মধ্যপ্রাচ্যকে আমরাই তৈরি করেছি - পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৩২ পিএম, ১২ জানুয়ারী,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০৬:৩৬ এএম, ১২ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখন এক কোটিরও বেশি বাংলাদেশি কর্মরত আছেন। তাদের অবদান অস্বীকার করার কোনও অবকাশ নেই। তারা দেশের অর্থনীতিতেও অবদান রাখছেন। উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদভুক্ত (জিসিসি) আরব দেশগুলো ভ্রমণের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, আমরা মধ্যপ্রাচ্যকে তৈরি করেছি। আমি মনে করি, আমার দাবি ভুল নয়।
আজ বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট (রামরু) আয়োজিত একটি কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের জন্য নিরাপদ ও বৈধ অভিবাসনের প্রয়োজন আছে। অভিবাসনের ক্ষেত্রে খরচ একটি বড় বাধা। সমীক্ষা থেকে জানা যায়, বৈশ্বিক জিডিপি দ্বিগুণ হতে পারতো যদি সবাই অভিবাসনের সুযোগ পেতো। বৈশ্বিক টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আরও অভিবাসনের প্রয়োজন আছে। শাহরিয়ার আলমের মন্তব্য, ‘করোনা পরিস্থিতি অভিবাসীদের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। লকডাউন, বিধিনিষেধ আয়-রোজগারের ওপরও প্রভাব ফেলেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বেকারত্ব এবং বকেয়া বেতন। গত মার্চে মধ্যপ্রাচ্যে গিয়েছিলাম। তখন আসলেই খুব সংকটময় সময় ছিল। যদিও এখন তা অনেকটা কাটিয়ে উঠেছে তারা। বাংলাদেশ সবসময়ই অভিবাসন খাতে চ্যালেঞ্জ উত্তরণে বিশ্ব ফোরামে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে। অভিবাসনকে আমরা জাতীয় নীতিমালার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছি। আমরা এখন মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীদের নিয়ে কাজ করছি। আমরা চাই– তাদের নিরাপদ, টেকসই এবং নিয়মিত প্রত্যাবাসন হোক।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা বিভিন্ন দেশের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছি, যাতে আমাদের অভিবাসী কর্মীরা নিরাপদ পরিবেশে কাজ করতে পারে। করোনা মহামারির মধ্যে আমাদের দূতাবাস এবং হাইকমিশনগুলো মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে কাজ করেছে, যাতে বাংলাদেশিদের জোরপূর্বক দেশে ফেরত পাঠানো না হয়। সর্বোপরি বলতে চাই, এখনও আমাদের কর্মীরা অনেক কম বেতন পান। আমাদের কর্মীদের দক্ষতা বাড়াতে আমাদের কাজ করা প্রয়োজন। সমীক্ষার তথ্য উল্লেখ করেছেন শাহরিয়ার আলম, ‘আমি আনন্দিত যে, আমাদের অভিবাসী কর্মীরা মহামারির মধ্যে আমাদের সঙ্গে অটল ছিল। অবশেষে অভিবাসনের খরচ কিছুটা নেমে আসতে শুরু করেছে। বেশ কয়েক বছর আগে আমরা এমন দেখেছি যে, নারী কর্মীদের সঙ্গে অসদাচরণ করা হতো। আমি মনে করি, সেসব থেকে উত্তরণ করে আমরা নারী কর্মীদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে পেরেছি। আমাদের সতর্কতার সঙ্গে নারীদের অভিবাসনের বিষয়ে উৎসাহ দিতে হবে। এ কাজে অংশীজনদের পাশপাশি মিডিয়াকেও ভূমিকা রাখতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, অর্থনীতিতে ভালো ভূমিকা রাখে নারী অভিবাসন। করোনাকালে ফেরত আসা কর্মীদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন উল্লেখ করে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, শুধু প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে সেই ঋণ বিতরণ করা হচ্ছে। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের শাখা উপজেলা পর্যায়ে নেই, তাই ঋণ পেতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, যাতে আমরা অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে এই টাকা ফেরত আসা কর্মীদের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কারণ তাদের একটা বড় অংশ এই ঋণের জন্য আবেদন করার সুযোগ পাচ্ছে না। তবে আশার খবর হলো বাজার খুলছে। আমাদের জিটুজি ভিত্তিতে কর্মী পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। আমার বিশ্বাস, আগামী দিনগুলোতে অভিবাসন খরচ কমে আসবে। আমাদের কর্মীদের দক্ষতা বাড়াতে আরও বিনিয়োগ করতে হবে। কর্মশালায় আরও ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান, রামরু’র প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার ড. তাসনীম সিদ্দিকী, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ড. মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক।