মিউনিখ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের কাছে টাকা নেই, চীন টাকার ঝুড়ি নিয়ে এসেছে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:১১ পিএম, ২২ ফেব্রুয়ারী,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ০৭:১৯ পিএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
অন্য দেশ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যখন বাংলাদেশের বিনিয়োগ প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না, তখন টাকার ঝুড়ি নিয়ে এগিয়ে এসেছে চীন। তারা আগ্রাসী ও সাশ্রয়ী প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে এসেছে। এখন বিষয় হলে আমরা কী করব? পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন গত শনিবার রাতে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে এ প্রশ্ন তোলেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ, বিশেষ করে কোয়াডের সদস্য দেশগুলোতে ‘চীনা ঋণের টোপ’ নিয়ে বিতর্ক চলছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন প্রশ্নটি উত্থাপন করেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সম্মেলনে উপস্থিত ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামনিয়াম জয়শঙ্কর বলেন, কোন দেশ কার কাছ থেকে বিনিয়োগ নেবে, তা ওই দেশের স্বার্থেই বিবেচনা করা উচিত। বিশেষ করে শেষ পর্যন্ত বিনিয়োগ গ্রহণকারী দেশ কী পাচ্ছে, তা জেনেবুঝে সিদ্ধান্ত নেয়াটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তিন দিনব্যাপী মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলন শুরু হয়েছে গত শুক্রবার। শনিবার রাতে প্যানেল আলোচনার বিষয় ছিল ‘ইন্দো-প্যাসিফিকে আঞ্চলিক ব্যবস্থা ও নিরাপত্তায় বড় পরিবর্তন’। ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের এশিয়া-প্যাসিফিক বিষয়ক সিনিয়র ফেলো লিন কিউক অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। আলোচনায় অংশ নেন যুক্তরাষ্ট্র সিনেটের ইউরোপ ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা সহযোগিতা বিষয়ক সাবকমিটির চেয়ারওম্যান সিনেটর জিনি শাহিন, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামনিয়াম জয়শঙ্কর, অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মরিস পেইন ও জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হায়াশি ইয়োশিমাসা। এই চার দেশ কোয়াডের সদস্য।
সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এক পর্যায়ে বলেন, অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ ভালো করছে। দেশের মানুষের আশা-আকাক্সক্ষাও বেড়ে গেছে। তারা আরো উন্নত জীবন, সুযোগ-সুবিধা ও অবকাঠামো চায়। কিন্তু বাংলাদেশের যথেষ্ট টাকা ও প্রযুক্তি নেই। অবকাঠামো উন্নয়নে সহযোগিতা ও ঋণের জন্য জাপান ও ভারতকে ধন্যবাদ জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বিকল্প হিসেবে টাকার ঝুড়ি নিয়ে এগিয়ে এসেছে চীন। তারা আগ্রাসী ও সাশ্রয়ী প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে এসেছে। এখন বিষয় হলো আমরা কী করব?’
মোমেন আরো বলেন, আমাদের উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে আরো তহবিল প্রয়োজন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তারা অনেক জটিলতা নিয়ে আসে এবং এটি গ্রহণ করা আমাদের জন্য খুব কঠিন হয়ে যায়। বাংলাদেশ তার ঋণের বড় অংশই বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাছ থেকে পায় উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর জিনি শাহিনের কাছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানতে চান, যুক্তরাষ্ট্র কি বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর অবকাঠামো উন্নয়নে আরো আকর্ষণীয় অর্থায়ন প্রস্তাব নিয়ে আসতে চায়? জবাবে সিনেটর জিনি শাহিন বলেন, আমি ভেবেছিলাম, প্রশ্নটি ভারতের মন্ত্রীকে উদ্দেশ করে করা হয়েছে। এ সময় মঞ্চে বসা ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর হেসে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটরকে বলেন, আমার মনে হয়, তিনি (পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন) ভেবেছেন, আপনাদের (যুক্তরাষ্ট্রের) কাছে বেশি টাকা আছে।
এরপর যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন অর্থায়ন করপোরেশন আরো দক্ষতার সঙ্গে প্রকল্প নিয়ে আসবে বলে তিনি আশা করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটরের বক্তব্যের পর ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামনিয়াম জয়শঙ্কর বলেন, আমি যদি আপনার (পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন) প্রশ্ন ঠিকভাবে বুঝে থাকি, তাহলে আপনি জানতে চাচ্ছেন, উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য প্রতিযোগিতামূলক প্রস্তাব থাকলে দেশগুলো কেন তা গ্রহণ করবে না? জয়শঙ্কর বলেন, দেশগুলোকে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে নিজেদের স্বার্থের ব্যাপারে বিচক্ষণ হতে হবে। তাদের বুঝতে হবে, তারা আসলে কী পেতে যাচ্ছে। আমাদের অঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থানে আমরা ঋণে জর্জরিত দেশ দেখতে পাচ্ছি। আমরা এমন প্রকল্প দেখেছি, যেখানে টেকসই নয় এমন বাণিজ্যিক বিমানবন্দর নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে ফ্লাইট আসে না। আমরা এমন পোতাশ্রয় নির্মাণ হতে দেখছি, যেখানে জাহাজ ভেড়ে না।
জয়শঙ্কর বলেন, তাই আমি মনে করি, কী পাচ্ছি, তা নিজেকে জিজ্ঞেস করাটা ন্যায়সংগত হবে। তিনি বলেন, অবশ্যই নিজেদের স্বার্থে দেশগুলোকে বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত। এতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও স্বার্থ আছে। কারণ টেকসই নয় এমন প্রকল্পের খারাপ দিক অনেক। ঋণের পর ‘ইকুইটি’র প্রশ্ন আছে, যা সত্যিকারের উদ্বেগের কারণ। তিনি বলেন, আমি মনে করি, অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক সিদ্ধান্ত জেনেবুঝে নেয়া আমাদের সবার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।