দ্রব্যমূল্য বাড়েনি, বিএনপি মানুষকে বিভ্রান্ত করছে - তথ্যমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৫০ পিএম, ৬ মার্চ,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ০৮:৪৭ পিএম, ১৮ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করতে বিএনপি দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধির কথা বলছে বলে দাবি করেন তথ্যমন্ত্রী ডা. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, অন্য যে কোনো সময় থেকে দেশের মানুষ এখন ভালো আছে।
আজ রবিবার শাহবাগে জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু “শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ভাষণ” শীর্ষক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন। আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ উপকমিটি এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
হাছান মাহমুদ বলেন, বঙ্গবন্ধু যখন যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশকে পুনর্গঠিত করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখনই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে আজ থেকে ২০-৩০ বছর আগেই বাংলাদেশ একটি উন্নত দেশে রূপান্তরিত হতো। যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা চায়নি, তারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে দেশ উন্নত হওয়ার পথকে রোধ করেছে। আজকে বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আয়তনের দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান পৃথিবীতে ৯২তম। এই দেশ ঝড়, বৃষ্টি, বন্যা, জলোচ্ছ্বাসসহ জলবায়ু পরিবর্তনের দেশ। কিন্তু বাংলাদেশ আজকে ধান উৎপাদনে পৃথিবীতে তৃতীয়, সবজি উৎপাদনে পৃথীবিতে তৃতীয় মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে পৃথিবীতে তৃতীয়, আলু উৎপাদনে সফতম। এটি কোনো জাদুর কারণে নয়, বরং জননেত্রী শেখ হাসিনার জাদুকরি নেতৃত্বের কারণে সম্ভব হয়েছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ে বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের জবাবে আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, আমি দেখলাম গত কয়েকদিন ধরে বিএনপির নেতৃবৃন্দ শুধু বেগম জিয়ার স্বাস্থ্য আর তারেক জিয়ার শাস্তির মধ্যে আটকে থাকা রাজনীতি থেকে বের হওয়ার চেষ্টা দেখাচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে তারা সারা দেশে সমাবেশের আয়োজন করছে। পৃথিবীতে সব সময় দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৪০ এর দশকে এক আনায় মানে ১৬ পয়সায় যা বৃটিশ আমলে এক আনা মানে ৬ পয়সা ছিল। সেই এক আনায় কয়েক কেজি চাল পাওয়া যেত। কিন্তু মানুষ লাখে লাখে না খেয়ে মারা গেছে। গত কয়েক দশকে সমস্ত পৃথিবীতে খাদ্যদ্রব্যের দাম কয়েক গুন বেড়েছে। ভারতে বেড়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ উত্তর আমেরিকায় বেড়েছে, ইউরোপে বেড়েছে, ইউকেতে বেড়েছে, সমগ্র পৃথিবীতে বেড়েছে। বাংলাদেশেও বেড়েছে, তবে তাদের তুলনায় সে রকম নয়। দেখতে হবে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে কি না দেশের মানুষ আগের যে কোনো সময় থেকে ভালো আছে দাবি করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমি যখন ছাত্র রাজনীতি করেছি তখন সেøাগান দিয়েছি শ্রমিকের বেতন হতে হবে সাড়ে তিন কেজি চালের মূল্যের সমান। কারণ তখন একজন শ্রমিক যে বেতন পেত সে একদিন কাজ করে তিন কেজি চালও কিনতে পারেতো না। যারা কমিউনিস্ট পার্টি করতেন তারাও স্লোগান দিত সাড়ে তিন কেজি চালের সমান একদিনে শ্রমিকের মজুরি হতে হবে। আজকে একজন শ্রমিক চট্টগ্রামে আটশ টাকার নিচে পাওয়া যায় না। আর দেশের অন্যান্য অঞ্চলে পাঁচশ টাকার নিচে মুজরি নেই। মোটা চালের কেজি ৪১-৪২ টাকা। সেটা হিসাবে করলে ১২-১৫ কেজির বেশি চাল কিনতে পারে একজন শ্রমিক একদিনের মজুরির টাকায়। ঢাকাতে একজন রিকশাচালক সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এক বেলা কাজ করলে এক হাজার টাকা আয় করতে পারে। সে ইচ্ছে করলে একদিন রিকশা চালিয়ে অন্যদিন বসে থাকতে পারে। বাংলাদেশে গত তের বছরে মানুষের মাথাপিছু আয় ছয়শ ডলার থেকে ২৬শ ডলারে উন্নীত হয়েছে। অর্থাৎ প্রায় সাড়ে তিনগুণ বেড়েছে। আর মানুষের ক্রয় ক্ষমতা তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, সেটা অন্য আয়ের মানুষেরও। প্রতিটি মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন হয়েছে। আজকে গ্রাম দেশে হারিকেন দেখা যায় না, হারিকেন আর কুপিবাতি এখন দেখা যায় না। এগুলো ড্রয়িং রুমে সাজিয়ে রাখতে হয়। গত দশ বছরে কৃষিতে যে উন্নয়ন হয়েছে, হালের বলদ আর গরুর হাল এখন আর বাচ্চারা দেখতে পায় না, চেনে না। কারণ গরুর হাল নাই, এটাই পরিবর্তন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবরা এগুলো দেখেও দেখে না। আজকে দেশের প্রতিটি মানুষ ভালো আছে। অথচ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীররা মানুষকে ধোঁকা দেয়ার জন্য কর্মসূচি পালন করছে।
দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করতে বিএনপি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কথা বলছে দাবি করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, সবাইকে অনুরোধ জানাবো, আজকে দেশ উন্নত হয়েছে কুঁড়ে ঘর এখন কবিতায়, পায়ে চলা মেঠো পথ খুঁজে পেতে কষ্ট। এই যে পরিবর্তন, যে ছেলে ১২ বছর আগে বিদেশে গেছে সে দেশে এসে ঢাকা শহর চিনতে পারে না। গ্রাম চিনতে পারে না। গ্রামের একটি ছেলে আর শহরের ছেলের মধ্যে কোনো পার্থক্য নাই। এই যে পরিবর্তন এটি শেখ হাসিনার কারণে। তাই মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীররা রাজনীতি করে। তারা মানুষকে অতীতে কিছু দিতে পারেনি। তারা দুর্নীতিতে বার বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, হাওয়া ভবন বানিয়ে দেশে সমান্তরাল সরকার তৈরি করেছে। সমস্ত ব্যবসার ওপর টোল বসিয়েছিল। এটিই দিতে পেরেছে তারা, এর বাইরে কিছু দিতে পারেনি। আজকে পৃথিবীতে বাংলাদেশ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ইমার্জিং টাইগার, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের উদাহরণ, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজ বাংলাদেশ বিশ্ব খাদ্য সংস্থাকে অবাক করে দিয়ে বিশ্বের মাথাপিছু জমির পরিমাণ সর্বনিম্ন থাকা সত্ত্বেও খাদ্য উদ্বৃত্তের দেশে রূপান্তর হয়েছে। এগুলো সহ্য হয় না বলে বিএনপি জনগণকে বিভ্রান্ত করার রাজনীতি বেছে নিয়েছে। তাই নেতাকর্মীদের বলবো তাদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে। ৭ মার্চের ভাষণ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের এ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি ও তার দোসরা ৭ মার্চ পালন করে না। ৭ মার্চ বাদ দিয়ে আমাদের ইতিহাস হয় না। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ইতিহাস বিকৃতির অপচেষ্টা করা হয়েছে। ৭ মার্চের ভাষণ লিখিত ছিল না, বঙ্গবন্ধুর ভাষণে ছিল সাধারণ মানুষের ভাষা।
আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ উপকমিটির চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অধ্যাপক খন্দকার বজলুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি কবি মুহাম্মদ সামাদ, কবি নির্মলেন্দু গুণ, দৈনিক ভোরের কাগজ পত্রিকার সম্পাদক শ্যামল দত্ত, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য মারুফা আক্তার পপি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।