্তমানে দেশের নিম্ন আদালতে বেশিরভাগ রায় ও আদেশ হয় বাংলায়। এখন উচ্চ আদালতেও বাংলায় রায় ও আদেশ দেয়ার প্রবণতা বাড়ছে। এক দশক আগেও উচ্চ আদালতে বাংলায় রায় ও আদেশের সংখ্যা ছিল খুবই কম।
এদিকে সাধারণ মানুষ ও বিচারপ্রার্থীরা যেন রায়ের সারমর্ম বুঝতে পারেন, সেজন্য ইংরেজিতে দেয়া রায় বাংলায় অনুবাদ করতে সুপ্রিম কোর্টে ‘আমার ভাষা’ নামের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্বলিত নতুন সফটওয়্যার যুক্ত করা হয়েছে। যে সফটওয়্যারের মাধ্যমে উচ্চ আদালতের রায়গুলো বাংলায় অনুবাদ করা যাবে।