পিডিবির ৭৬৪ গাড়ির ৩২৯টিই অচল, ব্যাহত পরিদর্শনকাজ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০৫ পিএম, ১০ ফেব্রুয়ারী,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০২:০৮ এএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
বিদ্যুৎ বিভাগের জন্য যানবাহন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত কার্যক্রম দেখভাল ও অভিযান পরিচালনায় যানবাহন অপরিহার্য। কর্মকর্তাদের নিয়মিত পরিদর্শন কাজেও প্রয়োজন হয় গাড়ি। বিদ্যুৎ জরুরি বিষয় হওয়ায় কোথাও কোনো সমস্যা হলে সমাধান করতে হয় তাৎক্ষণিক। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় এ প্রয়োজনীয়তা আরও বাড়ে। বর্তমানে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে (পিডিবি) যেসব যানবাহন আছে তার প্রায় অর্ধেকই অচল। রয়েছে জনবল সংকট। বার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তাই হিমশিম খাচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগ। নতুন গাড়ি ক্রয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা দেওয়া হলেও মিলছে না অনুমোদন। ফলে পিছিয়ে পড়ছে বিদ্যুৎ বিভাগের কার্যক্রম।
পিডিবি সূত্রে জানা যায়, বিদ্যুৎ বিভাগের কার্যক্রম চালিয়ে নিতে বিভিন্ন দপ্তরে ৫৭৫টি পিকআপ, প্রাইভেটকার, জিপ, মাইক্রোবাস রয়েছে। এর মধ্যে সচল ৩৭৭টি। অর্থাৎ অচল হয়ে পড়ে আছে ১৯৮টি যানবাহন। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যবহারের জন্য মোটরসাইকেল রয়েছে ১৮৯টি। এর মধ্যে ১৩১টি অচল। অর্থাৎ সচল মাত্র ৫৮টি। প্রতিষ্ঠানটির মোট ৭৬৪টি যানবাহনের মধ্যে ৩২৯টিই অচল। পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, পড়ে থাকা গাড়িগুলোর অধিকাংশই ব্যবহার অনুপযোগী। অচল এসব যানবাহন নিলামে বিক্রির প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। তবে এ প্রস্তাবে সরকারের সাড়া মেলেনি। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সূত্র আরও জানায়, প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন দফতরে সেকশন রয়েছে ১৮ হাজার ৩৯৪টি, এর মধ্যে কস্ট সেন্টার ২৮১টি। এসব সেকশনে লোকবলের সংখ্যা ১২ হাজার ৩শ জন। অধিকাংশ দপ্তরে জনবল ঘাটতি রয়েছে। তবে জনবল ঘাটতি পূরণে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান। পিডিবির একজন উপ-পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগে লোকবল ও যানবাহন- দুটিরই ঘাটতি রয়েছে। তবে আশার কথা হলো- দফায় দফায় নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে। সেক্ষেত্রে দ্রুতই জনবল ঘাটতি পূরণ হয়ে যেতে পারে।
তিনি আরও বলেন, তবে যানবাহনের ক্ষেত্রে সহসাই ঘাটতি পূরণের সম্ভাবনা দেখছি না। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পিডিবি থেকে সংকটের বিষয়টি জানিয়ে প্রস্তাব দিয়েছি। চলতি অর্থবছর বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের জন্য গাড়ি কিনতে ২৮ কোটি টাকার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। তবে সরকার এখনো এ ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়নি।
পিডিবির উপ-পরিচালক জানান, মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে ২০২০-২১ অর্থবছরে সব ধরনের ক্রয়ের ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা ছিল। তবে তার আগের অর্থবছর (২০১৯-২০) ২৬টি নতুন গাড়ি কেনা হয়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কেনা হয়েছিল ৩৫টি।
অচল হয়ে পড়ে থাকা গাড়িগুলোর বিষয়ে তিনি বলেন, কোনো কোনো গাড়ির মেয়াদকাল শেষ হয়েছে। আবার অনেক গাড়ি দীর্ঘদিন চলার কারণে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা মেরামতে অতিরিক্ত খরচ হতে পারে। এজন্য এসব গাড়ি নিলামে বিক্রি করে দেয়া হবে। পিডিবিতে চেয়ারম্যান হিসেবে কিছুদিন আগেই দায়িত্ব পেয়েছেন মো. মাহবুবুর রহমান। নতুন দায়িত্ব পাওয়ায় তিনি অনেক বিষয়ে এখনো গুছিয়ে নিতে পারেননি বলে জানান। তবে পর্যায়ক্রমে সব সংকট নিরসনে কাজ করবেন বলে আশা তার। গাড়ি সংকটের বিষয়ে পিডিবি চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান বলেন, পিডিবিতে কিছুদিন আগে আমি দায়িত্ব নিয়েছি। যতটুকু জেনেছি, এখানে গাড়ি সংকট রয়েছে। পিডিবিতে পরিদর্শনকাজ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এ কাজের জন্য পর্যাপ্ত যানবাহন প্রয়োজন। ফলে পিডিবিতে আরও কিছু গাড়ি প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগের হয়তো দ্রুত গাড়িগুলো প্রয়োজন। তবে সরকারের পক্ষ থেকেও ক্রয়ের ব্যাপারে বেশকিছু স্পষ্ট নির্দেশনা আছে। বিষয়গুলো সামঞ্জস্য করেই যানবাহন সংকট নিরসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।