যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগের পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০৪ পিএম, ৫ জানুয়ারী,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০৭:৫৭ এএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
বাংলাদেশের এলিট ফোর্সের সাবেক-বর্তমান কর্মকর্তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে দেশটিতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ‘লবিস্ট’ নিয়োগ করা প্রয়োজন বলে মনে করছে সংসদীয় কমিটি।
আজ বুধবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে মতামত আসে।
সংসদীয় কমিটি মনে করছে, যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতাদের কাছে বাংলাদেশের বিষয়ে নেতিবাচক তথ্য উপস্থাপন করা হচ্ছে। কোনো না কোনো লবিস্ট গ্রুপ আর পিআর প্রতিষ্ঠান এ কাজটি করছে। এ কারণে বাংলাদেশেরই উচিত এর কাউন্টার হিসেবে সেদেশের লবিস্ট নিয়োগ করা। সংসদীয় কমিটি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ দিয়েছে।
বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খান গণমাধ্যমকে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর বা কংগ্রেসম্যানদের সঙ্গে অনেকে লবিং করে। এসব কাজের জন্য লবিস্ট আছে। পিআর প্রতিষ্ঠান আছে। সেকারণে অনেক নেতিবাচক তথ্য তাদের কাছে উপস্থাপন করা হয়। আমাদের এখানে কাজ করতে হবে। কমিটি বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রে যদি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে লবিস্ট নিয়োগ করা হয়, তাহলে আমাদের সঠিক তথ্য আমরা সেখানে পৌঁছাতে পারবো।
কমিটির সভাপতি জানান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর করবেন। যুক্তরাষ্ট্রের ওই নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে তখন আলোচনা হবে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে ১০ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ দফতর ‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের’ অভিযোগে বিভিন্ন দেশের ১৫ ব্যক্তি ও ১০ প্রতিষ্ঠানের সম্পদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দেয়।
এই তালিকায় বাংলাদেশের র্যাবের সাবেক ও বর্তমান ৭ জন কর্মকর্তার নাম যুক্তরাষ্ট্রের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার তালিকায় যুক্ত করার কথা বলেছে সে দেশের পররাষ্ট্র দফতর। নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রতিক্রিয়ায় ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলারকে তলব করে সরকারের অবস্থান জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই বার্তা তাকে ওয়াশিংটনে পৌঁছে দিতে বলা হয়। নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে ঢাকার অসন্তোষের মধ্যে ১৫ ডিসেম্বর পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের সঙ্গে ফোনালাপ হয় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেনের। পরে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠিও পাঠান মোমেন।
সংসদীয় কমিটির বৈঠকে অংশ নেওয়া একজন জানান, বৈঠকে মন্ত্রণালয়ে পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা মনে করছে, ভূ-রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশ বর্তমানে খুব গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞার পেছনে ভূ-রাজনীতিও জড়িত। বৈঠকে এক সদস্য যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে সংসদীয় কমিটিতে তলবের প্রস্তাব তোলেন। ওই সদস্য বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানালো তখন বিষয়টি সামনে আসলো। আগে থেকে কোনো তথ্য কেন পাওয়া যায়নি। তবে সংসদীয় কমিটি এ প্রস্তাব আমলে নেয়নি।
এ বিষয়ে ফারুক খান বলেন, “আমরা বলেছি দূতাবাসকে আরও তৎপর হতে হবে। মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে বিষয়টি আরও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।” এদিকে বৈঠকে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতাদের মধ্যে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আলোচনার বিষয়ে মতামত আসে। সভাপতি জানান, মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সংসদীয় কমিটিকে এ বিষয়ে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
তিনি বলেন, “সেরকম হলে সংসদীয় কমিটি যুক্তরাষ্ট্র সফর করবে। তাদের সংসদের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলবে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক ফ্রান্স ও মালদ্বীপ সফর নিয়ে আলোচনা করা হয়। বৈঠকে জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রীর এ সরকারি সফর বাংলাদেশ-ফ্রান্স এবং বাংলাদেশ-মালদ্বীপ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন মাইলফলক স্পর্শ করেছে। কমিটি এ সম্পর্ক আরও বেগবান ও শক্তিশালী করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম জোরদার করার সুপারিশ করে। ফারুক খানের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, নুরুল ইসলাম নাহিদ, গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স এবং মো. আব্দুল মজিদ খান অংশ নেন।