সরকার চাই প্রত্যেকটি অপরাধের বিচার আইনের মাধ্যমে হোক : পররাষ্ট্রমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:০৩ পিএম, ৫ ফেব্রুয়ারী,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ০৩:৫৯ এএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ. কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, দেশে আইনের শাসন তথা প্রত্যেকটি অপরাধের বিচার আইনের মাধ্যমে হোক, এটাই চায় সরকার। দেশে এনফোর্সড ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স বলে কোনো শব্দ নেই দাবি করে মন্ত্রী বলেন, আমরা চাই না কাউকে জোরপূর্বক উঠিয়ে নেয়া হোক। আমরা চাই প্রত্যেকে আইনের সীমার মধ্যে থাকুক।
আজ শনিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর সোনারগাঁ হোটেলে সেন্টার ফর এনআরবি আয়োজিত ব্রান্ডিং বাংলাদেশ ওয়াল্ড কনফারেন্স সিরিজ-২০২২ এর উদ্বোধনী ও রেমিটেন্স পদক প্রদান অনুষ্ঠান শেষে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফি উদ্দিন আহমেদ।
পরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, একটা-দুইটা দুর্ঘটনা ঘটে যেগুলোর খবর আমরা ঠিক মতো পাই না। যেমন আমরা অনেক দিন ধরে জানি হারিছ আলী (হারিছ চৌধুরী) সাহেব গুম হয়ে গিয়েছিলেন। এনফোর্সড ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স। এখন দেখি না, উনি দেশেই ছিলেন এবং দেশেই না-কি মারা গেছেন। উনার মেয়ে বলেছেন। আমরা এক সময় দেখলাম, একজন নেতা তিনি দেশে নেই, তারপর ইন্ডিয়ার হোটেল ইন্ডিয়ানরা তাকে ধরলো। ওই সব গুম-খুন বলা হয়, কতটুকু সত্য তা আমরা ঠিক জানি না। একটা লোক গুম হোক, একটা লোক খুন হোক, আমরা তা চাই না।
তিনি বলেন, আমেরিকায় প্রতি বছর হাজার খানেক লোকের বিনা বিচারে মৃত্যু হয়। পুলিশ মেরে ফেলে। প্রতি বছর তার দেশে লক্ষ খানেক লোক নিখোঁজ হয়, ওইটা নিয়ে আমাদের মাথা ব্যথা নেই। আমরা চাই আমাদের দেশে একটি লোকও বিনা বিচারে না মরুক। মন্ত্রী বলেন, মাঝে মাঝে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপ এসব করে। পৃথিবীর সব দেশেই তা কম-বেশি হয়। আমাদের এখানে অন্য দেশের তুলনায় সবচেয়ে কম হয়।
মন্ত্রী অভিযোগ করে বলেন, যেহেতু বাংলাদেশ পলিটিক্যালি এবং স্ট্রাটিজিক্যালি খুব ভালো অবস্থানে আছে। বাংলাদেশর আশে পাশের বড় বড় দেশ রয়েছে এবং বাংলাদেশের বিশাল সমুদ্র রয়েছে তাই, অনেকে এতে প্রবেশাধিকারের ( অ্যাকসেস) জন্য অনেক বেশি উদ্বিগ্ন, সেই জন্য এখন আমরা সবার চক্ষুসূল। আসল উদ্দেশ্য কিন্তু হিউম্যান রাইটস না। আসল উদ্দেশ্য গুম-খুন না। আসল উদ্দেশ্য এসব চাপ দিয়ে কিছু ফায়দা সংগ্রহ করা যায় কি না?
এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, অবশ্যই এগুলো অপপ্রচার। বিদেশিরা বলেন, বাংলাদেশ নাকি চীনের লেজুর হয়ে যাচ্ছে। কারণটা তারা বলেন, বাংলাদেশ চীনের ডেথ ট্র্যাপে পড়ে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কার মতো। ডেথ ট্র্যাপ হতে হলে ৪০ শতাংশ ঋণ নিতে হবে। আমাদের দেশের সর্বমোট ঋণ হলো ১৫ শতাংশের কিছু বেশি। ১৬ শতাংশের মতো। এখনো অনেক দূর। আর যদি দেশগুলো দেখেন, প্রতিষ্ঠান দেখেন, আমরা সবচেয়ে বেশি ঋণ নিয়েছি ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলোপমেন্ট ব্যাংক এবং আইএমএফ থেকে। প্রায় ৭৩ শতাংশের বেশি। পরবর্তী সবচেয়ে বেশি যে দেশ থেকে আমরা ঋণ নিয়েছি সেটা হলো জাপান। চীন তো ধারের কাছেই নেই, ৫ শতাংশের কিছু বেশি।
তিনি বলেন, আমাদের কিছু জ্ঞানপাপী বলে বেড়ান, বাংলাদেশ সতর্ক হও। বলা হয়, আমরা চীনের লেজুড় হয়ে যাচ্ছি কারণ আমাদের নাকি ৮০ শতাংশ মিলিটারি ইকুইপমেন্ট চীন থেকে কেনা। এটা একটা ডাহা মিথ্যা কথা। আমরা যা কিনি সব দেশ থেকেই কিনি। সব জায়গা থেকে কিছু কিছু করে কিনি, ভারতও আমাদের দিতে চাচ্ছে। আমাদের আর্মিরা জানে কী কিনবে।
মন্ত্রী বলেন, আরেকটি কথা উঠেছে, চীন আমাদের তিস্তা ব্যারেজের জন্য টাকা দিচ্ছে। তিস্তা ব্যারেজ একটা প্রকল্প, ১৯৮৮ সালে যখন বড় রকমের বন্যা হয় তখন ফ্রান্স সরকারের প্রতিনিধিরা এসেছিলেন, বাংলাদেশে বন্যা কীভাবে প্রতিরোধ করা যায় তার জন্য তারা পরিকল্পনা করেছিলেন। ৫-৬ বিলিয়ন ডলার। অত টাকা কেউ দেয়নি। তার একটি অংশ ছিল তিস্তা ব্যারেজ। এখন চীন নাকি উৎসাহ দেখিয়েছে, আমাদের বলেনি, তারা নাকি পয়সা দিতে চায়। আর যায় কোথায়? গেলো গেলো, বাংলাদেশ চীন হয়ে গেলো। এ ধরনের একটি ভয় তৈরি করা হচ্ছে।
এই ভয় তৈরিতে জ্ঞানপাপী রা কাজ করেছে মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, ফলে এসব শুনে অনেকেই বলছে, সত্যি সত্যিই কিছু দুর্ঘটনা ঘটছে, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী দুদিন আগে বলেছেন, আমেরিকা থেকে নতুন করে কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা আসবে না, এ নিশ্চয়তা পাওয়া গেল? জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটা আমি জানি না। যিনি বলেছেন, তিনি ভালো জানেন। আই ডোন্ট নো।
সেন্টার ফর এনআরবির চেয়ার এম এস সেকিল চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিষয় উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, বৃটেনের ক্রয়ডন কাউন্সিলের মেয়র শেরওয়ান চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. শহীদুল আলম এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের জিম কাজী রফিকুল হাসান।
অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদের বাণী পাঠ করেন শোনান আয়েশা সিদ্দিকা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাণী পাঠ করেন মাসুমা চৌধুরী। অনুষ্ঠানের পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন হাফেজ ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুরুল ইসলাম।